Friday, July 11, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসরেস্তোরাঁয় খাদ্য দপ্তরের হানা, উদ্ধার পচা খাবার ও নিষিদ্ধ উপাদান

রেস্তোরাঁয় খাদ্য দপ্তরের হানা, উদ্ধার পচা খাবার ও নিষিদ্ধ উপাদান

Food department raids restaurant:শুক্রবার সকালটা যেন শিলিগুড়ি শহরের এসএফ রোডে রীতিমতো উত্তেজনা আর অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে শুরু হলো, কারণ রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর, দমকল ও পুলিশের যৌথ অভিযানে একের পর এক রেস্তোরাঁ ও মিষ্টির দোকান থেকে উদ্ধার হলো বাসি খাবার, পচা উপকরণ, নিষিদ্ধ কেমিক্যাল আর বেআইনি গ্যাস সিলিন্ডার, যা শহরের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে, ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন খাদ্য দপ্তরের বিশেষ একটি টিম হঠাৎ করেই এসএফ রোডের কয়েকটি নামী ও মাঝারি মানের রেস্তোরাঁয় হানা দেয়, প্রথমে মালিক ও কর্মীরা কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও, তদন্তকারীরা একের পর এক ফ্রিজ খুলতেই শুরু হয় বিস্ফোরক তথ্যের উন্মোচন—দুই থেকে তিন দিন আগের রান্না করা বিরিয়ানি, পনির, চিকেন কারি, এমনকি বাসি দই ও মিষ্টি ফ্রিজে স্টক করে রাখা হয়েছে, যা ফের গরম করে কাস্টমারদের পরিবেশন করা হচ্ছিলো বলে অভিযোগ, এক কর্মী তো নির্লজ্জভাবে বলেন, “এইগুলো তো অনেক দোকানেই চলে, একটু পুরনো হলেই বা কি হয়েছে, খেয়ে তো কেউ অসুস্থ হয়নি,” কিন্তু এই যুক্তি মানতে রাজি নন খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক দীপ্তাশিস মজুমদার, যিনি বলেন, “মানুষের স্বাস্থ্যের সঙ্গে কেউ ছেলেখেলা করতে পারে

না, এই ধরনের দোকানগুলোর লাইসেন্স স্থগিত করা হবে ও কড়া আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” ঘটনায় আরও চাঞ্চল্য ছড়ায়, যখন একটি মিষ্টির দোকানে রান্নায় ব্যবহৃত একধরনের কেমিক্যাল উদ্ধার হয়, যা সাধারণত টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে রং ফিক্স করার কাজে ব্যবহৃত হয়, জানা যায়, মিষ্টি আরও উজ্জ্বল দেখতে লাগার জন্য এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছিলো, যেটি মানব দেহে ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে, স্থানীয় এক চিকিৎসক ডা. সন্দীপ সরকার বলেন, “এই কেমিক্যাল দীর্ঘদিন খেলে লিভার ও কিডনির গুরুতর ক্ষতি হয়, এটা অত্যন্ত ভয়ানক ও ফৌজদারি অপরাধের শামিল,” শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকটি হোটেল ও দোকানে বাণিজ্যিক গ্যাসের পরিবর্তে পাওয়া যায় বাড়ির রান্নার জন্য নির্ধারিত ১৪.২ কেজি সিলিন্ডার, যেগুলির ব্যবহার রেস্টুরেন্টে বেআইনি, এবং যে কোনও সময় বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে, দমকল আধিকারিক সঞ্জয় রায় বলেন, “এই ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার যদি কোনো কারণে ফুটে যায় বা লিক করে, তাহলে পুরো এলাকায় আগুন ধরে যেতে পারে, রেস্টুরেন্টে এসব ব্যবহারের অনুমতি নেই,” অভিযানের সময় পুলিশ নিরাপত্তা বল গড়ে তোলে, কারণ কিছু দোকানদার প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে প্রশাসনের কড়া মনোভাব দেখে পরে তারা নরম সুরে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন, এই ঘটনার জেরে সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রবল উদ্বিগ্ন, কারণ এইসব রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন শত শত মানুষ খাবার খান, কেউ অফিসফেরত ক্লান্ত হয়ে, কেউবা পরিবার নিয়ে খেতে বেরিয়ে পড়েন, অথচ তার মধ্যেই যদি পচা খাবার বা বিষাক্ত উপাদান ঢুকে যায়, তাহলে তো অজান্তেই নিজেদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া, এলাকার বাসিন্দা শ্রীমতি রিতা বসু ক্ষোভে বলেন, “আমরা তো এই দোকানগুলোকে বিশ্বাস করে খাই, ভাবিওনি এত জঘন্য ব্যাপার ঘটছে, এদের লাইসেন্স বাতিল হওয়া উচিত,” ঘটনায় রাজ্যজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়েছে সেই অভিযান চলাকালীন তোলা ছবি ও ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে ফ্রিজে রাখা পচা বিরিয়ানি, ফাঙ্গাস ধরা গ্রেভি আর রান্নাঘরে গন্ধে টিকে থাকা দায়, এই ছবিগুলো দেখে অনেকেই বলেছেন যে শহরে খাদ্যের নামে যে ভয়াবহ প্রতারণা চলছে, তা আর চুপ করে সহ্য করা যাবে না, এই ঘটনায় শুধু প্রশাসনের নয়, সাধারণ মানুষকেও আরও সচেতন হতে হবে, অভিযানে অংশ নেওয়া একজন ইন্সপেক্টর বলেন, “আপনারা খাবার খেতে যাওয়ার আগে দোকানের পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ দেখে তবে সিদ্ধান্ত নিন, শুধু নাম বা সাজসজ্জা দেখে নয়,” রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, এই অভিযান এবার থেকে নিয়মিত হবে এবং শহরের আরও নানা এলাকায় হানা দেওয়া হবে, যাতে এই ধরনের অনিয়ম ও বিপজ্জনক ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, খাদ্য দপ্তরের কমিশনার পার্থপ্রতিম দাস বলেন, “মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে আপোষ করা চলবে না, যেখানেই অভিযোগ আসবে, আমরা তদন্ত করবো এবং দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না,” জানা গেছে, অভিযানে ধৃত বেশ কয়েকটি দোকানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং জরিমানা ধার্য করা হয়েছে, কারও কারও লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরের অন্য রেস্তোরাঁ মালিকরাও সতর্ক হয়ে উঠেছেন, কেউ নতুন করে কিচেন ক্লিনিং শুরু করেছেন, কেউ স্টোররুম পরিষ্কার করছেন, কেউ পুরনো খাবার ফেলে দিচ্ছেন—সেই ছবি আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এতদিন কেন প্রশাসন নীরব ছিল, এই ধরনের অনিয়ম কি নতুন কিছু? না কি অনেকদিন ধরেই চলছে, কিন্তু নজর দেওয়া হয়নি? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের এই অভিযান তাই যেমন জরুরি ছিল, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও এক শিক্ষা, যে খাবারের ব্যবসা শুধু লাভ নয়, এটি মানুষের জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত, এই শিক্ষা যদি দোকানদাররা সত্যিই গ্রহণ করেন, তাহলেই এই অভিযান সার্থক হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments