From Kolkata to Kedarnath, the aim of the cyclist is to plant one lakh trees:-প্রকৃতি বাঁচানোর সংকল্প নিয়ে কলকাতা থেকে কেদারনাথ পর্যন্ত এক অনন্য যাত্রায় বেরিয়েছেন যাদবপুরের বাসিন্দা দেবু পাল। তাঁর লক্ষ্য এক লক্ষ বৃক্ষরোপণ। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার এই মিশনেই গত ১৯ মার্চ দেবু পাল সাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন কলকাতা থেকে। তাঁর যাত্রাপথে এখন পর্যন্ত বহু গাছের বীজ রোপণ করা হয়েছে এবং মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বীজ, যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এই উদ্যোগের অংশ হয়ে গাছ লাগান।মঙ্গলবার দেবু পালের সাইকেল এসে পৌঁছায় আসানসোলের কুলটিতে। ইস্টবেঙ্গলের অন্ধ ভক্ত দেবু পালের সাইকেলেও দেখা গেল জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গলের পতাকা। এমনকি তাঁর সাইকেলের রঙও ইস্টবেঙ্গলের লাল-হলুদ রঙে সজ্জিত। শুধু গাছ লাগানোর মিশন নয়, প্রিয় ফুটবল ক্লাবের প্রতিও তাঁর এই ভালোবাসা এই যাত্রায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
দেবু পাল জানিয়েছেন, “করোনাকালে অক্সিজেনের যে সংকট দেখা দিয়েছিল, তা আমাকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বহু মানুষকে অক্সিজেনের জন্য কষ্ট পেতে দেখেছি। চড়া দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হয়েছিলেন অনেকে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিই, গাছ লাগিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে, কারণ প্রকৃতি থেকেই আমরা নিঃশ্বাসের অক্সিজেন পাই। তাই এই বৃক্ষরোপণ অভিযান।”এই দীর্ঘ যাত্রাপথে দেবু পাল শুধু বৃক্ষরোপণ করেই থেমে থাকেননি। তিনি যেখানেই পৌঁছেছেন, সেখানকার মানুষকে উৎসাহিত করেছেন গাছ লাগানোর জন্য। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলের মধ্যে তিনি বীজ বিতরণ করেছেন এবং পরিবেশের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর এই যাত্রা যেন মানুষের কাছে পরিবেশ রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।ইতিমধ্যেই পথের ধারে বেশ কিছু এলাকায় বীজ রোপণ করা হয়েছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলে তাঁর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকে দেবু পালের সঙ্গে হাঁটতে বা সাইকেল চালাতে যোগ দিয়েছেন সাময়িক সময়ের জন্য। তাঁদের কথায়, “দেবুদা যে কাজটি করছেন, তা শুধু প্রশংসনীয় নয়, বরং খুব প্রয়োজনীয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এখনই গাছ লাগানো দরকার।”
দেবু পাল প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার সাইকেল চালাচ্ছেন। যাত্রাপথে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় মানুষজন স্বাগত জানিয়েছেন। কেউ কেউ খাবার নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, আবার কেউ তাঁকে জল খাইয়ে দিয়ে শুভকামনা জানিয়েছেন। দেবুর কথায়, “এই ভালোবাসাই আমাকে আরও এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেয়। আমার লক্ষ্য শুধু কেদারনাথ পৌঁছানো নয়, লক্ষাধিক মানুষের মনে গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।”সাইকেলে একাধিক ব্যানারও লাগিয়েছেন দেবু পাল, যেখানে পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতার বার্তা লেখা রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রকৃতি বাঁচানোর এই যাত্রায় তিনি একেবারেই একা নন। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও তাঁকে পরোক্ষভাবে সাহায্য করছে। তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপণের জন্য সহায়তা দিচ্ছেন এবং স্থানীয় মানুষকে গাছের বীজ দেওয়ার কাজে অংশগ্রহণ করছেন।
দেবু পালের এই যাত্রার আরও একটি লক্ষ্য রয়েছে। তিনি চান, মানুষ যেন গাছকে শুধুমাত্র ছায়া বা ফলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ মনে না করেন। গাছ আমাদের বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ করে, তাই প্রতিটি নাগরিকের উচিত অন্তত একটি করে গাছ লাগানো। “গাছের যত্ন না নিলে ভবিষ্যতে হয়তো আরও বড় সংকটের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের,” বলেন দেবু।এই যাত্রায় দেবু পাল একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। কখনও প্রচণ্ড গরমে সাইকেল চালাতে হয়েছে, কখনও আবার পিচঢালা রাস্তায় দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে একা। কিন্তু তাঁর মনোবল এতটুকু কমেনি। কেদারনাথ পর্যন্ত পৌঁছানোর এই কঠিন যাত্রাপথে তিনি প্রতিটি পদক্ষেপে বৃক্ষরোপণ এবং পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে যেতে চান।এই উদ্যোগকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়াতেও দারুণ আলোড়ন উঠেছে। দেবু পালের যাত্রার ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। নেটিজেনরা তাঁর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কমেন্ট করছেন এবং তাঁকে উৎসাহিত করছেন।
দেবু পালের এই মিশন থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। শুধু নিজের জন্য নয়, প্রকৃতির জন্যও কিছু করতে পারলে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সবুজ এবং সুস্থ পৃথিবী রেখে যেতে পারব। দেবু পাল মনে করেন, “গাছ লাগানোর গুরুত্ব শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে তা কার্যকর করতে হবে।” তাঁর এই বার্তা যেন প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে যায়।দেবু পালের সাইকেল যাত্রা এবং বৃক্ষরোপণ মিশন একদিন হয়তো ইতিহাসে স্থান পাবে। তবে তার চেয়েও বড় কথা, এই যাত্রা আজকের দিনে মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার বীজ বপন করে দিচ্ছে। আসানসোলের মানুষ যেমন দেবু পালের উদ্যোগকে সাদরে গ্রহণ করেছেন, তেমনই তাঁর পথ ধরে আরও মানুষ এগিয়ে এলেই প্রকৃতি আবার প্রাণ ফিরে পাবে।