Saturday, April 12, 2025
Google search engine
HomeDurgapuja১০০ ফুটের দুর্গা মুর্তি এবার সোদপুরে 

১০০ ফুটের দুর্গা মুর্তি এবার সোদপুরে 

Durga idol of 100 feet now in Sodpur : সোদপুরের শহিদ কলোনি এবার দুর্গা পুজোয় এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছে। বাংলার সবচেয়ে বড় দুর্গা প্রতিমা এবার এই অঞ্চলের মানুষকে উপহার দিতে চলেছে। ১০০ ফুটের বিশালাকারের দুর্গা মূর্তি তৈরি করে শহরের উপকন্ঠে এই পুজো ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পুজোতে এমন বিশাল আকৃতির প্রতিমা তৈরি করার ঘটনা বেশ বিরল, আর সেই বিরল ঘটনার সঙ্গী হচ্ছে সোদপুরের মানুষ।

প্রতিবছরই দুর্গা পুজোতে নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা দেখা যায় বিভিন্ন পুজো কমিটির মধ্যে, কিন্তু এবার সোদপুরের শহিদ কলোনি পূজা কমিটি নিজেদের ৭৫ তম বর্ষে বিশেষ কিছু করার পরিকল্পনা করেছিল। এই পরিকল্পনা থেকেই উঠে আসে বিশালাকারের দুর্গা মূর্তির ধারণা। পুজো কমিটির সদস্য সুমন ঘোষ বলেন, “আমাদের পুজো এবার হীরক জয়ন্তীতে পদার্পণ করল, তাই আমরা চেয়েছিলাম এমন কিছু করতে, যা আগে কেউ করেনি। আর সেই চিন্তা থেকেই আমরা এই বিশাল মূর্তির ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করি।”

১০০ ফুটের এই দুর্গা মূর্তি তৈরি হচ্ছে মূলত ফাইবার দিয়ে, আর পুরো মূর্তিটি দাঁড়িয়ে থাকবে এক বিশাল মণ্ডপের মধ্যে, যার উচ্চতা হবে ১২০ ফুট। এই মণ্ডপের ডিজাইন ও নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছেন সোদপুরের স্থানীয় শিল্পী চিরঞ্জিত দাস। তিনি বলেন, “এই মণ্ডপটি তৈরি করতে আমাদের প্রায় চার মাস লেগেছে। মূর্তির পাশাপাশি মণ্ডপের ভেতরেও চমকের অভাব থাকবে না। আমরা চাই মানুষ যেন এই পুজোয় এসে এক আলাদা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যান।”

durga mondop cover

সোদপুরের এই পুজো নিয়ে ইতিমধ্যেই স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহের অভাব নেই। শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, আশেপাশের এলাকার মানুষও এই বিশাল মূর্তি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এলাকাবাসী সুজিত মিত্র বলেন, “এত বড় মূর্তি আমরা আগে কখনও দেখিনি। শহিদ কলোনির পুজো এবার আমাদের গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।” পুজো কমিটির আরেক সদস্য রাকেশ মণ্ডল বলেন, “এই মূর্তি শুধু আমাদের এলাকাকে নয়, গোটা কলকাতার মানুষের মন জয় করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

প্রতিমার পাশাপাশি সোদপুরের এই পুজোতে আরও থাকছে নানা আকর্ষণ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে আলোকসজ্জা, যা এই মণ্ডপ ও মূর্তির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এছাড়া, স্থানীয় ও বহিরাগত শিল্পীদের দ্বারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হবে। পুজোর সময় ছোট বাচ্চাদের জন্য বিশেষ বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে পরিবারসহ সকলেই পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।

এই বিশাল মূর্তি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনও বিশেষ নজর রাখছে। পুজোর সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে বলে জানা গিয়েছে। প্রতিদিনের ভিড় সামলানোর জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিযুক্ত করা হবে। স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, “এত বড় মূর্তির পুজো এবার প্রথম হচ্ছে, তাই আমরা চাইছি মানুষজন যাতে পুজো মণ্ডপে এসে নিরাপদে প্রতিমা দর্শন করতে পারেন।”

শহরের উপকন্ঠে এই বিশাল দুর্গা প্রতিমা তৈরির খবর ইতিমধ্যেই আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও মানুষ আসবেন এই মূর্তি দেখতে। রানাঘাটের কামালপুরেও ১১২ ফুটের প্রতিমা তৈরি হলেও, অনুমতি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেখানে পুজো নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে সোদপুরের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এমন কোনও সমস্যা নেই, এবং পুজোর প্রস্তুতিও তুঙ্গে।

বিভিন্ন পুজো কমিটির মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা সত্ত্বেও, সোদপুরের এই বিশাল মূর্তি তাদের পুজোকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশাবাদী পুজো কমিটির সদস্যরা। প্রতিমার এই আকার ও বিশালতা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা যেমন মুগ্ধ, তেমনি দর্শনার্থীরাও ইতিমধ্যেই এই পুজোকে ঘিরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। পুজো কমিটির সভাপতি জানান, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এই হীরক জয়ন্তী বর্ষে কিছু আলাদা করা। আমরা চাই মানুষ এখানে এসে আনন্দ করুক এবং এই বিশাল মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে তাদের পূজার পরিপূর্ণতা অনুভব করুক।”

সোদপুরের পুজো এখন শুধু স্থানীয় মানুষের জন্য নয়, সারা রাজ্যের মানুষের কাছে একটি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় পুজোর মণ্ডপে প্রতিমার আকৃতি বড় হওয়ার প্রবণতা থাকলেও, সোদপুরের এই বিশাল মূর্তি বাংলার পুজো ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে চলেছে। পুজোর আয়োজনের পাশাপাশি, পুজোর সময় ছোট শিল্পীদেরও বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের আর্থিকভাবে শক্তিশালী করবে।

এই বিশালাকার মূর্তি সোদপুরের অর্থনীতিতেও একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। পুজোর সময় পর্যটকদের ভিড় বাড়লে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। স্থানীয় দোকানদার সুব্রত পাল বলেন, “এত বড় মূর্তি দেখতে প্রচুর মানুষ আসবে, ফলে আমাদের ব্যবসাও চাঙ্গা হবে। এমন পুজো আগে কখনও হয়নি, তাই আমরা আশা করছি এবার বেচাকেনাও ভালো হবে।”

সোদপুরের এই পুজো এখন শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক মেলবন্ধনের উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রতিমার এই বিশালতা যেমন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে, তেমনি এই পুজোর মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের মধ্যে একতাবোধ এবং আনন্দের সঞ্চার ঘটবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments