Saturday, April 12, 2025
Google search engine
HomeDurgapujaদুর্গা পুজোয় থিম এবার রাম মন্দির ইসলামপুরে

দুর্গা পুজোয় থিম এবার রাম মন্দির ইসলামপুরে

Durga Puja Timthin Ram Mandir in Islampur:ইসলামপুরের পুজোর ইতিহাসে এবার এক নতুন মাত্রা যোগ হতে চলেছে। প্রতি বছর দুর্গা পুজোকে ঘিরে ইসলামপুর আদর্শ সংঘের থিম পুজো নজর কাড়ে শহরবাসীকে। আর এবার তাদের ৬০তম বর্ষে পা দিতেই পূজোর থিম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে রাম মন্দির। অযোধ্যার রাম মন্দিরের আদলে বিশালাকার প্যান্ডেল তৈরি করছে এই পুজো কমিটি, যা ইতিমধ্যেই এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

আদর্শ সংঘের পুজো বরাবরই ভিন্ন ঘরানার থিমের জন্য পরিচিত। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবারই তারা এমন কিছু থিম নিয়ে আসে, যা সমাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কলকাতার দক্ষ শিল্পীদের প্রায় তিন মাসের নিরলস পরিশ্রমে গড়ে উঠছে এই বিশাল রাম মন্দিরের প্যান্ডেল। আদর্শ সংঘের পুজো কমিটির সম্পাদক দেবাংসু দাস জানান, “এই মন্দিরটি পুরোপুরি অযোধ্যার রাম মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে। আমরা চাই, ইসলামপুরের মানুষ অযোধ্যার রাম মন্দিরের সৌন্দর্য্য এবং ঐতিহ্যের স্বাদ এখানেই অনুভব করুন।”

Capture

পুজোর থিম হিসেবে রাম মন্দিরকে বেছে নেওয়ার পেছনে শুধু সৌন্দর্য নয়, এর সঙ্গে রয়েছে ধর্মীয় সংহতি ও ভক্তির একটি মেলবন্ধন। প্রতিমা শিল্পী কৃষ্ণনগরের সুব্রত পাল বলেন, “আমরা দেবী দুর্গার মূর্তিতে এমন কিছু আলোকছটা আনবো, যা রাম মন্দিরের সঙ্গে মিল রেখে সম্পূর্ণ পরিবেশকে মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলবে।”

এবারের পুজো নিয়ে আরও চমক রয়েছে। আদর্শ সংঘের পূজা কমিটির সদস্যরা জানান, “এই বছর পুজো মণ্ডপে স্পটলাইট এবং পালকোর আলো ব্যবহার করা হবে, যা মণ্ডপটি রাতের বেলায় এক আলাদা সৌন্দর্য এনে দেবে।” বিশেষত শিশুদের জন্য থাকছে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা, যাতে ছোটরাও পূজোর আনন্দে মেতে উঠতে পারে। পূজা কমিটির আরেক সদস্য বলেন, “আমরা চাই ছোটদের আনন্দের টানেই বড়দের ছুটতে হোক মণ্ডপে।”

ইসলামপুরের বৃহৎ বাজেটের পুজোগুলোর মধ্যে আদর্শ সংঘের পুজো অন্যতম। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এটি ছোট বাজেটের পুজো হলেও, সময়ের সাথে সাথে এটি একটি বিগ বাজেটের পুজোতে পরিণত হয়েছে। এবার তাদের পুজোর বাজেট ৫০ লাখ টাকা, যা ইসলামপুরের পুজো ইতিহাসে এক নতুন রেকর্ড। পুজো কমিটি এই বিশাল বাজেটের পুজো আয়োজন করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং তারা আশা করছে যে প্রতিবারের মতো এবারও ভিড় সামলাতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োগ করতে হবে।

এবারের উৎসবের সূচনা মহালয়া থেকেই হচ্ছে। পূজার মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে পঞ্চমী থেকে। প্রতিদিনই থাকছে স্থানীয় ও বহিরাগত শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশেষ করে যেসব অনাথ শিশুরা নতুন পোশাক কিনতে পারবে না, তাদের জন্য নতুন পোশাক দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পুজো কমিটি।

স্থানীয়দের মতে, এই রাম মন্দির থিমের পুজো তাদের জন্য এক বিরাট অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। ইসলামপুরের বাসিন্দা রাজীব ঘোষ বলেন, “এত বড় একটি প্যান্ডেল আমরা আগে কখনও দেখিনি। অযোধ্যার রাম মন্দিরের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে এটি আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করবে।” ইসলামপুরের আরেক বাসিন্দা, গৃহবধূ সুজাতা মণ্ডল বলেন, “প্রতিবছর পুজো মানেই আনন্দ, কিন্তু এবার এই রাম মন্দিরের থিম আমাদের ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক অনুভূতিতে এক অন্য মাত্রা এনে দেবে।”

পুজোর প্রসঙ্গে দেবাংসু দাস আরও বলেন, “আমাদের পুজোর মূল উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় সংহতি বজায় রাখা এবং সকল ধর্মের মানুষকে একত্রে পুজোর আনন্দে শামিল করা। রাম মন্দির শুধুমাত্র একটি মন্দির নয়, এটি ভক্তি, ঐতিহ্য এবং মানুষের মাঝে বন্ধন সৃষ্টি করে। আমরা আশা করি ইসলামপুরের সকল মানুষ এই পুজোতে যোগদান করবেন এবং এই রাম মন্দিরের থিম তাদের হৃদয় স্পর্শ করবে।”

Capture 1

ইসলামপুরের আদর্শ সংঘের পুজো এবার নতুন ইতিহাস তৈরি করতে চলেছে। অযোধ্যার রাম মন্দিরের আদলে তৈরি এই বিশালাকার প্যান্ডেল শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যই নয়, আশেপাশের এলাকা থেকেও প্রচুর মানুষকে আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পুজো কমিটির একজন প্রবীণ সদস্য বলেন, “আমরা চাই এই পুজো একটি উদাহরণ হয়ে থাকুক এবং ভবিষ্যতে ইসলামপুরের পুজো নিয়ে সারা রাজ্যে আলোচনা হোক।”

ইসলামপুরের এই পুজোকে ঘিরে মানুষের মধ্যে এখন চরম উত্তেজনা। বিশেষ করে এবারের রাম মন্দিরের থিমকে কেন্দ্র করে এলাকায় বহু পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই থিম পুজো ইসলামপুরের অর্থনীতিতেও একটি নতুন দিক খুলে দিতে পারে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, এই পুজোর সময় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডেও চাঙ্গা ভাব দেখা দেবে। এছাড়া পুজোর সময় স্থানীয় ছোট শিল্পীদেরকেও প্রদর্শনীর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের আর্থিক অবস্থাকে মজবুত করবে।

ইসলামপুর আদর্শ সংঘের এই বিশাল আয়োজন শুধু এই শহরের জন্য নয়, সারা রাজ্যের মানুষদের কাছে একটি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠবে। এবার পুজোর সময় ইসলামপুরে থাকছে আরও কিছু চমক, যার মধ্যে অন্যতম স্থানীয় ও বহিরাগত শিল্পীদের সমন্বয়ে প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যারা পুজোর আনন্দে মেতে উঠবেন তারা যেন এই পুজোর সাথে নিজেদের জড়িয়ে রাখতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করেছে পুজো কমিটি।

এভাবে এই পুজোর মাধ্যমে ইসলামপুরের আদর্শ সংঘ একটি নতুন ইতিহাস তৈরি করছে, যা আগামী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকবে। রাম মন্দিরের এই থিম ইসলামপুরের পুজো উৎসবকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাবে, যা শহরের মানুষের মনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments