Thursday, May 29, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যখেলাফরাসি কোচের খোঁজে আসানসোলের মাঠে ফুটবল প্রতিভা

ফরাসি কোচের খোঁজে আসানসোলের মাঠে ফুটবল প্রতিভা

Football talent on the field of Asansol in search of a French coach : “সব খেলার সেরা বাঙালির ফুটবল”—এই কথাটা আমরা বাঙালি হিসেবে যতই গর্ব করে বলি না কেন, বাস্তবে বাংলার গ্রামগঞ্জের ফুটবল প্রতিভা আজও আলোর মুখ দেখার জন্য কেবল লড়াই করে যাচ্ছে। কিন্তু এবার সেই লড়াইয়ের মাঠে যেন নতুন রোদ্দুর ছড়াল। কারণ, আসানসোলের মাটিতে, বিশেষ করে কুলটির মিঠানি গ্রামের কাদামাখা মাঠে, ফুটবল প্রতিভা খুঁজতে নেমেছেন দুই ফরাসি কোচ—ম্যাক্স কেস্তেলিউট এবং ফিলিপ দি রাইডার। এ যেন বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেলোয়াড়দের জন্য এক স্বপ্নের সকাল, যেখানে বিদেশী কোচের কাছে নিজেদের ফুটবল প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন গ্রামের ছেলেমেয়েরা। এই অভিনব উদ্যোগের পেছনে রয়েছে হলদিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল একাডেমি (HIFA), যা ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (IFA) এবং কাউন্টি স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের (CSF) যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে। লক্ষ্য একটাই—গ্রামবাংলার প্রতিভাকে খুঁজে বের করা, তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ময়দানের সত্যিকারের ‘ডায়মন্ড’ হিসেবে গড়ে তোলা।

photo 1486286701208 1d58e9338013?fm=jpg&q=60&w=3000&ixlib=rb 4.1

মিঠানি গ্রামের সেই দিনটার কথা বললেই গায়ে কাঁটা দেয়। মাঠে ভিড় করেছেন প্রায় দুই শতাধিক কিশোর ফুটবলার—কারও হাতে ছেঁড়া জুতো, কারও আবার খালি পা। কেউ এসেছে আসানসোল থেকে, কেউ কুলটি, কেউ ধানবাদ, কেউ পুরুলিয়া, কেউ বাঁকুড়া থেকে। অধিকাংশই তফসিলি জাতি ও উপজাতি পরিবারের সন্তান, অথচ চোখেমুখে ফুটছে ফুটবলের প্রতি এক নিখাদ ভালোবাসা। ফরাসি কোচ ম্যাক্স কেস্তেলিউট বলেন, “বাংলা এক ফুটবলের খনি। এখানে যে প্রতিভা আছে, সেটা শুধু প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনার। আমাদের কাজ সেই খনি থেকে কয়লা বের করে হীরের মতো তৈরি করা।” ৬০ বছর বয়সী এই কোচের কথায় গ্রামের মানুষ আপ্লুত। কে বলবে, এরা এতদিন কলকাতার বাইরের ময়দান ছাড়িয়ে কখনও কোনো আন্তর্জাতিক কোচের মুখ দেখেনি? স্থানীয় ইউনাইটেড ক্লাবের কোচ অমল কুমার দাস জানালেন, “এতবড় সুযোগ এ অঞ্চলের জন্য আগে আসেনি। এখন আমাদের দায়িত্ব ওদের ধরে রাখা, যাতে এরা হারিয়ে না যায়।” আপাতত সপ্তাহে তিনদিন করে ইউনাইটেড ক্লাবের কোচিং হবে, যাতে ছেলেরা মাঠের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মিঠানির মাঠে আসবেন ফিলিপ দি রাইডার, যিনি বাছাই করা ৪০ জন প্রতিভাবান ফুটবলারকে নিয়ে শুরু করবেন গুছিয়ে প্রশিক্ষণ। তার মধ্যে ১০-১২ জনকে বেছে নেওয়া হতে পারে বিদেশি কোচিংয়ের পরবর্তী স্তরের জন্য।

এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে মিঠানি, কুলটি, আসানসোলের মতো কয়লা খনি অধ্যুষিত এলাকায় ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক নতুন স্বপ্নের উন্মাদনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, ফুটবল শুধুই খেলার আনন্দ নয়, জীবনের দিশা। গ্রামের এক প্রবীণ ফুটবলপ্রেমী সুভাষ সিংহ বললেন, “আমাদের সময় এইসব স্বপ্ন ছিল না। এখন এই ছেলেমেয়েদের ভাগ্য আলাদা হতে পারে। যদি কেউ দেশের হয়ে খেলতে পারে, তাহলে আমাদের গ্রামের নামও আলোয় আসবে।”

অন্যদিকে, এই উদ্যোগের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দুঃসংবাদও মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। যেমন কাঁথিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনা—একটি লরি এবং অটোর মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন। শুক্রবার সকালবেলায় কাঁথির ১১৬ বি জাতীয় সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতদের মধ্যে তিনজনই অটোর যাত্রী, এবং দু’জন পথচারী। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, লরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোকে ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কয়েকজনের। দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা ছুটে এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করা হচ্ছে। এই খবরের সাথে মিঠানি গ্রামের ফুটবল-স্বপ্ন যেন এক অদ্ভুত বৈপরীত্যের ছবি তুলে ধরে—একদিকে ফুটবলের নতুন স্বপ্ন, অন্যদিকে মৃত্যুর ছায়া।

ফিরে আসা যাক আসানসোলের ফুটবল ময়দানে। ফরাসি কোচদের উপস্থিতি দেখতে শুধু খেলোয়াড় নয়, গ্রামের সাধারণ মানুষ, এমনকি মহিলারাও জড়ো হয়েছিলেন মাঠের চারপাশে। এক কিশোর ফুটবলার রাজু হাঁসদা বলল, “স্যাররা যখন বলল, আমার পজিশন নাকি ভালো, তখন মনে হচ্ছিল আমি স্বপ্ন দেখছি। এখন শুধু আরও ভালো খেলতে চাই।” আরেকজন সুব্রত মুর্মু বলল, “কখনও ভাবিনি বিদেশি কোচ আমাদের মাঠে এসে আমাদের শেখাবে। এবার প্রমাণ করতে হবে, আমরা কম নই।” এই কথাগুলো শুধু কয়েকজন ফুটবলারের নয়, গোটা বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিটি কিশোরের, যারা বলে—“আমাদেরও স্বপ্ন আছে।”

সবমিলিয়ে বলা যায়, ফরাসি কোচদের এই উদ্যোগ আসানসোলের ময়দান আর গ্রামের প্রতিভাকে শুধু আলোর মুখ দেখাবে না, বরং বাংলার ফুটবলের মানচিত্রে এক নতুন দিকচিহ্ন হয়ে থাকবে। শুধু কোচিং নয়, প্রয়োজন আরও সুযোগ, আরও প্ল্যাটফর্ম। যদি এই উদ্যোগ সফল হয়, তাহলে হয়তো একদিন এই মিঠানি মাঠ থেকেই উঠে আসবে ভারতের ভবিষ্যতের মেসি, নেইমার, বা এমবাপে। আর তখন হয়তো কেউ বলবে, “বাংলার মাটি শুধু কবি-সাহিত্যিকের নয়, ফুটবলার তৈরিরও।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments