Fighter jets are being manufactured at the Habra factory with the arrival of the Deca-Bhuja: কাশ্মীরের পেহেলগাঁওতে গত বাইশে এপ্রিল ঘটে গিয়েছিল এক ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা। অজান্তে জীবন হারিয়েছিলেন বহু নিরীহ পর্যটক। সেই ঘটনার রক্তাক্ত স্মৃতি আজও ভারতের মানুষের মনে তাজা। হামলার প্রতিশোধে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় যুদ্ধবিমান রাফেল এবং একাধিক আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে। সেই “অপারেশন সিঁদুর” ভারতীয় সেনার সাহস এবং দক্ষতার প্রতীক হয়ে ওঠে।আজ, সেই ঐতিহাসিক অভিযানের আবহই নতুন রূপ পাচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার এক কারখানায়। এখানে তৈরি হচ্ছে যুদ্ধবিমান, রকেট লঞ্চার, ব্রহ্মাস্ত্র, র্যাডার ও ড্রোন—অবশ্যই সবই নিছক মডেল। কিন্তু এত নিখুঁতভাবে সাজানো হচ্ছে এগুলি যে বাস্তবের মতো মনে হবে। উদ্দেশ্য—আসন্ন দুর্গাপুজোতে জনসাধারণকে তাক লাগানো।
হাবড়ার বাসিন্দা শিল্পী শিবু দাস প্রায় তিন মাস ধরে তৈরি করছেন এই অভিনব যুদ্ধবিমান ও অস্ত্রের মডেল। কলকাতার বাগুইহাটির অভিযাত্রী ক্লাবের দুর্গাপুজোয় ব্যবহৃত হবে এগুলি। পুজোমণ্ডপে ঢুকলেই যেন মনে হবে ভারত-পাক যুদ্ধে ভারতীয় সেনারা ঠিক যেভাবে লড়াই করেছিলেন, সেই দৃশ্য আবারও চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।রাফেল যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে রকেট লঞ্চার, ড্রোন, র্যাডার কিংবা ব্রহ্মাস্ত্র—কিছুই বাদ পড়েনি। শুধু মডেল নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক কাজও। ফলে প্রদর্শনী হবে আরও বাস্তবসম্মত।হাতে আর কয়েকটা দিন বাকি, তাই শিল্পী ও তাঁর টিম দিন-রাত এক করে কাজ চালাচ্ছেন। পূজোর ভিড়ের মধ্যে এই থিম সাধারণ দর্শনার্থীর চোখ কেড়ে নেবে, সে ব্যাপারে শিল্পীর আস্থা পূর্ণ।

যদিও এ ধরনের উদ্যোগ সরাসরি সরকারি সমর্থন বা অনুমোদনের বিষয় নয়, তবু স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, নিরাপত্তা ও দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, যুদ্ধবিমান ও অস্ত্রশস্ত্রের প্রদর্শনী দেখতে অনেক মানুষ ভিড় জমাবে, সেটি আগেই অনুমান করা যাচ্ছে।হাবড়ার মানুষ এই অভিনব থিম নিয়ে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত। স্থানীয়দের কথায়, “শুধু প্রতিমা নয়, থিমই আজ পূজোর আসল আকর্ষণ। শিবুদার হাতের কাজ তো বরাবরই আলাদা। এবারের উদ্যোগে দেশপ্রেমের ছোঁয়া রয়েছে, তাই আরও মন ছুঁয়ে যাবে।”বাগুইহাটির বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, এই পুজোয় এসে শুধু দেবী দর্শন নয়, দেশের সেনাদের ত্যাগ ও বীরত্বের কাহিনি কাছ থেকে অনুভব করার সুযোগ মিলবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি এক শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা হবে।

আসলে দুর্গাপুজো এখন আর শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক সামাজিক-সাংস্কৃতিক আখড়া। থিমপূজোর মাধ্যমে নানা সামাজিক বার্তা যেমন পৌঁছে যায়, তেমনি জাতীয়তাবোধও প্রকাশ পায়।অপারেশন সিঁদুর ভারতীয় সেনার সাফল্যের গৌরবময় অধ্যায়। সেই ঘটনাকে শিল্পকলার মাধ্যমে পুনরায় উপস্থাপন করার উদ্যোগ কেবল বিনোদন নয়, এটি এক জাতীয় স্মৃতিচারণও বটে।অন্যদিকে, পূজোর দর্শনার্থীর ভিড়ের মধ্যেই মানুষ যখন যুদ্ধবিমান ও অস্ত্রের মডেল দেখে মুগ্ধ হবে, তখন তাদের মনে আরও একবার উঁকি দেবে ভারতীয় সেনার প্রতি শ্রদ্ধা ও গর্ব।

শিল্পী শিবু দাসের আশা, এই থিম তাঁর ব্যক্তিগত কর্মজীবনকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। ইতিমধ্যেই তিনি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে মডেল তৈরির অর্ডার পান। এবার যদি এই পূজোর থিম সফল হয়, তবে জাতীয় পর্যায়েও তাঁর কাজ আরও স্বীকৃতি পাবে।এছাড়া, ভবিষ্যতে এ ধরনের দেশপ্রেমমূলক থিম অন্য মণ্ডপগুলোতেও জনপ্রিয় হতে পারে। সাধারণ মানুষও পুজো দেখতে এসে কেবল শৈল্পিক সৌন্দর্যই নয়, দেশের ইতিহাস ও সেনার বীরত্ব সম্পর্কেও নতুন করে জানতে পারবেন।

হাবড়ার শিল্পীর হাত ধরে এবার বাগুইহাটির পূজোমণ্ডপে ফুটে উঠছে এক অভিনব কাহিনি—যেখানে ধর্মীয় আবহ মিশেছে দেশপ্রেমের আবেগে। অপারেশন সিঁদুরের স্মৃতি আর ভারতীয় সেনার সাফল্য একসঙ্গে মিলেমিশে তৈরি করবে অন্যরকম এক পূজো অভিজ্ঞতা।শিবু দাসের এই উদ্যোগ নিছক শিল্প নয়, এটি এক আবেগ—দেশপ্রেম আর দুর্গোৎসবের মিলিত রূপ।