Factory closed overnight, workers in trouble : অন্ডালের চিতাডাঙ্গা এলাকায় রয়েছে একটি বেসরকারি স্টিল ওয়েজ ক্রেসিং কারখানা। প্রত্যেক দিনের মত সোমবার ও শ্রমিকরা কারখানার গেটের সামনে এলে দেখেন কারখানার গেটে তালা ঝোলানো। সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ, স্বাভাবিক কারণেই হতাশ হয়ে পড়েন কারখানার শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অভিযোগ কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের প্রায় দেড় মাসের বকেয়া বেতন না মিটিয়েই শ্রমিকদের কোন কিছু অগ্রিম না জানিয়ে হঠাৎ কারখানার গেটের তালা বন্ধ করে উধাও হয়েছেন। এই ঘটনা স্থানীয় এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং শ্রমিকদের পাশাপাশি তাদের পরিবারগুলোও গভীর সংকটে পড়েছে।
কারখানার শ্রমিক সিলু শর্মা, বাবুলাল টুডু, নেপাল মাঝিরা জানান মালিক কর্তৃপক্ষের নিজস্ব দ্বন্দ্বের কারণেই কারখানার এই অবস্থা। এই কারখানাটি তিনজন পার্টনার আছে বলে জানা যায়। তাদের মধ্য টাকা পয়সার লেনদেনের কারণেই বন্ধ হয়েছে কারখানা। তিন পার্টনারের নিজস্ব মতবিরোধের যাতাকলে পড়ে সমস্যায় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা। সিলু শর্মা বলেন, “আমরা জানতাম না আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে। হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা একদম দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমাদের পরিবারের কি হবে এখন, তা জানি না।”

বাবুলাল টুডু, যিনি কারখানায় প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করছেন, জানান, “আমাদের দেড় মাসের বকেয়া বেতন এখনও পাওয়া যায়নি। আমরা প্রতিদিন পরিশ্রম করতাম আমাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। এখন সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেছে।” নেপাল মাঝি বলেন, “কারখানার মালিকরা আমাদের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ রাখছেন না। আমরা এই অবস্থায় কিভাবে চলব, তা কেউ জানে না।”
এই ঘটনা স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে। শ্রমিকরা প্রতিদিনকার কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের আয়ের উৎস একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তাদের পরিবারগুলো তীব্র সংকটে পড়েছে। অনেক শ্রমিকই তাদের সন্তানদের স্কুলের খরচ চালাতে পারছেন না, এবং চিকিৎসার খরচ বহন করতে অক্ষম। এই কারখানার উপর নির্ভরশীল স্থানীয় দোকানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ শ্রমিকরা এখন আর ক্রয় করতে পারছেন না।
কারখানার এক কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, জানান, “তিনজন পার্টনারের মধ্যে অর্থনৈতিক বিবাদ এবং মতবিরোধের কারণেই কারখানাটি বন্ধ হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সমস্যার সমাধান করতে, কিন্তু কখন কারখানাটি পুনরায় চালু হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনীতিবিদরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। স্থানীয় এমপি জানিয়েছেন, “আমরা শ্রমিকদের সাথে আছি। আমরা চেষ্টা করছি যেন কারখানাটি দ্রুত পুনরায় চালু হয় এবং শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়।”

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এমন পরিস্থিতি যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য কারখানার মালিকদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসনকেও শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এই ঘটনা আমাদের সকলের জন্য একটি শিক্ষা। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিভাবে একগুচ্ছ মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক মতবিরোধ এবং পরিচালনাগত বিভ্রান্তি একটি সম্পূর্ণ সম্প্রদায়কে বিপদে ফেলে দিতে পারে। আমাদের সকলেরই একযোগে কাজ করতে হবে যেন এমন পরিস্থিতি আর না ঘটে। স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের উচিত এই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হওয়া।