Falling Star Late Manoj Mitra:বাংলা থিয়েটার এবং চলচ্চিত্র জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিংবদন্তি অভিনেতা ও নাট্যকার মনোজ মিত্র আর আমাদের মধ্যে নেই। ৮৫ বছর বয়সে মঙ্গলবার সকাল ৮.৫০ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি, এবং শেষ মুহূর্তে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সল্টলেকের ক্যালকাটা হার্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার হৃদযন্ত্র, রক্তচাপ, এবং কিডনির ক্রিয়েটিনিন লেভেলের সমস্যা থাকায় চিকিৎসকরা চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
মনোজ মিত্রের প্রয়াণে বাংলা সংস্কৃতি জগতে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তার অভিনয় দক্ষতা এবং থিয়েটারের প্রতি অবদান তাকে শুধু একজন অভিনেতাই নয়, বরং বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসের অংশ করে তুলেছিল। তার অভিনীত ‘বাঞ্ছারামার বাগান’ এবং ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ নাটকগুলো আজও মানুষের মনে অমলিন স্মৃতি হয়ে রয়েছে। মঞ্চে তিনি বাঞ্ছারাম চরিত্রে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন যে দর্শকরা চিরকাল সেই চরিত্রের জন্য তাকে স্মরণে রাখবেন।

সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত এই নট ও নাট্যকার শুধু মঞ্চেই নয়, সিনেমা ও টেলিভিশনেও নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। তার অসামান্য অভিনয়গুণ, তীক্ষ্ণ সংলাপপ্রক্ষেপণ, এবং সৃজনশীলতা থিয়েটার জগতে তাকে এক উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছে। অভিনেতা এবং পরিচালকরা তার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে তাদের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অধ্যায় হিসেবে গণ্য করেন। অভিনেতার মৃত্যুর পর, তার ভাই এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক অমর মিত্র সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে এই খবর জানিয়ে বলেন, “মনোজদার এই মৃত্যু শুধু আমাদের পরিবার নয়, গোটা বাংলার সংস্কৃতিকে শোকাহত করে তুলেছে। তিনি আমাদের শুধু পরিবারের অংশই ছিলেন না, বরং সমস্ত বাংলা থিয়েটারের প্রাণ ছিলেন।”
মনোজ মিত্রের প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন থিয়েটার জগতের অনেক বিশিষ্টজন। বিশিষ্ট নাট্যকার ও অভিনেতা শম্ভু মিত্র বলেন, “মনোজ মিত্র ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী প্রতিভাবান। তার মতো একজন অভিনেতা খুব কমই আসে। তিনি আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার স্মৃতি আমাদের কাছে চিরকালীন হয়ে থাকবে।” অভিনেত্রী অপর্ণা সেনও শোক প্রকাশ করে জানান, “মনোজ মিত্র আমাদের কাছে শুধু একজন থিয়েটার অভিনেতা ছিলেন না, তিনি আমাদের সংস্কৃতির এক নির্ভীক কণ্ঠস্বর ছিলেন।”
তার মৃত্যুতে শুধু বাংলা থিয়েটার নয়, বরং দেশের বিভিন্ন স্থানের থিয়েটার জগতে প্রভাব পড়বে। নতুন প্রজন্মের নাট্যকর্মীরা তার থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন এবং অনেকেই তার অভিনয় স্টাইল ও নাট্যকৌশলকে অনুকরণ করে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়েছিলেন। নাট্যকার হিসেবে মনোজ মিত্রের সৃষ্টিশীলতা এবং তার লেখনীর শক্তি বাংলা নাটককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল। তার রচিত নাটকগুলোতে সামাজিক ও মানবিক বিষয় নিয়ে যে পর্যালোচনা এবং প্রতিবাদ তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক এবং সমকালীন সমাজের জন্য শিক্ষণীয়।
ভবিষ্যতে তার অনুপস্থিতি বাংলা থিয়েটার এবং সিনেমা জগতের জন্য এক বিরাট ক্ষতি হিসেবে থেকে যাবে। তার অনুপস্থিতিতে থিয়েটার জগতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করা অত্যন্ত কঠিন। তার জীবন থেকে শিখে নতুন প্রজন্মের থিয়েটারকর্মীরা এগিয়ে যাবে, এই আশা রাখছেন অনেকেই।

তার শেষকৃত্যে প্রচুর অনুরাগী এবং সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মনোজ মিত্রের মৃত্যুতে থিয়েটারপ্রেমী জনগণের হৃদয়ে গভীর শোক এবং বেদনায় এক বিরাট ক্ষতি হিসেবে থেকে যাবে। আমরা আশা করি, তার সৃষ্টিকর্ম এবং থিয়েটারের প্রতি তার অবদান চিরকাল আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে এবং আমাদের সংস্কৃতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।