Eat raw mangoes daily to avoid summer heatstroke : গ্রীষ্ম মানেই প্রখর রোদ, তীব্র গরম আর ঘাম ঝরানো দিন। এই দাবদাহ থেকে স্বস্তি পেতে আমরা নানা ধরনের ঠান্ডা পানীয়, লাচ্ছি, ফলের রস খাই। কিন্তু একটা জিনিস বহু বছর ধরেই আমাদের শৈশব থেকে গ্রীষ্মকালের অবিচ্ছেদ্য অংশ— কাঁচা আম। জানেন কি কাঁচা আম শুধু স্বাদের জন্য নয়, আমাদের শরীরকেও গ্রীষ্মের নানা সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে? গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, সানস্ট্রোক প্রতিরোধ, এমনকি হজমের সমস্যাও দূর করতে পারে কাঁচা আম। তাই প্রচণ্ড গরমে একটু কাঁচা আম খেলে শুধু স্বাদই নয়, মিলতে পারে স্বাস্থ্যকর উপকারও।
কাঁচা আমের গুণাগুণ: ছোট একটা ফল, অনেক বড় উপকার
আমের কাঁচা রূপ আমাদের মজার আচার, আমপোড়া শরবত, কিংবা চাটনির সঙ্গে খাওয়া হলেও এর স্বাস্থ্যগুণ অনেকেরই অজানা। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে। এর সঙ্গে রয়েছে লুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন নামক দুটি উপাদান, যা চোখের রেটিনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা নিয়মিত কাঁচা আম খান, তারা সানস্ট্রোকের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। কাঁচা আম শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতেও সাহায্য করে। তাই গ্রীষ্মে একটু কাঁচা আমের শরবত খাওয়া শরীরের জন্য কার্যকর হতে পারে।
গরমে কাঁচা আম কেন খাবেন?
১. সানস্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকর:
তীব্র গরমে সানস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘক্ষণ রোদের মধ্যে থাকলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঘাম ঝরে শরীর থেকে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়। কাঁচা আমের শরবত এই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। এক গ্লাস ঠান্ডা আমপোড়া শরবত খেলে সঙ্গে সঙ্গে শরীর ঠান্ডা হয় এবং হারিয়ে যাওয়া ইলেকট্রোলাইট পুনরুদ্ধার হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইরে বেরোনোর আগে বা ঘরে ফিরে এক গ্লাস কাঁচা আমের শরবত গ্রীষ্মকালে বেশ উপকারী।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়িয়ে শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে। গরমের সময় জলবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি থাকে। তাই শরীরকে এই ধরনের রোগ থেকে বাঁচাতে কাঁচা আম খাওয়া দারুণ কার্যকর।
৩. হজমশক্তি বাড়ায়:
গ্রীষ্মকালে অনেকেরই হজমের সমস্যা হয়। বদহজম, গ্যাস, কিংবা পেটের অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা আম অত্যন্ত উপকারী। কাঁচা আমে রয়েছে এমন কিছু এনজাইম, যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে শরীর থেকে টক্সিন দূর করে।
৪. মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:
কাঁচা আমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি মুখের নানা সমস্যার সমাধান করতে পারে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ এই ফলটি মাড়ির সমস্যা, স্কার্ভি, মুখ থেকে রক্তপাতের মতো সমস্যা দূর করে এবং মুখের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
কাঁচা আমের আচার, শরবত, আর চাটনি: বাঙালির পছন্দের তালিকায় সবার উপরে
বাঙালির রান্নাঘরে কাঁচা আমের নানা পদ বছরের পর বছর ধরে জায়গা দখল করে রয়েছে। গ্রীষ্ম এলেই মায়েরা তৈরি করেন আমের আচার। মিষ্টি, টক, ঝাল— নানা স্বাদের আচার বানানোর জন্য কাঁচা আমের জুড়ি মেলা ভার। শুধু আচারই নয়, আমপোড়া শরবত, কাঁচা আমের চাটনি, কিংবা আম দিয়ে তৈরি নানা পানীয় গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে বেশ কার্যকর। ছোট থেকে বড়— সবারই এই খাবারগুলো বেশ প্রিয়।
নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া এবং জনপ্রিয়তা
কাঁচা আমের জনপ্রিয়তা শুধু বাস্তবেই নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ চোখে পড়ে। আমের আচার কিংবা আমপোড়া শরবতের ছবি পোস্ট করলে হাজার হাজার লাইক আর শেয়ার পড়ে। কেউ লেখেন, ‘‘আমপোড়া শরবতের স্বাদ মনে করিয়ে দেয় শৈশবের দিনগুলোকে,’’ তো কেউ লেখেন, ‘‘গরমের সঙ্গে লড়াইয়ে কাঁচা আমের শরবতই সেরা।’’
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ডায়েটিশিয়ান সোমা সেন জানালেন, ‘‘গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে বাঁচতে কাঁচা আম খাওয়া অত্যন্ত ভালো অভ্যাস। কাঁচা আম শুধু শরীর ঠান্ডা করে না, বরং ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতিও পূরণ করে। সানস্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত এক গ্লাস আমপোড়া শরবত খাওয়া যেতে পারে।’’ অন্যদিকে পুষ্টিবিদ রাজেশ মণ্ডল জানালেন, ‘‘গ্রীষ্মে মুখের যে সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়, সেগুলোর সমাধানে কাঁচা আম অত্যন্ত কার্যকর। কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা মাড়ির রক্তপাত এবং স্কার্ভির মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।’’
উপসংহার
সাধারণ ফল মনে হলেও কাঁচা আমের উপকারিতা অসাধারণ। এটি শুধু স্বাদের জন্য নয়, আমাদের শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মে সানস্ট্রোক থেকে শুরু করে হজমের সমস্যা কিংবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মতো নানান কাজে কাঁচা আম কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই এই গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে পাতে রাখুন কাঁচা আম।