Farmers of Panshkura are successful in modern process of flower cultivation পাঁশকুড়ার মাটি বরাবরই উর্বর এবং চাষবাসে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এসেছে এখানকার কৃষকরা। তবে এবার তারা নজির গড়েছে একেবারে নতুন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বিজ্ঞানের সাহায্যে রাতের অন্ধকারে জমিতে ইলেকট্রিক বাল্ব জ্বালিয়ে ফুল চাষ করে নজিরবিহীন সাফল্য দেখিয়েছেন। শীতের মরশুমে যেখানে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা চাষের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে এই অভিনব পদ্ধতি চাষিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।সাধারণত সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া দিনের আলোতেই ঘটে। সূর্যের আলোর উপস্থিতি গাছের বৃদ্ধি এবং ফুলের ফোটার প্রধান উপাদান। কিন্তু শীতকালে দিনের আলো কম পাওয়া এবং হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন চাষিদের বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। এই সমস্যা কাটাতে পাঁশকুড়ার চাষিরা জমিতে ইলেকট্রিক বাল্ব জ্বালানোর মাধ্যমে রাতেও সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া করানোর অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
জমির উপর সারি সারি আলো জ্বেলে এই পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে চন্দ্রমল্লিকার মতো জনপ্রিয় ফুল। বিভিন্ন জাতের চন্দ্রমল্লিকা যেমন হলুদ, সাদা, গোলাপি এবং বেগুনি রঙের ফুলগুলো তৈরি হচ্ছে ঠিক সময়ে এবং তাদের উজ্জ্বল রঙ এবং মান বজায় থাকছে।পাঁশকুড়ার এই অভিনব পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফুল শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন রাজ্য এবং বিদেশেও। বিশেষ করে চন্দ্রমল্লিকার চাহিদা বাড়ছে ভারতের শহরগুলোর পাশাপাশি ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে। আন্তর্জাতিক মানের এই ফুল স্থানীয় চাষিদের আয়ের বড় উৎস হয়ে উঠেছে।পাঁশকুড়ার এক সফল চাষি বলছেন, “প্রথমদিকে এই পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, এটি সত্যিই কাজ করছে। রাতের বেলা আলোর সাহায্যে ফুলের উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে, আর গুণগত মানও ভালো থাকছে।”
অন্য এক চাষি জানান, “এই প্রযুক্তি আমাদের খরচ বাড়িয়েছে ঠিকই, তবে লাভও হচ্ছে দ্বিগুণ। শীতের মরশুমে যখন আবহাওয়া অনিশ্চিত, তখন এই পদ্ধতি আমাদের ফুল চাষ টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে।”তবে এই পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে পরিবেশবিদদের মধ্যে কিছু প্রশ্ন উঠছে। ইলেকট্রিক বাল্ব ব্যবহারের ফলে শক্তি খরচ বাড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে চাষিরা জানাচ্ছেন, তারা সৌরশক্তি এবং কম বিদ্যুৎ খরচকারী LED বাল্ব ব্যবহারের দিকে এগোচ্ছে।এই অভিনব পদ্ধতি শুধু ফুল চাষ নয়, গোটা কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রকৃতির বাধাকে জয় করা সম্ভব।