Tuesday, September 2, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশই-সিম প্রতারণা, এক ক্লিকেই সর্বস্বান্ত! সতর্কবার্তা কেন্দ্রের

ই-সিম প্রতারণা, এক ক্লিকেই সর্বস্বান্ত! সতর্কবার্তা কেন্দ্রের

E-SIM fraud, gone with one click! Warning center : দেশের সাধারণ মানুষ যখন দিনভর জীবিকার চাপে ক্লান্ত, রাতে বাড়ি ফিরে মোবাইল ফোনে খবর পড়ে বা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলে একটু শান্তি খুঁজে পান, তখনই অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে এক অদৃশ্য বিপদ—সাইবার প্রতারণা। আগে আমরা দেখেছি ব্যাঙ্ক ওটিপি প্রতারণা, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, কিউআর কোড স্ক্যাম, কিন্তু এখন নতুন ছদ্মবেশে হাজির হয়েছে এক চরম মারাত্মক ফাঁদ—ই-সিম প্রতারণা। আর এই প্রতারণা এতটাই ভয়ঙ্কর যে এখানে ব্যাঙ্ক ডিটেলস বা ওটিপি দেওয়ারও প্রয়োজন হয় না। শুধু একবার ভুল করে যদি ক্লিক করে বসেন, তবে মুহূর্তের মধ্যে আপনার ফোন চলে যাবে প্রতারকদের নিয়ন্ত্রণে, এমনকি খালি হয়ে যেতে পারে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ অনেকেই এখনো বুঝতেই পারছেন না এই “ই-সিম” ব্যাপারটা আসলে কী, আর এই ফাঁদ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ই-সিম আসলে একধরনের ডিজিটাল সিম, যা আপনার ফোনের ভেতরেই ইনস্টল হয়ে যায়। আলাদা করে এটিকে বের করা যায় না। স্মার্টফোন বা স্মার্টওয়াচ ব্যবহারকারীরা জানেন, এখন অনেক বড় বড় কোম্পানি ই-সিম ব্যবহার করার সুযোগ দিচ্ছে, যাতে প্লাস্টিক সিম কার্ড বহনের ঝামেলা না থাকে। কিন্তু সুবিধার পাশাপাশি এই ডিজিটাল সিমই আজ হয়ে উঠছে দুঃস্বপ্নের কারণ। প্রতারকরা প্রথমে ফোন করে নিজেদের মোবাইল কোম্পানির কর্মী পরিচয় দেয়, তারপর বলে—“স্যার/ম্যাডাম, আপনার ই-সিম আপগ্রেড করতে হবে, আমরা এখনই একটি লিঙ্ক পাঠাচ্ছি, সেটি ক্লিক করলেই কাজ হয়ে যাবে।” ব্যস্ত জীবনের তাড়াহুড়োয় বা অসতর্কতায় অনেকেই লিঙ্কে ক্লিক করে ফেলছেন, আর তাতেই খুলে যাচ্ছে সর্বনাশের দরজা। সাইবার এক্সপার্টদের মতে, লিঙ্কে ক্লিক করার মুহূর্তে আপনার মোবাইলে ম্যালওয়্যার ঢুকে পড়ছে, যা ফোনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতারকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এরপর তারা শুধু আপনার হোয়াটসঅ্যাপ বা এসএমএস পড়ছে না, সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ইউপিআই, এমনকি ইমেল পর্যন্ত হ্যাক করে নিচ্ছে।

গত কয়েক মাসেই কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, ব্যাঙ্গালোর থেকে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। কলকাতার বেলেঘাটার এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, “আমি ভেবেছিলাম মোবাইল কোম্পানির আসল কল এসেছে। লিঙ্কে ক্লিক করতেই নেটওয়ার্ক চলে যায়। একটু পরেই দেখি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা উধাও।” একই অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন হাওড়ার এক স্কুলশিক্ষিকা, যিনি বলেন—“প্রথমে ফোন কেটে দেওয়ার পরও পরপর মেসেজ আসতে থাকে। তারপর হঠাৎ ফোনে সিগন্যাল চলে যায়। আমি সন্দেহ হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কে ফোন করি। তাতেই অল্পের জন্য বাঁচি।” এই অভিজ্ঞতাগুলো প্রমাণ করছে যে সাধারণ মানুষের অজান্তেই তারা বড় ফাঁদের শিকার হচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা জারি করেছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনও অপারেটর কখনও ফোন করে গ্রাহককে ই-সিম অ্যাক্টিভেট করার জন্য লিঙ্ক পাঠায় না। যদি এ ধরনের ফোন পান, সঙ্গে সঙ্গে কেটে দিন এবং নিকটস্থ থানায় জানান। পাশাপাশি বলা হয়েছে, হঠাৎ যদি ফোনে নেটওয়ার্ক চলে যায় তবে এক মুহূর্ত দেরি না করে মোবাইল অপারেটর ও ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এভাবেই প্রতারকরা ফোনের কন্ট্রোল নিয়ে নেয়। সাইবার বিশেষজ্ঞ দেবাশিস ভট্টাচার্য জানালেন, “মানুষকে এখনই সজাগ হতে হবে। প্রতারকরা দিন দিন নতুন নতুন কৌশল আনছে। আগে ওটিপি চাইত, এখন শুধু একটি ক্লিকেই পুরো খেলা শেষ। তাই অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করা মানেই অন্ধকার গহ্বরে ঝাঁপ দেওয়া।”

এই প্রতারণার প্রভাব শুধু শহুরে নয়, গ্রামীণ এলাকাতেও পড়তে শুরু করেছে। কারণ আজকাল গ্রামে গ্রামে মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন, ইউপিআই দিয়ে লেনদেন করছেন। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের মানুষ পর্যন্ত এই ফাঁদের শিকার হচ্ছেন। এর ফলে শুধু টাকা হারানোই নয়, মানসিক আঘাতও লাগছে। হুগলির গুড়াপের এক চাষি বলেন, “আমরা তো আর এত বুঝি না। ছেলে বলেছিল গুগল পে দিয়ে টাকা নাও। এখন তো ফোনে কিছু আসলেই ভয় লাগছে।” এই ভয় সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করছে, যা দেশের ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্নে বড় আঘাত।

এই সময়ে আরেকটি আশঙ্কার খবরও সামনে এসেছে—বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, যার ফলে রাজ্যজুড়ে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগামী কয়েক দিনে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়, অন্যদিকে সাইবার দুর্যোগের আতঙ্ক—মানুষের জীবন যেন চারদিকে ঘিরে ফেলেছে বিপদের ছায়া। আবহাওয়াবিদ সৌম্য মজুমদার বললেন, “এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, নেটওয়ার্ক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আর নেটওয়ার্ক না থাকলেই প্রতারকরা সুযোগ নেয়।” অর্থাৎ প্রকৃতি আর প্রতারণা দুই দিক থেকেই মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।

ভবিষ্যতে এই প্রতারণা আরও বেড়ে গেলে কী হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ডিজিটাল সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সরকারের উচিত হবে সাধারণ মানুষের জন্য সাইবার সচেতনতা কর্মসূচি আরও বাড়ানো, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। একইসঙ্গে মোবাইল অপারেটরদেরও দায়িত্ব নিতে হবে যাতে গ্রাহকরা এ ধরনের প্রতারণার শিকার না হন। আইন বিশেষজ্ঞ অর্ণব সেন জানালেন, “আজকের দিনে সাইবার অপরাধ আর সাধারণ অপরাধের মধ্যে তফাৎ নেই। এগুলো সরাসরি মানুষের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করছে। তাই দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা জরুরি।”

শেষ পর্যন্ত বলা যায়, এই প্রতারণা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সচেতনতা। অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক করবেন না, সন্দেহজনক কল এলে সঙ্গে সঙ্গে কেটে দিন, আর যদি কখনও নেটওয়ার্ক হঠাৎ চলে যায় তবে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। মনে রাখবেন, প্রতারকরা যতই বুদ্ধিমান হোক না কেন, আমাদের সতর্কতাই পারে তাদের খেলায় ভাঁটা আনতে। আজকের দিনে টাকা যত বড় সম্পদ, তার থেকেও বড় সম্পদ আমাদের সতর্কতা। তাই এই বার্তাই ছড়িয়ে দিতে হবে—সতর্ক থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments