Friday, May 23, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যশরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে খান এই জিনিস

শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে খান এই জিনিস

Eat palm kernels to maintain water balance in the body. : কনকনে রোদ, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, শরীর জ্বালাপোড়া—এই সবই এখন গ্রীষ্মকালের নিত্যসঙ্গী। বাইরের তাপমাত্রা কখনও কখনও ৪০ ডিগ্রির গণ্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে, ঘাম ছুটছে পথেঘাটে, কাজের ফাঁকে, এমনকি ঘরের মধ্যেও। এই ভয়ঙ্কর গরমে সবচেয়ে বড় শত্রু ডিহাইড্রেশন। শরীর থেকে জল বেরিয়ে গেলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে যায়, দেখা দেয় নানা জটিলতা—যেমন ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, আলসেমি, এমনকি জ্বর বা হিটস্ট্রোক পর্যন্ত। আর তাই চিকিৎসকরা বারবার বলছেন, গরমে শরীর হাইড্রেটেড রাখা খুব জরুরি। জল তো খেতে হবেই, তার পাশাপাশি এমন কিছু খেতে হবে যাতে শরীর ঠান্ডা থাকে, জল ধরে রাখতে পারে এবং একযোগে পুষ্টিও মেলে। আর সেই তালিকায় একেবারে সবার উপরে নাম উঠে এসেছে আমাদের চিরচেনা, চিরস্বাদ তাল শাঁসের।তালের শাঁস, অর্থাৎ তাল ফলের নরম রসালো অংশটি, শুধু রসনাতৃপ্তির জন্যই নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মতভাবেও এটি গরমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পথ্য। খুব কম সময়ের জন্য বাজারে পাওয়া এই ফলটি যতটা সুস্বাদু, তার থেকে ঢের বেশি উপকারী। আর এও একটা সত্যি, বাঙালির গ্রীষ্মকাল মানেই তাল খাওয়ার স্মৃতি—চোখ বুজলেই যেন ভেসে ওঠে তালশাঁস খাওয়ার শৈশবের দুপুর।

চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, তালের শাঁসে জলীয় উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এটি ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে, ক্লান্তি কমায়, এবং শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। শুধু তাই নয়, এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।তালের শাঁসের আর একটি বড় গুণ, এতে ক্যালরির পরিমাণ অত্যন্ত কম। ফলে যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডায়েটে আছেন, তাঁদের জন্যও এটি এক উপযুক্ত খাদ্য। রোজ সকালে খালি পেটে তাল শাঁস খেলে হজমের উন্নতি ঘটে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমে এবং পেট ঠান্ডা থাকে। এছাড়া যারা দীর্ঘদিন আলসার বা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য তাল শাঁস এক প্রাকৃতিক ওষুধ।

61BFUAdRM1L. AC UF894,1000 QL80

চিকিৎসক ডা. শুভেন্দু পাল (জেনারেল ফিজিশিয়ান, শিলিগুড়ি) জানান, “গ্রীষ্মকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ভাইরাল সংক্রমণ, হিট এক্সশসন, ত্বকের নানা ইনফেকশন বাড়ে। তাল শাঁসের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ, বি ও সি শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায় এবং লিভারের কর্মক্ষমতা ঠিক রাখে। পাশাপাশি এতে থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার ইত্যাদি খনিজ উপাদান হাড় শক্ত করে, দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, রক্তশূন্যতা কমায় এবং শরীরের সামগ্রিক ভারসাম্য বজায় রাখে।”শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, তালের শাঁস ব্যবহার করা যায় সৌন্দর্যচর্চাতেও। গরমে যাঁদের মুখে র‍্যাশ, ঘামাচি, ব্রণ কিংবা ত্বকের জ্বালাভাব দেখা দেয়, তাঁরা তাল শাঁস থেঁতো করে সরাসরি মুখে লাগাতে পারেন। এটি ত্বকের জ্বালা কমিয়ে আনে, ব্রণের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে দেয় এক ঠান্ডা আরামদায়ক অনুভূতি। অনেক বেসরকারি আয়ুর্বেদ চিকিৎসকও গরমকালে তালের শাঁস মুখে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।

তবে যেমন বলা হয়, “অতিরিক্ত ভালও খারাপ,” তালের শাঁস খেলেও তা যেন সঠিক মাত্রায় হয়। অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, গ্যাসের প্রবণতা বাড়তে পারে বা শরীর অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে, যা আবার জ্বর বা গলা ব্যথার কারণ হতে পারে।এছাড়া মনে রাখতে হবে, বাজার থেকে তাল কিনে তার শাঁস সংগ্রহ করার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা খুব জরুরি। অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ রোদে পড়ে থাকা তাল ছাঁচ ধরতে পারে বা পোকার উপদ্রব থাকতে পারে। তাই তাল কেনার আগে ভালো করে দেখে নিতে হবে।শিলিগুড়ির নিউমার্কেটের ফল বিক্রেতা রঞ্জন পাল বলেন, “এই সময় তাল শাঁসের খুব চাহিদা। সকাল থেকেই লাইন পড়ে যায়। অনেকে কিলো কিলো করে কিনে নিয়ে যান। আমরা যতটা সম্ভব ফ্রেশ তাল রাখার চেষ্টা করি, যাতে পচা না হয়।”

এই মুহূর্তে গরম যত তীব্র হচ্ছে, তালের শাঁসের প্রয়োজনও বাড়ছে। শহরের স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ এখন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই ফল রাখছেন। কেউ সরবত বানিয়ে খাচ্ছেন, কেউ বা ঠান্ডা দুধে মিশিয়ে পুষ্টিকর ড্রিংক তৈরি করছেন। কেউ কেউ আবার হালকা চিনি বা নারকেলকোরার সঙ্গে মিশিয়ে তাল শাঁসের শীতল মণ্ড বানিয়ে নিচ্ছেন বাড়িতেই।তালের শাঁস আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন রক্ষা করে, তেমনি মানসিক প্রশান্তিও দেয়। প্রচণ্ড গরমের দিনে শরীরকে ভিতর থেকে ঠান্ডা করে দেয়, ঠিক যেমন একটা ছায়াঘেরা তালের গাছ রোদের মধ্যে শরীরের গায়ে পড়া আলোকে দূরে সরিয়ে শান্তি দেয়।তাই এই গরমে শরীরকে জলীয় ভারসাম্যে রাখতে, প্রতিদিন সুস্থ ও সতেজ রাখতে, অবশ্যই তাল শাঁস খান—তবে পরিমাণমতো, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে। কারণ আপনি সুস্থ থাকলে, পরিবার সুস্থ থাকবে। আর এটাই তো চরম গ্রীষ্মে সত্যিকারের বিজয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments