Football competition on the occasion of Mahalaya : পড়লো ঢাকের ওপর কাঠি! হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন পরেই শুরু হবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, দুর্গাপূজা। সেই আনন্দঘন মুহূর্তের প্রাক্কালে মহালয়া উপলক্ষে রাম বাগান কাটরা বুড়ি ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজন করা হলো এক দিবসীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতাটি ছিল গ্রামবাসীদের জন্য বছরের অন্যতম আকর্ষণ, যা তাদের মধ্যে নতুন উদ্যম এবং আনন্দের সঞ্চার করেছে। এই ধরনের আয়োজন শুধু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি স্থানীয় সমাজের মধ্যে ঐক্য এবং সহযোগিতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ২ অক্টোবর, বুধবার, রাম বাগান ফুটবল মাঠে ক্লাবের সভাপতি প্রেম কড়া এবং সম্পাদক সন্দীপ রুইদাসের উদ্যোগে এবং ক্লাবের সদস্যদের সহযোগিতায় ১৬ টি দল নিয়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মহালয়ার পূর্ণ তিথিতে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলগুলো স্থানীয় ফুটবল প্রতিভা প্রদর্শন করেছে এবং দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছে।
এই প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই প্রতিটি ম্যাচে ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বিশেষ করে বাঁকুড়া ফুটবল ক্লাব এবং মহিষা বুড়ি জামুরিয়া দলের মধ্যে ফাইনাল ম্যাচটি ছিল দেখার মতো। উভয় দলের খেলোয়াড়েরা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন এবং প্রতিটি মুহূর্তে দর্শকরা উত্তেজনায় ভেসে যান। শেষ পর্যন্ত বাঁকুড়া ফুটবল ক্লাব মহিষা বুড়ি জামুরিয়া দলকে পরাস্ত করে প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নির্বাচিত হয়।
চ্যাম্পিয়ন দলকে পুরস্কার হিসেবে ১৬০০০ টাকার নগদ পুরস্কার এবং একটি সুন্দর ট্রফি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, রানার আপ দল মহিষা বুড়ি জামুরিয়া ১৪০০০ টাকার নগদ পুরস্কার এবং একটি ট্রফি পেয়েছে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, যাঁদের মধ্যে ক্লাবের পুরনো সদস্য এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।
রাম বাগান ফুটবল মাঠে ফুটবল প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় মানুষজন সকাল থেকেই মাঠে ভিড় জমান এবং পুরো দিনটি তাঁরা ফুটবলের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচগুলোর মধ্যে কাটিয়ে দেন। এই প্রতিযোগিতা শুধু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অন্যতম উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্লাবের সভাপতি প্রেম কড়া জানান, “মহালয়া উপলক্ষে এই ফুটবল প্রতিযোগিতা আমাদের ক্লাবের জন্য এক বিশেষ আয়োজন। আমরা চাই, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিভা উঠে আসুক এবং সবাই মিলে আনন্দে মেতে উঠুক।” ক্লাবের সম্পাদক সন্দীপ রুইদাসও বলেন, “এটা শুধু ফুটবলের প্রতিযোগিতা নয়, এটা আমাদের সমাজের একত্রিত হওয়ার একটা মাধ্যম। আমাদের প্রত্যেক সদস্য এই আয়োজনকে সফল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।”

স্থানীয় সমাজে এই প্রতিযোগিতার প্রভাব খুবই ইতিবাচক। এই ধরনের আয়োজন শুধু ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। গ্রামাঞ্চলে এমন আয়োজন শুধুমাত্র ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এটি স্থানীয় মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য, সহযোগিতা এবং সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।
প্রতিযোগিতার অন্যতম আকর্ষণ ছিল স্থানীয় দর্শকদের অংশগ্রহণ। রাম বাগানের বাসিন্দা কৃত্তিবাস রবিদাস, যিনি নিজেই এই আয়োজনের একজন উদ্যোক্তা, বলেন, “এই প্রতিযোগিতা আমাদের গ্রামের মানুষদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। মহালয়ার সময় আমাদের গ্রামের এই ঐতিহ্য বহন করে এই ফুটবল ম্যাচ, এবং আমরা চাই এটা প্রতি বছর চলতে থাকুক।”
স্থানীয় ফুটবল প্রতিভার বিকাশের জন্য এই ধরনের প্রতিযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামাঞ্চলের তরুণ খেলোয়াড়েরা নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শন করার সুযোগ পান এবং তাঁরা ভবিষ্যতে আরও বড়ো পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী এক তরুণ ফুটবলার জানান, “আমাদের জন্য এই ধরনের আয়োজন খুবই উৎসাহজনক। আমরা এখানে খেলার সুযোগ পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করতে চাই।”
এই প্রতিযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে আরও বড়ো আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ক্লাবের। ক্লাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বছর মহালয়ার সময়ে আরও বড়ো পরিসরে ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে, যাতে আরও বেশি দল অংশগ্রহণ করতে পারে। তাঁরা চান, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি হোক এবং গ্রামের মানুষদের মধ্যে আনন্দের পরিবেশ বজায় থাকুক।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই ধরনের আয়োজনকে সমর্থন জানিয়েছেন। প্রতিযোগিতার সময় আশেপাশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও এক ধরনের চাঙ্গাভাব দেখা যায়। দোকানদার, খাবার বিক্রেতা এবং অন্যান্য স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতা উপলক্ষে ভালো বাণিজ্য করতে পেরেছেন। ফলে এই আয়োজন স্থানীয় অর্থনীতির ওপরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এক স্থানীয় দোকানদার বলেন, “এই ধরনের আয়োজন আমাদের ব্যবসায়িক জন্য খুবই ভালো। অনেক লোকজন আসে, আর আমাদের বিক্রিও বাড়ে।”
মহালয়ার ফুটবল প্রতিযোগিতাটি শুধু একটি খেলা নয়, এটি স্থানীয় সমাজের জন্য উৎসবের মতো। ফুটবলের প্রতিযোগিতা আর স্থানীয় মানুষদের সমর্থন – সব মিলিয়ে পুরো দিনটাই যেন উৎসবের আবেশে মোড়া ছিল। এই প্রতিযোগিতা আরও একবার প্রমাণ করল যে, স্থানীয় ক্রীড়া আয়োজনগুলি কেবলমাত্র বিনোদনের জন্য নয়, বরং সমাজের জন্য একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।