ফুটবল মাঠে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চের মাঝে মাঝেই দেখা যায় অপ্রত্যাশিত বিপজ্জনক মুহূর্ত। বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, লীগ ওয়ানের ম্যাচে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (পিএসজি) এবং মোনাকোর মুখোমুখি লড়াইতে ফুটবল বিশ্বকে হতবাক করে এক চরম দুর্ঘটনা। ফ্রান্সের গোলরক্ষক দোনারুমা মোনাকোর ডিফেন্ডার উইল ফ্রিড সিঙ্গোর বুটের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যান। তার ডান গালে গুরুতর চোট লাগে এবং অল্পের জন্য রক্ষা পায় তার চোখ। এই ঘটনার পর ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে রেফারির ভূমিকা নিয়ে।
ম্যাচের উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত
পিএসজি এবং মোনাকোর এই ম্যাচ ছিল লীগ ওয়ানের অন্যতম প্রতীক্ষিত খেলা। ম্যাচে পিএসজি ৪-২ গোলে জয় লাভ করে। কিন্তু এই জয়ের মধ্যেও থেকে যায় দোনারুমার চোটের ঘটনা এবং রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। মোনাকোর ডিফেন্ডার উইল ফ্রিড সিঙ্গোর বুট সরাসরি দোনারুমার মুখে লাগে, যার ফলে তার ডান গালের অনেকটা অংশ কেটে যায়। রক্তক্ষরণের কারণে মাঠেই তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং তার গালে দশটি স্ট্যাপেল দিয়ে চামড়া সেলাই করা হয়।
দুর্ঘটনার ফলে কয়েক মিনিট খেলা বন্ধ থাকে, এবং দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এক চরম উত্তেজনা। পিএসজির সমর্থকরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোনারুমার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত
এই ঘটনার পর ফুটবলবিশ্বে শুরু হয়েছে রেফারির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক। ফুটবল নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো খেলোয়াড় বুট উঁচু করে অন্য খেলোয়াড়ের দিকে আঘাত করে, তাহলে তাকে লাল কার্ড দেখানো উচিত। তবে এই ম্যাচে রেফারি সিঙ্গোরকে লাল কার্ড তো দূরের কথা, হলুদ কার্ডও দেখাননি। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল এবং ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বিশিষ্ট ফুটবল বিশ্লেষক মার্সেল ডেসাইলি এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এটা রেফারির একটি চরম ব্যর্থতা। এমন একটি বিপজ্জনক সংঘর্ষের পর কোনো ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি শুধু দোনারুমার মতো খেলোয়াড়দের সুরক্ষা নয়, ফুটবলের নিয়মেরও অবমাননা।”

খেলোয়াড়দের সুরক্ষার প্রশ্ন
এই ঘটনা ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়দের সুরক্ষা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। ফুটবল একটি শারীরিক খেলা, যেখানে খেলোয়াড়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু নিয়ম মেনে খেলোয়াড়দের সুরক্ষা নিশ্চিত করা রেফারি এবং ফুটবল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এই ঘটনায় সিঙ্গোর কোনো শাস্তি না পাওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, খেলোয়াড়দের জীবনের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য নিয়মের আরও কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।
দোনারুমার সতীর্থ এবং পিএসজি দলের সদস্যরা এই ঘটনার পর তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের কোচ বলেন, “দোনারুমা একজন দুর্দান্ত গোলরক্ষক। তার ওপর এমন আঘাত মেনে নেওয়া যায় না। রেফারি যদি এই ধরনের ঘটনায় পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।”

স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্যারিসে স্থানীয় ফুটবল ক্লাব এবং সমর্থকরা এই ধরনের আঘাতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ফ্রান্স ফুটবল কর্তৃপক্ষের কাছে রেফারির ভূমিকা পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছেন।
এক স্থানীয় ফুটবলপ্রেমী বলেন, “আমরা ফুটবলকে ভালোবাসি। কিন্তু এমন ঘটনা দেখতে চাই না, যেখানে একজন খেলোয়াড়ের জীবন বা ক্যারিয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। রেফারিকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।”
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এই ঘটনার পর ফুটবল কর্তৃপক্ষের উচিত খেলোয়াড়দের সুরক্ষার জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। রেফারিদের প্রশিক্ষণ আরও উন্নত করার পাশাপাশি ফুটবল মাঠে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া, খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করাও জরুরি।