Global concerns over Trump’s tariff policy: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি যেন পুরো বিশ্ব বাণিজ্যকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। একদিকে শুল্ক আরোপের ঘোষণায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন, অন্যদিকে যখন তখন সেই শুল্ক স্থগিত বা সংশোধন করেও দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছেন। এই ওঠা-পড়া শুল্ক নীতির কারণে শুধুমাত্র ব্যবসায়ী বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে চীন, কানাডা, মেক্সিকো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলির মধ্যে। এই সকল দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে, আর এই শুল্কের কারণে তাদের জন্য কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি তাদের অর্থনীতির উপর পড়ছে।
এ বছরের শুরুতে, ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা অনেক দেশেই চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। যদিও পরে তিনি শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন, কিন্তু চীনের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর জন্য বিশেষ করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, সেমিকন্ডাক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের ওপর ট্রাম্পের নতুন শুল্কের ঘোষণা, বিশ্ব বাজারে দাম বাড়াতে পারে, যা সাধারণ মানুষদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলবে। ব্রিজওয়াটার অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ডেভিড ম্যাকরমিকস বলেছেন, “যদি ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, তাহলে মন্দার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটতে পারে। এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর সংকেত হয়ে দাঁড়াবে।”

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির ওপর এই শুল্ক নীতির প্রভাব যে ব্যাপক হতে পারে, সে সম্পর্কে অনেক অর্থনীতিবিদই সতর্ক করেছেন। ট্রাম্প যে কোনো একটি দেশের উপর শুল্ক আরোপ করলে, সেই দেশও পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে বাধ্য হবে। এর ফলে এক ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়তে পারে এবং তার প্রভাব পড়বে দেশের ভোক্তাদের উপর। যেমন, চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলোর উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা অনেক আমেরিকান ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এই ধরনের পরিস্থিতি সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়াতে, মজুদ কমাতে এবং সম্পদ বন্টনকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বিশেষ করে এই বিষয়টিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, কারণ আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন দেশীয় শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। এক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বলেন, “শুল্ক আরোপের ফলে যেসব প্রযুক্তি পণ্যগুলোর দাম বাড়বে, তার প্রভাব শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষভাবে পড়বে। বিশেষ করে যে ছাত্ররা গবেষণা বা অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য বিদেশ থেকে প্রযুক্তি পণ্য আনে, তাদের খরচ বাড়বে। এতে শিক্ষা খাতে একটি বাধা তৈরি হতে পারে।”
অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই শুল্ক নীতির প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। ভারত, চীন, এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আমেরিকান পণ্যগুলোর দাম বাড়ানোর ফলে, পণ্যের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। ভারতের একজন ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা যে পণ্যগুলি আমদানি করি, সেগুলোর উপর শুল্ক বেড়ে যাওয়ার ফলে আমাদের খরচ বাড়বে এবং শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের ওপর চাপ পড়বে। এর ফলে আমাদের বিক্রি কমবে, এবং সেটা বিশ্ব বাজারে এক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে।”তবে, ট্রাম্প প্রশাসন কিছু ক্ষেত্রে নতুন শুল্ক ছাড় দেওয়ারও কথা জানিয়েছে। বিশেষত, কিছু প্রযুক্তি পণ্যের উপর শুল্ক ছাড় দেওয়ার ফলে কিছু ভোক্তা পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে পেতে পারেন। কিন্তু তারপরেও, যেসব সেমিকন্ডাক্টরের উপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা এসেছে, তা স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের দাম বাড়াতে সহায়ক হবে, যা সরাসরি ভোক্তাদের ওপর চাপ তৈরি করবে। ট্রাম্পের প্রশাসন যদিও বলেছে যে, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দেশীয় শিল্পে কিছুটা সাহায্য হবে, কিন্তু অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে এই নীতি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, এবং আগামীদিনে তার প্রভাব আরও ভয়াবহ হতে পারে।
ব্রিজওয়াটার অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ডেভিড ম্যাকরমিকস আরও বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য এমন একটি সূক্ষ্ম তন্তু, যে কোনও একটি নীতির ভুল পদক্ষেপ গোটা পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে, যদি ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত নীতি পরিবর্তন না করে, তবে বিশ্ব অর্থনীতির অগ্রগতি সম্ভবত ব্যাহত হবে।”এছাড়াও, আমেরিকান অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই শুল্ক নীতির কারণে কিছু অঞ্চলে মন্দা সৃষ্টি হতে পারে, যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জীবনযাত্রার মানে পড়বে। একই সঙ্গে, অনেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীও এই শুল্ক নীতির বিরোধিতা করেছেন, তাদের মতে, এটি দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে স্থবির করে দিতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতি আরও সংকটগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।
এবং যেহেতু ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ব্যাপকতা এবং তার পরিণতির উপর সারা বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ, তাই এটি আগামী দিনে নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে, যা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে বসবাসকারী সাধারণ মানুষদের জীবনযাত্রার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।\এই শুল্ক নীতির ফলস্বরূপ, আমরা যে বিশ্ব বাণিজ্যে অনিশ্চয়তার বুদ্বুদ দেখছি, তা আসলে একটি গুরুতর সংকেত। এটি শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমা—যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছে, এবং বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমেরিকাকে তার বাণিজ্য নীতিতে আরও স্থিতিশীলতা আনতে হবে।