Friday, April 11, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্য মল্লারপুর শ্রীরামকৃষ্ণ সত্যানন্দ আশ্রমে গণ ভাইফোঁটা

 মল্লারপুর শ্রীরামকৃষ্ণ সত্যানন্দ আশ্রমে গণ ভাইফোঁটা

Gana Bhiphonta at Mallarpur Sri Ramakrishna Satyananda Ashram: মল্লারপুর শ্রীরামকৃষ্ণ সত্যানন্দ আশ্রমে এবারের ভাইফোঁটার দিনটি যেন একটু আলাদা। রবিবারে আয়োজিত এই গণ ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানে আশ্রমের আবহাওয়া একেবারে উৎসবমুখর। আশ্রমের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫০ জন শিশু-কিশোর যুবক-যুবতীকে ভাইফোঁটা দেওয়া হয়, আর তাদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় একটি করে ব্যাগ। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, অনাথ ছাত্র-ছাত্রী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, অন্ধ ছাত্রছাত্রী ও আরও অনেকেই। এই অনাথ আশ্রম বা হোম থেকে আসা শিশুরা, যাদের জীবন তিলে তিলে ফুরিয়ে যাচ্ছে একাকিত্ব ও জীবনের কঠোর বাস্তবতার মধ্যে, এদিন আশ্রমে তাদের জন্য ছিল আনন্দের ছোঁয়া।

ভাইফোঁটা বা ভাইদুজ, বাংলার অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় উৎসব। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইদের দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্যের প্রার্থনায় তিলক দেয় এবং মিষ্টি খাওয়ায়। মল্লারপুরের এই গণ ভাইফোঁটা উদ্যোগে যেন এক ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন স্থাপন করেছে সমাজের নানা স্তরের মানুষের মধ্যে। আশ্রমের সভাপতি স্বামী সারদাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, “আমরা চাই এই শিশু-কিশোররা যেন নিজেদেরকে ভালোবাসা ও সুরক্ষার মধ্যে খুঁজে পায়। তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারা আমাদের জন্য আশীর্বাদ।”

এই উৎসবটির বিশেষত্ব হলো, একে ঘিরে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ। এই গণ ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানে সমাজসেবী দুধকুমার মন্ডল, ময়ূরেশ্বর ১নং ব্লকের বিডিওসহ পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আশ্রমের সম্পাদক সুকান্ত মন্ডল বলেন, “এই ধরনের অনুষ্ঠান সমাজের কাছে এক দৃষ্টান্ত। অনাথ ও দু:স্থ শিশুদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। তারা আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং আমাদের উচিত তাদের পাশে থাকা।”

এই ভাইফোঁটা অনুষ্ঠান কেবল উৎসবের জন্য নয়, বরং এটি সমাজের একটি মানবিক দিক তুলে ধরে, যেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও আনন্দের অংশীদার হতে পারে। আশ্রমের সন্ন্যাসী এবং অন্যান্য শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতি শিশুরা দেখে এক বিশেষ সান্ত্বনা পায়। এক বোনের মতো আশ্রমের সন্ন্যাসিনীরা যখন এই শিশুদের কপালে ফোঁটা দেয়, তখন তাদের মনে আনন্দ ও ভ্রাতৃত্বের এক নতুন অনুভূতি জাগে। স্বামী হংসানন্দ মহারাজ বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগ সমাজের মানবিক দিককে তুলে ধরে এবং মানুষে মানুষে বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দেয়।”

এই উৎসবের পরিসর শুধু আনন্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি একটি সামাজিক বার্তাও বহন করে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের কাছে একবারের জন্য হলেও ভালোবাসা এবং স্নেহের পরিবেশে নিজেদের খুঁজে পাওয়ার এক মূল্যবান সুযোগ সৃষ্টি করে এই গণ ভাইফোঁটা। এমন একটি উদ্যোগ আশ্রম কর্তৃপক্ষের মানবিকতা ও উদারতার প্রকাশ হিসেবে সমাজে দৃষ্টান্তমূলক হয়ে উঠেছে।

এই গণ ভাইফোঁটা আয়োজনের জন্য সুকান্ত মন্ডল এবং আশ্রমের সন্ন্যাসীদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সমাজের এই ধরনের উদ্যোগকে আরও বেশি মানুষ এবং প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করলে সুবিধাবঞ্চিতদের জীবনে আলোর ছোঁয়া এনে দিতে পারে। ভবিষ্যতে এই ধরনের আরো উদ্যোগ সমাজে মানবিকতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments