Find out how Sachin Tendulkar’s daughter Sara got rid of PCOS : সারা তেন্ডুলকর — এক কিংবদন্তি ক্রিকেটারের কন্যা হওয়া সত্ত্বেও আজ তিনি নিজস্ব পরিচয়ে বারবার উঠে আসছেন আলোচনার কেন্দ্রে। সৌন্দর্য, স্মার্টনেস ও স্বাস্থ্যসচেতন জীবনধারার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বিপুল জনপ্রিয়। কিন্তু যেটা জানেন না অনেকেই, সেই সারা এক সময় ভুগেছেন একটি সাধারণ কিন্তু জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায়—পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা PCOS। এই হরমোনজনিত সমস্যাটি মূলত কিশোরী ও যুবতী মেয়েদের মধ্যে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে। সারার অভিজ্ঞতা, তাঁর লড়াই, ও শেষমেশ সুস্থ হয়ে ওঠার কাহিনি এখন অনেকের কাছে প্রেরণার উৎস। কারণ তিনি শুধুমাত্র ওষুধের উপর নির্ভর না করে নিজের জীবনধারায় আমূল পরিবর্তন এনে এই রোগকে হার মানিয়েছেন।
বয়ঃসন্ধিকালে সারা বুঝতে পারেন তাঁর শরীরে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। একটু একটু করে শরীর মোটা হতে শুরু করে, মুখে ব্রণ দেখা দেয়, অনিয়মিত ঋতুচক্র তাঁকে অস্থির করে তোলে। চিকিৎসকের পরামর্শে ধরা পড়ে তাঁর PCOS হয়েছে। একজন টিনএজ মেয়ের জন্য এই ধরণের খবর মানসিকভাবে খুব চাপের। সারা নিজেও একথা স্বীকার করেছেন যে, সেই সময় নিজেকে নিয়ে খুবই ইনসিকিওর হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সেই অবস্থায়ও তিনি মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বুঝতে পারেন, শুধু ওষুধ খেলে চলবে না, বদল আনতে হবে নিজের দৈনন্দিন জীবনযাপনে।
প্রথমেই তিনি ডায়েট চার্ট পুরো পালটে ফেলেন। যেহেতু পিসিওএসে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ওজন বৃদ্ধি এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, তাই সারা কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে প্রোটিনভিত্তিক খাদ্য গ্রহণ শুরু করেন। তাঁর দিনের শুরু হতো এক গ্লাস গরম জল, কয়েকটি বাদাম ও এক কাপ ব্ল্যাক কফি দিয়ে। দুধ, চিনি এবং যেকোনো রকমের প্রসেসড ফুড একেবারে বাদ দেন। কোমল পানীয়ের বদলে তিনি গ্রহণ করতে থাকেন ডিটক্স ও হার্বাল ড্রিঙ্ক। দুপুর এবং রাতের খাবারেও রাখতেন প্রচুর সবজি, চিকেন, ডিমের সাদা অংশ, এবং সঠিক পরিমাণে হেলদি ফ্যাট।

তবে ডায়েটই শেষ কথা নয়। সারা বলেন, “রোগকে হারাতে হলে শরীরচর্চাকে অভ্যাসে পরিণত করতেই হবে।” প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে জিমে যেতেন তিনি। সেখানে কার্ডিও, ওয়েট ট্রেনিং, ইয়োগা, ও HIIT (High-Intensity Interval Training) করতেন। তাঁর মতে, এক ঘণ্টা শরীরচর্চা তাঁকে কেবল সুস্থ রাখেনি, মানসিকভাবেও চাঙ্গা করেছে। সারা আরও বলেন, “শুধু শরীর না, মনও ঠিক রাখতে হবে। PCOS মানে মানসিক চাপে থাকলে চলবে না। ভাল ঘুম, পরিমিত স্ট্রেস ও কাজের ভারসাম্য খুব দরকার।”
তিনি অনুসরণ করেন Intermittent Fasting—একটি পদ্ধতি যেখানে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া হয় এবং বাকিটা সময় উপবাসে থাকা হয়। এর ফলে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং ফ্যাট বার্ন সহজ হয়। সারা এই পদ্ধতিকে তাঁর রোগমুক্তির অন্যতম চাবিকাঠি বলে মনে করেন। এছাড়া তিনি একান্তে কিছু সময় মেডিটেশন ও বই পড়ার জন্যও রাখতেন, যাতে মানসিক চাপ দূর হয়।
সারার এই অভিজ্ঞতা আজকের হাজার হাজার তরুণীর কাছে এক আশার আলো। কারণ আমাদের সমাজে এখনো মেয়েদের হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা হয় না। PCOS সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু এখনো বহু নারী এই রোগ নিয়ে চুপ করে থাকেন, অবহেলা করেন। চিকিৎসকরা বলছেন, পিসিওএসের ক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষণগুলিকে গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে এটি ডায়াবেটিস, ইনফার্টিলিটি এমনকি হার্টের সমস্যাও ডেকে আনতে পারে। তাই সারার মতোই যদি প্রত্যেকে নিজের শরীরকে গুরুত্ব দেন, জীবনধারায় পরিবর্তন আনেন, তাহলেই মিলবে মুক্তি।
জানা গেছে, সারার মতো বলিউডের বহু অভিনেত্রী যেমন সোনম কাপুর, শ্রদ্ধা কাপুর, সারা আলি খান—তাঁরাও এই রোগে ভুগেছেন এবং নিজেদের জীবনের বদলে ফেলেছেন। সারার চিকিৎসক ডা. অনামিকা সিনহা বলেন, “সারা অত্যন্ত অনুগত একজন রোগী ছিলেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি নিজের লাইফস্টাইলে যে কঠোর অনুশাসন এনেছেন, সেটাই ওঁর মূল সাফল্যের কারণ।”
PCOS-এর বিরুদ্ধে সারার এই সফল লড়াই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। Instagram-এ তাঁর ফিটনেস ভিডিও, হেলদি রেসিপি এবং মোটিভেশনাল পোস্ট লক্ষ লক্ষ মেয়েকে অনুপ্রাণিত করছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি একজন সেলিব্রিটি খোলাখুলি এই নিয়ে কথা বলেন, তাহলে সাধারণ মানুষও সাহস পান এগিয়ে আসতে।
তবে এই গল্পের সবচেয়ে বড় বার্তা হল—জীবনধারার পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। সারা নিজে বলেছেন, “আমি নিজের শরীরকে ভালোবেসেছি। সেটাই আমাকে সুস্থ করেছে।” সারা তেন্ডুলকরের এই বক্তব্য শুধু একটিমাত্র রোগ নয়, বরং আজকের প্রজন্মের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা—নিজেকে ভালোবাসো, নিজের শরীরের যত্ন নাও।