Express hijacked, 104 passengers rescued: মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটল—জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাই করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মি (BLA)। ট্রেনটিতে ৪০০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে অনেক সামরিক কর্মীও ছিলেন। ছিনতাইয়ের পরই পুরো পাকিস্তানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, কারণ এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনা। পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনী সফল অভিযান চালিয়ে ১০৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেছে, এবং ২৭ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। যদিও পুরো ট্রেনটিকে মুক্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি, তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, জাফর এক্সপ্রেসটি বেলুচিস্তানের একটি দুর্গম এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় একদল অস্ত্রধারী বিদ্রোহী ট্রেনটি থামিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে। বিদ্রোহীরা ট্রেনে উঠে সেনা সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের খুঁজতে থাকে এবং বেশ কয়েকজন যাত্রীকে বন্দি করে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের রেলওয়ে বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, “এই হামলাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং এটি দেশের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি”।
হাইজ্যাক হওয়ার খবর পেয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত অভিযান শুরু করে। তারা বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যেখানে ২৭ জন বিদ্রোহী নিহত হয় এবং ১০৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। যাত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামিদ খান বলেন, “আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি এবং জিম্মিদের নিরাপদে মুক্ত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বিদ্রোহীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না”।বালুচ লিবারেশন আর্মি (BLA) বহু বছর ধরে পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দাবি করছে, বেলুচিস্তানকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে হবে এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করতে হবে। এই হামলা সম্ভবত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার একটি কৌশল ছিল।
একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানান, “বেলুচ লিবারেশন আর্মি দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ট্রেন হাইজ্যাকের মতো ঘটনা খুবই বিরল। এটি স্পষ্ট যে, তারা এখন আরও বড় মাত্রার হামলার পরিকল্পনা করছে”।এই ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ ভারতের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, “বালুচ বিদ্রোহীরা ভারতের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছে এবং আফগানিস্তান তাদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে”। তবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য ভারতকে দায়ী করা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
পাকিস্তানের সংবাদ চ্যানেল ডন টিভির এক উপস্থাপক সানাউল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেন, BLA কি আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্ঠী থেকে সাহায্য পাচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, “এটা ভারত করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভারত তাদের আর্থিক ও কৌশলগত সাহায্য দিচ্ছে। তালেবান সরকার তাদের আশ্রয় দিচ্ছে”।
তবে এই দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি, যা এই অভিযোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।এই ঘটনার পর বেলুচিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা কখনো ভাবতে পারিনি যে, আমাদের চলন্ত ট্রেনও নিরাপদ নয়! সরকার কি আমাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে?”আরেকজন যাত্রী, যিনি ট্রেনে ছিলেন, বলেন, “আমরা পুরোপুরি আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম। বন্দুকধারীরা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করছিল। আমি ভেবেছিলাম, আজ আমার শেষ দিন!”