Friday, April 18, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যমদ্যপানে ‘জরিমানা’ পোষ্টার গ্রামবাসীদের

মদ্যপানে ‘জরিমানা’ পোষ্টার গ্রামবাসীদের

‘Fine’ posters for drinking to villagers:পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ব্লকের মাইশোরা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের রাজসহর গ্রাম। সম্প্রতি এই গ্রামে মদ্যপানের বিরুদ্ধে এমন একটি পোস্টার দেখা যাচ্ছে যা গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। পোস্টারের ভাষ্য অনুযায়ী, যদি কেউ গ্রামের রাস্তার ধারে মদ্যপান করেন তবে তাকে ৫০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। তদ্ব্যতীত, যে ব্যক্তি এই নিয়ম ভঙ্গকারীদের ধরিয়ে দেবেন তাকে ১০০১ টাকা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে। এমন একটি কঠোর ব্যবস্থা গ্রামবাসীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এই পোস্টার, যা সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

Alcohol

রাজসহর গ্রামে রাস্তার ধারে এবং চাষযোগ্য জমির পাশে মদ্যপানের চল দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। জমির মালিক ও চাষীরা জানান, এই অবস্থান মদ্যপায়ীদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, যেখানে তারা অনায়াসে মদ্যপান করে বোতল ভেঙে ফেলছে। এই ভাঙা বোতলগুলি জমিতে পড়ে থাকায়, চাষের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে চাষিদের মাটিতে কাজ করতে গিয়ে হাত ও পা কেটে যাচ্ছে, এবং একাধিকবার প্রশাসনকে জানানো হলেও এই সমস্যার সুরাহা মেলেনি। নিরুপায় গ্রামবাসীরা তাই নিজেরাই এভাবে মদ্যপান নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই পোস্টার তাদের একটি সচেতনতার প্রতীক।

এই পোস্টার নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। কিছু মানুষ এটিকে স্রেফ সামাজিক সচেতনতার প্রচেষ্টা মনে করলেও, আবার অনেকে মনে করছেন যে, এটি রাজনৈতিক দলের এক কৌশল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, “এটা তো একটা সাধারণ সমস্যা। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগেই কেন এই পোস্টার লাগানো হলো?” এমন মন্তব্য তুলে দিয়েছে যে এই উদ্যোগ হয়তো ভোটের সময়কে কেন্দ্র করে জনমানসে প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যে।

স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল দাসের কথায়, “এই পোস্টার লাগানোটা একটা সাহসী পদক্ষেপ। আমরা এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছি। এটা হয়তো কিছুটা হলেও মদ্যপানকারীদের বাধা দেবে।” অন্যদিকে, গ্রামের এক প্রবীণ মহিলা সাবিত্রী দেবী বলেন, “আমাদের শান্ত গ্রামের রাস্তা যেন মদের আড্ডা না হয়ে ওঠে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারে না। এই পোস্টার তাদের জন্য একটা বার্তা।”

তবে এমন উদ্যোগকে সকলে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না। কিছু যুবকের মতে, “এই পোস্টার শুধুমাত্র একটি শাস্তির হুমকি। আসলে প্রশাসন যদি ঠিকঠাকভাবে ব্যবস্থা নিতো, তাহলে এতো দূর পর্যন্ত আসতে হতো না।” এই মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, গ্রামের মানুষজনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্ম এ ধরণের পদক্ষেপকে সমাজ পরিবর্তনের চেয়ে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছে।

গ্রামের মানুষদের প্রত্যাশা, এই পোস্টার লাগানোর পর হয়তো মদ্যপায়ীরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে কেউ কেউ বলছেন, “শুধু পোস্টার লাগালেই তো হবে না। প্রয়োজনে গ্রামে একটি কঠোর নিয়মাবলী চালু করতে হবে, যাতে কেউ রাস্তার ধারে মদ্যপান করতে সাহস না পায়।” তবে এমন পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পোস্টার লাগানোর উদ্যোগ যদি সফল হয়, তবে অন্যান্য এলাকাও হয়তো এই মডেলকে অনুসরণ করতে পারে।

1649135087alcohol 2024 05 37a3ed4a2c0f8eb8ddfbce7e6620d1e8

যদিও অনেক গ্রামবাসীই এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন, তবুও এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে। এই পোস্টার কতটা সমস্যার সমাধান করতে পারবে, তা নির্ভর করবে গ্রামের মানুষ এবং প্রশাসনের সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর।

স্থানীয় গ্রামবাসী ও চাষীদের অভিমত এই পোস্টার একদিকে যেমন তাঁদের সমস্যা নিরসনের এক প্রয়াস, অন্যদিকে কিছু মানুষের মনে এটিকে প্রতিযোগী রাজনৈতিক দলের প্রভাব বিস্তারের একটি চাতুর্য মনে হচ্ছে। গ্রামবাসী ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে টানাপোড়েনও স্পষ্ট হয়েছে। স্থানীয় স্তরের এই পদক্ষেপ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামত ভিন্ন হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments