Saturday, July 5, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যবোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু ব্যক্তির, মানতে নারাজ পরিবার

বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু ব্যক্তির, মানতে নারাজ পরিবার

Family refuses to accept death of man in bomb blast: গতকাল রাতটা যেন আর পাঁচটা রাতের মতো ছিল না পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমার নানুর থানার অন্তর্গত শেয়ালা গ্রামের বরকত কারিগরের পরিবারের জন্য। পরিবারের দাবি অনুযায়ী, বরকত কারিগর মহরম উপলক্ষে খেলায় অংশ নিতে বেরিয়েছিলেন সন্ধ্যায়। পেশায় রাজমিস্ত্রির সহকারী, সাদাসিধে জীবন, কারোর সঙ্গে কোনও রকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, রাজনীতি, বা অপরাধমূলক সম্পর্ক নেই বলেই দাবি পরিবারের। কিন্তু রাত দুটো নাগাদ আচমকাই থানার পুলিশের একটি দল এসে খবর দেয়—বরকতের মৃত্যু হয়েছে এক বোমা বিস্ফোরণে। এই কথা শুনেই শোকে পাথর হয়ে যায় পরিবার। কান্নায় ভেঙে পড়েন বরকতের স্ত্রী, মা, ভাইরা। বাড়ির উঠোনে তখন শুধুই বিষণ্ণতা আর অবিশ্বাসের ছায়া।বরকতের স্ত্রী মিনারা বিবি চোখের জল মুছতে মুছতে জানান, “ও তো শুধু খেলতে গেছিল, ও কখনও কারোর সঙ্গে ঝামেলা করেনি, এসব বোমা-টোমার কিছু বোঝে না। আমার ছোট দুটো ছেলে কীভাবে বড় হবে এখন?” বরকতের ভাই কাশেম কারিগর বলেন, “আমরা পুলিশকে স্পষ্ট বলেছি—আমরা বিশ্বাস করি না বরকত কোনও বোমা বানাতে গেছিল বা বিস্ফোরণে জড়িয়ে ছিল। ওর চরিত্রে কোনও দাগ ছিল না।” গোটা শেয়ালা গ্রাম আজ স্তব্ধ। প্রতিবেশী বুলু শেখ বলেন, “বরকত খুব পরিশ্রমী ছেলে ছিল।

তবে পুলিশি সূত্রে ভিন্ন তথ্য উঠে আসছে। নানুর থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে আমরা কিছু বোমার অংশ, সুটকি, কৌটো, এবং কিছু পাউডারজাতীয় উপাদান পেয়েছি। মৃতদেহও সেই জায়গার কাছাকাছি পড়ে ছিল। আমরা সন্দেহ করছি যে ওই ব্যক্তি ঘটনাচক্রে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে মারা গেছেন। তবে তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু চূড়ান্ত বলা যাচ্ছে না।”এই ঘটনার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। স্থানীয় বিরোধী দলের নেতা আশরাফ হোসেন বলেন, “নানুর অঞ্চলে বারবার বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রশাসন নিশ্চুপ। এখন একজন নিরীহ রাজমিস্ত্রির মৃত্যুতে প্রশাসন বলছে—বোমা বিস্ফোরণ? প্রশ্ন তুলছি—কে ওই বোমা এনে দিল, কে ওই জায়গায় রাখল, আর কেন একজন নিরীহ ব্যক্তি তার বলি হল?” যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা আব্দুল জলিল বলেন, “আমরা পরিবারের পাশে রয়েছি। কেউ যেন এই ঘটনাকে রাজনীতি না করে। তদন্ত হোক, সত্য সামনে আসুক।”

blast 0

ঘটনাস্থল ঘিরে এখন পুলিশি প্রহরা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “এই এলাকায় রাত নামলেই ভয় লাগে। কোথা থেকে কবে কোন খবর বেরিয়ে আসে বোঝা যায় না। পুলিশ এসে গিয়ে তদন্ত করে, আবার চলে যায়। কিন্তু এলাকায় নিরাপত্তার আশ্বাস মেলে না।” গ্রামের মহিলারা, বিশেষত বরকতের স্ত্রী ও মায়েরা, এখন একেবারে ঘরের বাইরে পা দিচ্ছেন না। ছেলেমেয়েদের স্কুলেও পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে।একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল—এই ধরণের বিস্ফোরণ বা বোমা বানানো নিয়ে গ্রাম বাংলায় একটা নীরব অস্তিত্ব রয়ে গেছে বহু বছর ধরে। বিশেষত রাজনৈতিক সময়ে বা গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয় এই দেশি বোমা। আর তার বলি হন সেইসব মানুষ, যারা হয়তো ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ছিলেন।এই মুহূর্তে পরিবার চাইছে একটি স্বচ্ছ তদন্ত ও সরকারি সাহায্য। বরকতের ভাই কাশেম বলেন, “আমরা চাই দাদা নির্দোষ প্রমাণিত হোক। পুলিশ যেন তার কাজ করে ঠিকমতো।” একইসঙ্গে এলাকার মানুষ চাইছেন, এই ধরনের ঘটনাগুলির পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। বোমার দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পুলিশ ও প্রশাসনের আরও সক্রিয়তা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন অনেকেই।আজ শেয়ালার আকাশ মেঘলা নয়, কিন্তু ঘরে ঘরে যেন অদৃশ্য এক কালো মেঘ জমে আছে। বরকতের মৃত্যুর প্রকৃত সত্য কী—তা হয়তো সময় বলবে, কিন্তু তার পরিবার, তার স্ত্রী, সন্তান আর গ্রামবাসীদের মনে যে প্রশ্ন জেগেছে—“কেন বরকত?”—তার উত্তর খুঁজতেই আজ কেঁদে উঠছে একটা গোটা গ্রাম।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments