Farewell monsoon, dry air entering Bengalঃ আষাঢ়-শ্রাবণের সেই টানা বৃষ্টির দিনগুলো এখন অতীত। আকাশে আর নেই সেই কালো মেঘের ঘনঘটা, মাঠঘাটেও নেই কাদা-মাটির ঘ্রাণ। ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু, বর্ষার পর্দা নামছে বাংলার আকাশে। মৌসুম বদলের এই সময়ে প্রকৃতিও যেন নতুন ছন্দে হাঁটতে শুরু করেছে—বৃষ্টি পিছু হটছে, আর উত্তর-পশ্চিমের ঠান্ডা হাওয়া নেমে আসছে ধীরে ধীরে।আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে বাংলার কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ—সব জেলাতেই আকাশ পরিষ্কার থাকবে। কিছু কিছু জেলায় আংশিক মেঘলা আকাশ দেখা গেলেও, তা কেবল কিছুক্ষণের জন্য। কলকাতা ও আশেপাশের এলাকায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২৩ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করবে।
পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা আরও কিছুটা কম থাকবে—সেখানে পারদ নামবে প্রায় ২ থেকে ৩ ডিগ্রি নিচে। বুধবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ৫১ থেকে ৯১ শতাংশের মধ্যে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে ৩২ ডিগ্রির কাছাকাছি।বর্ষা বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের আর্দ্র হাওয়া ক্রমে সরে যাচ্ছে। তার জায়গা নিচ্ছে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকের শুষ্ক হাওয়া। এই পরিবর্তনই বাংলার আকাশে শীতের আগমনের ইঙ্গিত বহন করছে। তবে বাতাসে এখনও জলীয়বাষ্প বিদ্যমান থাকায়, আপাতত তাপমাত্রা দ্রুত নামবে না। ফলে এখনই শীতের ছোঁয়া তেমনভাবে অনুভূত হবে না।

বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্পের কারণে রাতে শিশির পড়তে পারে, আর ভোরের দিকে দেখা দিতে পারে হালকা কুয়াশা। তবে ঘন কুয়াশার সম্ভাবনা এখনও নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসেম্বরের আগে কলকাতায় প্রকৃত শীতের অনুভূতি আসার সম্ভাবনা কম। ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই তবেই শহরে শীতের আমেজ পাওয়া যাবে।শহরের মানুষজনের মধ্যে ইতিমধ্যেই স্বস্তির হাওয়া বইছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও টানা বৃষ্টি ও আর্দ্রতার জন্য অস্বস্তি ছিল তীব্র, এখন সেই ভাব অনেকটাই কেটে গিয়েছে। অফিস যাত্রী থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া—সবাই বলছেন, “এখনকার আবহাওয়াটা একেবারে ঠিকঠাক—না গরম, না ঠান্ডা।” তবে সকালের দিকে হালকা ঠান্ডা বাতাসে উৎসবের আমেজ যেন একটু একটু করে ঢুকে পড়ছে শহরের গলিতে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়টি মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তনের স্বাভাবিক ধাপ। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যখন পুরোপুরি সরে যায়, তখন উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঠান্ডা, শুষ্ক হাওয়া প্রবেশ করতে শুরু করে। এর ফলে প্রথমে তাপমাত্রায় সামান্য হেরফের দেখা যায়, পরে ধীরে ধীরে শীতের সূচনা ঘটে।
এছাড়াও, এই সময়ে আকাশ পরিষ্কার থাকায় সূর্যের তেজ কিছুটা বেশি অনুভূত হয় দিনে, তবে রাতের দিকে পারদ নামার প্রবণতা দেখা দেয়। জলীয়বাষ্প ধীরে ধীরে কমতে থাকায় আর্দ্রতার কারণে যে গুমোট ভাব ছিল, তা কমে আসছে।ডিসেম্বর নাগাদ শীতের আগমন স্পষ্ট হবে বলে ধারণা আবহাওয়াবিদদের। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পারদ নামার গতি বাড়বে, এবং ডিসেম্বরের শুরুতেই শহর পাবে শীতের প্রথম ছোঁয়া।

এই সময়ে কৃষিক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন আসে—ধান কাটার মরসুম শুরু হয়, এবং চাষিরা প্রস্তুতি নিতে থাকেন শীতকালীন ফসলের জন্য। ফলে বর্ষা বিদায় শুধু আবহাওয়ার নয়, কৃষিরও নতুন অধ্যায়ের সূচনা।বর্ষা বিদায় মানেই বাংলার জীবনে এক নতুন পর্বের সূচনা। আকাশ পরিষ্কার, বাতাস হালকা, মাটিতে শিশিরের দ্যুতি—সব মিলিয়ে প্রকৃতি যেন তৈরি হচ্ছে শীতের পরশের জন্য। যদিও এখনও ঠান্ডার আমেজ পুরোপুরি নামেনি, কিন্তু হাওয়ায় বদলের সুর বেজে উঠেছে স্পষ্ট। অস্বস্তি কমে আসছে, আর মন বলছে—“এবার বুঝি শীত আসছে!”