Due to dowry complaint housewife has been flopped : বিয়ে মানেই নতুন জীবনের শুরু, ভালোবাসার নতুন অধ্যায়। কিন্তু অনেকের জন্য এই নতুন জীবন অভিশাপ হয়ে ওঠে, যখন পণের দাবি এক অন্ধকার বাস্তবতায় রূপ নেয়। এমনই এক ঘটনার সাক্ষী হল বীরভূমের বোলপুর, যেখানে এক গৃহবধূর ওপর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্মম অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারিণীর দাবি, বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা একের পর এক পণের দাবি জানাতে থাকে। তাদের দাবি পূরণ করতে না পারলেই শুরু হতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।এমনকি যখন এই গৃহবধূ নিজের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাতে যান, তখনও তিনি বিচার পাননি। বরং বোলপুর থানা ও মহিলা থানার দ্বারে দ্বারে ঘুরতে বাধ্য হন। অভিযোগকারিণীর কথায়, প্রথমে তিনি বোলপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাকে বাড়ি ফিরে গিয়ে সংসার করার পরামর্শ দেয়! দীর্ঘ সময় থানায় বসিয়ে রাখার পরও কোনও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। তিনি এরপর মহিলা থানায় যান, কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন, তালা ঝুলছে! পুলিশ তাকে জানায়, মহিলা থানায় কোনও অফিসার নেই, তাই অন্তত দশ দিন পরে আসতে হবে।
এক অসহায় নারীর কষ্টের গল্প এখানেই শেষ হয়নি। শেষমেশ গভীর রাতে কোনওভাবে তার অভিযোগ নেওয়া হলেও সকালে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া এক মহিলা যখন ন্যায়বিচার চাইতে যায়, তখন যদি তাকে এমনভাবে অপমানিত হতে হয়, তাহলে সমাজের কাছে সেই বার্তা খুবই ভয়াবহ।এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নারী অধিকার রক্ষা সংস্থাগুলির তরফ থেকে দাবি উঠেছে, পুলিশ কেন নির্যাতিতার অভিযোগ নিল না? কেন এক মহিলাকে সুবিচারের জন্য এতটা হয়রান হতে হলো? অনেকেই মনে করছেন, পুলিশের এই মনোভাব সমাজে নারীদের প্রতি অন্যায়কে আরও উৎসাহিত করবে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “এটা নতুন কিছু নয়। আমাদের সমাজে এখনও অনেক জায়গায় মেয়েদের ওপর এমন অত্যাচার হয়ে থাকে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় তারা নীরব থাকেন। কারণ বিচার পাওয়াটা কঠিন। এই ঘটনা প্রমাণ করে, এখনও নারীরা সুবিচার পেতে গেলে কতটা বাধার সম্মুখীন হন।”বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের বিরুদ্ধে হওয়া এই ধরনের হেনস্তা ও নির্যাতনের ঘটনায় প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া দরকার। বোলপুরের এই ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা হাজারও নির্যাতনের মধ্যে একটি। পণের জন্য নারীদের ওপর অত্যাচার করা আইনত অপরাধ হলেও, বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই আইন কার্যকর হয় না।এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, আইন যদি থাকেও, তাহলে তার প্রয়োগ কোথায়? পুলিশ যদি নির্যাতিতার কথা না শোনে, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ভরসা কোথায়?গোটা ঘটনার তদন্তের দাবি তুলেছে বিভিন্ন মহিলা সংগঠন। পাশাপাশি, প্রশাসনের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে এই ঘটনার বিচার না হলে, এটি আরও অনেক নির্যাতিতাকে চুপ করে থাকার বার্তা দেবে বলে মনে করছেন সমাজবিদরা।নারী নির্যাতন বন্ধ করতে চাইলে শুধু আইন করলেই হবে না, তার বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করাটাও সমানভাবে জরুরি।