Wednesday, July 9, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গদুর্গাপুরদুর্গাপুরে কালী মন্দিরে চুরি,উধাও সোনা ও নগদ টাকা

দুর্গাপুরে কালী মন্দিরে চুরি,উধাও সোনা ও নগদ টাকা

Gold and cash stolen from Durgapur Kali temple : শিল্পনগরী দুর্গাপুরের ধুনড়া প্লট এলাকার মানুষ আজ এক গভীর আতঙ্ক ও ক্ষোভের মধ্য দিয়ে দিন শুরু করেছে, কারণ মঙ্গলবার গভীর রাতে এলাকার বহুপ্রাচীন ও জনপ্রিয় আদি শক্তির কালীমন্দিরে ঘটে গেছে এক চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা, যা শুধু একটি ধর্মীয় স্থানেই নয়, গোটা এলাকার ধর্মবিশ্বাস, আবেগ ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গভীর রাতে, যখন গোটা এলাকা নিস্তব্ধ ঘুমে আচ্ছন্ন, তখনই দুর্বৃত্তরা সুচারু পরিকল্পনায় মন্দিরের তালা ভেঙে ঢুকে পড়ে এবং মায়ের গায়ে থাকা সোনার হার, কানের দুল, রুপোর নুপূর ও অন্যান্য অলংকার ছিঁড়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, প্রণামী বাক্সটিও তুলে নিয়ে যায়, যেটির মধ্যে প্রতিদিন ভক্তদের দেওয়া নগদ দান জমা হতো, যা এলাকার মানুষের অনুমান অনুযায়ী লক্ষাধিক টাকা ছিল। বুধবার সকালে মন্দিরের পুরোহিত যখন প্রতিদিনের মতো পুজো দিতে এসে মন্দিরের দরজার তালা ভাঙা দেখতে পান, তখন তিনি স্তব্ধ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মন্দির কমিটির সদস্যদের খবর দেন। মন্দির কমিটির একজন সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, “মঙ্গলবার রাতেও সব ঠিকঠাক ছিল। পুজো শেষ করে মন্দির তালা বন্ধ করে আমরা বাড়ি যাই। কিন্তু আজ সকালে যখন ঘটনাটা দেখি, আমাদের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। মায়ের গায়ে থাকা সোনা-রুপোর সব অলংকার, এমনকি প্রণামী বাক্সটাও নেই। কিছুক্ষণ পর এক স্থানীয় যুবক মন্দিরের কিছুটা দূরের ঝোপের মধ্যে সেই বাক্সটি পড়ে থাকতে দেখেন, কিন্তু তাতে একটা কড়িও ছিল না।”

স্থানীয়দের অনুমান, এই চুরিতে লক্ষাধিক টাকার সম্পত্তি লোপাট হয়েছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র সোনার গয়নাই ছিল ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার এবং বাক্সে প্রতিদিনের দানের টাকাও মোটা অঙ্কে জমত। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। তারা মন্দির এলাকা ঘিরে ফেলে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে এবং আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকটি সন্দেহজনক গতিবিধি ধরা পড়েছে এবং তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তারা বলছেন, “এটা শুধু চুরি নয়, মায়ের অপমান। এমন পবিত্র স্থানে চুরি করে শুধু টাকা-গয়না নয়, আমাদের বিশ্বাসে আঘাত করেছে ওরা।

আমরা চাই পুলিশ সাত দিনের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করুক, না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।” দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের অনেক পুরোনো মন্দির এটি। প্রতি বছর কালীপুজোয় এখানে কয়েক হাজার ভক্ত ভিড় করেন। প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার নিয়ম করে মায়ের আরাধনা হয়। বহু মানুষের জীবনের বিশ্বাস জড়িয়ে আছে এই মন্দির ঘিরে। চুরির ঘটনার পর এলাকার মহিলারা ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা মন্দির প্রাঙ্গণে বসে কেঁদে ফেলেন। এক প্রবীণ ভক্ত বললেন, “ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, মা এখানে বসে আমাদের রক্ষা করছেন। সেই মায়ের গয়না যদি চুরি হয়, তাহলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।” এই ঘটনার পরে পুলিশের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি মন্দির কমিটির তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামী দিনে মন্দিরে আরও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে—রাতের পাহারাদার, অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা, মোশন সেন্সর আলো ইত্যাদি। স্থানীয় বিধায়ক ও কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেছেন ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই ঘটনায় আমিও ব্যথিত।

প্রশাসনকে বলেছি কড়া ব্যবস্থা নিতে, এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।” এলাকার যুব সমাজও এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অংশ নিতে চায়। তারা বলছে, “আমরা রোজ রাতে এলাকার পাহারা দিতে রাজি আছি, কিন্তু পুলিশকে দোষীদের ধরতেই হবে।” এই ঘটনার সামাজিক প্রভাবও গভীর। মানুষ ধর্মীয় আস্থা নিয়ে চিন্তিত, মন্দিরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, অনেকেই বলছেন, “আজ মা, কাল আমাদের বাড়িও টার্গেট হতে পারে।” এই আতঙ্ক, এই অবিশ্বাস সমাজে এক নেতিবাচক আবহ তৈরি করছে, যার দ্রুত সমাধান না হলে দুর্গাপুরের মতো শহরে জনমনে ক্ষোভ আরও বাড়বে। ভবিষ্যতে এই ধরনের চুরি আটকাতে পুলিশ ও প্রশাসনের যৌথভাবে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। ইতিমধ্যেই দুর্গাপুর থানার উচ্চপদস্থ কর্তারা তদন্তে নেমেছেন এবং স্থানীয় সূত্রেও তথ্য সংগ্রহ করছেন। অপরাধীদের ধরার জন্য আশেপাশের এলাকার সীমান্তে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদেরও ঘটনাস্থলে ডাকা হয়েছে।

মায়ের অলংকার ও প্রণামী বাক্সের অর্থ ফিরে আসবে কিনা, তা ভবিষ্যতের বিষয়। কিন্তু এই চুরির ঘটনা আবার প্রমাণ করে দিল, ধর্মীয় স্থান, মন্দির, বিশ্বাসের জায়গাও এখন অপরাধীদের হাত থেকে নিরাপদ নয়। দুর্গাপুর শহর, যা শিল্প ও শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ধর্মাচরণের জন্য পরিচিত, আজ সেখানে অন্ধকার নেমে এসেছে এই ভয়াবহ ঘটনায়। তবে এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে আলোচনার দরজা খুলে গেল—নগরের মন্দিরগুলোর নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত? প্রশাসন কি যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে? স্থানীয় মানুষের প্রত্যাশা—দ্রুততম সময়ের মধ্যে চোর ধরা পড়বে, মায়ের অলংকার ফিরবে, এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার নিশ্চয়তা দেবে পুলিশ-প্রশাসন ও মন্দির কর্তৃপক্ষ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments