Empty Santiniketan sways: দোল মানেই শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসবের রঙিন আবহ, বাউলগান, আবিরের খেলা আর দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ঢল। কিন্তু এ বছর একেবারেই অন্য ছবি ধরা পড়ল বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গণে। রঙিন আবিরের উচ্ছ্বাসের বদলে ছড়িয়ে ছিল এক অদ্ভুত নীরবতা। শান্তিনিকেতন, যেখানে একসময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বপ্ন দেখেছিলেন এক উন্মুক্ত শিক্ষাঙ্গনের, সেই শহরেই এবার দোলের দিন দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরে বসন্ত উৎসবের চিরাচরিত চিত্র উধাও হয়ে গিয়েছে, তার বদলে প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা ও পুলিশের নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো।বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এবং ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাওয়া শান্তিনিকেতনের পরিবেশ যেন ঠিক থাকে, সেই কারণেই এবারের বসন্তোৎসবে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও, সোনাঝুরি খোয়াই এবং বোলপুরের বিভিন্ন এলাকায় দোলের আমেজ বজায় ছিল। বোলপুরের রতনপল্লী, জামবুনি, কঙ্কালীতলা সহ বিভিন্ন জায়গায় দোল উৎসব উদযাপন করা হয়েছে।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পাওয়ার পর শান্তিনিকেতনের গৌরব যেন ক্ষুণ্ণ না হয়, সে কারণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতীর এক আধিকারিক বলেন, “বসন্তোৎসব শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য, কিন্তু তা যেন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হয়, সেটাই মূল লক্ষ্য। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”তবে অনেকেই মনে করছেন, শান্তিনিকেতনের প্রাণবন্ত বসন্তোৎসবের এই পরিবর্তন ভবিষ্যতে পর্যটনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমীর বাগচী বলেন, “প্রতি বছর বসন্তোৎসবে হাজার হাজার পর্যটক আসেন, যা আমাদের ব্যবসার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবারে উৎসব ফিকে হওয়ায় ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে।’’
অন্যদিকে, কিছু পর্যটক এই সিদ্ধান্তে হতাশ হলেও অনেকেই বুঝতে পারছেন প্রশাসনের এই পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা। এক পর্যটক বলেন, “আমরা শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব দেখতে এসেছিলাম, কিন্তু এখানে কিছুই হচ্ছে না। তবে নিরাপত্তার কারণেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”এদিকে, সোনাঝুরির জঙ্গলে পর্যটকদের জন্য কোনো বাধা না থাকায় সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বাউলগান, খোল-করতালের শব্দ আর আবিরের রঙে ভেসে গিয়েছিল সোনাঝুরি ও আশপাশের এলাকা।বসন্তোৎসব না হলেও শান্তিনিকেতনের আকাশ-বাতাসে বসন্তের সুবাস ঠিকই ছিল। কবিগুরুর ছায়ায় গড়ে ওঠা এই শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান কি ভবিষ্যতে তার পুরনো ঐতিহ্যে ফিরতে পারবে, নাকি নতুন নিয়মের ছায়ায় বদলে যাবে বসন্তোৎসবের রূপ? সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়।