From facial cleansing to disease prevention – the magic of fennel in one grain: ভারতীয় রান্নাঘর মানেই নানান মশলার ভাণ্ডার। আর এই মশলার তালিকায় একটি বিশেষ নাম হল মৌরি। শুধু রান্নায় সুগন্ধ আনার জন্যই নয়, প্রাচীনকাল থেকেই মৌরিকে ব্যবহার করা হয় হজমশক্তি বাড়ানোর কাজে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ডিনারের পরে বা দুপুরের খাবারের শেষে এক চিমটি মৌরি মুখে দেওয়া আমাদের অভ্যাস। এই ছোট দানার ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা—যা আমাদের শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য একেবারেই অমূল্য।খাওয়ার পর প্রায়শই অনেকে অ্যাসিডিটি, গ্যাস বা হজমের সমস্যায় ভোগেন। অথচ একটি সাধারণ অভ্যাসই সেই সমস্যার সমাধান করতে পারে—খাওয়ার পরে এক চামচ মৌরি মুখে নেওয়া। এতে শুধু হজমে সাহায্য হয় না, পেটের অস্বস্তিও কমে যায়। মৌরির ভেতরে থাকা তেল হজমতন্ত্রকে সক্রিয় করে, ফলে খাবার সহজে ভেঙে যায় এবং শরীরে শক্তি হিসেবে মিশে যায়।
এছাড়াও মৌরির সুগন্ধ মুখকে সতেজ রাখে। খাওয়ার পরে যে দুর্গন্ধ অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়, মৌরি তা সহজেই দূর করে দেয়। তাই ভারতীয় সংস্কৃতিতে মৌরি মুখশুদ্ধির একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছে।আয়ুষ মন্ত্রক ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বরাবরই দেশীয় ভেষজ ও প্রাকৃতিক উপাদানকে প্রাধান্য দিতে উৎসাহিত করেছেন। মৌরি সেই তালিকায় অন্যতম। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচারে মৌরি ও মৌরি ভেজানো জলকে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারিভাবে প্রকাশিত বেশ কিছু তথ্য অনুযায়ী, মানুষের প্রতিদিনের জীবনে মৌরি অন্তর্ভুক্ত করলে তা হজমশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করে।

অভ্যাসগতভাবে বাংলার প্রতিটি পরিবারের রান্নাঘরে মৌরি থাকে। কেউ এটি ব্যবহার করেন রান্নার মশলা হিসেবে, কেউ আবার মুখশুদ্ধির কাজে। কলকাতার বাসিন্দা রিমা দত্ত জানালেন, “আমার ছোট থেকেই অভ্যাস খাওয়ার পর মৌরি খাওয়ার। এতে পেটের গ্যাস হয় না, আর মুখও সতেজ থাকে।” আবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বাসিন্দা শ্যামলাল নস্কর বলেন, “গরমকালে মৌরি ভেজানো জল খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার। এতে শরীর ঠান্ডা থাকে, আর পেটের সমস্যাও অনেকটা কমে যায়।”মৌরির ভেতরে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, আয়রন ও ফাইবার। এগুলি শুধু হজমশক্তি বাড়ায় না, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও জোরদার করে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মৌরির মধ্যে থাকা ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ উপাদান শরীরকে টক্সিনমুক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল মৌরি ভেজানো জল। রাতে সামান্য মৌরি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই জল খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং পেটের গ্যাস বা ফোলাভাব কমে। কারণ জলে ভিজে মৌরির উপাদান সহজেই পানিতে মিশে যায়, যা শরীর দ্রুত শোষণ করে। ফলে শরীর শুধু সুস্থই থাকে না, অনেকটা সতেজও অনুভূত হয়।আধুনিক জীবনযাত্রায় অস্বাস্থ্যকর খাবার, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত জীবনধারার কারণে হজমের সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মৌরি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের একটি অপরিহার্য অংশ হতে পারে।
আগামী দিনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যদি নিয়মিতভাবে মৌরি খাওয়া ও মৌরি ভেজানো জলের ব্যবহারকে আরও প্রসারিত করেন, তবে এটি মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।মৌরি কেবল একটি সাধারণ মশলা নয়, এটি আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক প্রাকৃতিক ওষুধ। মুখশুদ্ধি থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ—সব ক্ষেত্রেই এর অবদান অপরিসীম। তাই প্রতিদিনের ছোট্ট অভ্যাস—খাওয়ার পরে এক চিমটি মৌরি কিংবা সকালে খালি পেটে মৌরি ভেজানো জল—আমাদের শরীরকে রাখবে সুস্থ, প্রাণবন্ত ও সতেজ।