Dry weather in South Bengal in early June:জুন মাস এলেই বাঙালির মনে ভাসতে থাকে বর্ষার ছবিটা—কালো মেঘ, ঠান্ডা বাতাস, টুপটাপ বৃষ্টি, আর তার সঙ্গে এক কাপ চা আর খিচুড়ির স্বাদ। কিন্তু এ বছর সেই চেনা দৃশ্য যেন এখনও অধরা দক্ষিণবঙ্গের আকাশে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, জুনের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি তেমন আসবে না, বরং থাকবে শুষ্ক আবহাওয়া আর সেইসঙ্গে ভ্যাপসা গরম আর অস্বস্তি। উত্তরবঙ্গে যদিও বর্ষা দশ দিন আগেই ঢুকেছে, কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের জন্য সেই অপেক্ষা এখনও শেষ হয়নি। হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এখন যে নিম্নচাপ সিস্টেমটি আছে, সেটি বাংলাদেশ হয়ে মেঘালয়-অসম অঞ্চলে গিয়ে শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, আর তার ফলে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা অনেকটাই কমেছে। শনিবার যদিও উত্তরবঙ্গের কিছু অংশে বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে আগামী চার-পাঁচ দিনে তেমন কোনো বড় বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বরং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭৬ থেকে ৯৭ শতাংশের মধ্যে থাকায় গরম আর আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তি বাড়বে। কলকাতার আকাশ শনিবার সকালে আংশিক মেঘলা থাকলেও বৃষ্টি নামার কোনো ইঙ্গিত নেই।
শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর আগামী ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা ২৭ থেকে ৩৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করবে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সোমনাথ মন্ডল জানিয়েছেন, “এই সময়ে বঙ্গোপসাগর থেকে যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ঢোকার কথা, সেই ধারা এখনো দক্ষিণবঙ্গে শক্তি নিয়ে পৌঁছায়নি। তাই আরও কয়েকদিন গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ার মধ্যে থাকতে হবে।” এই খবরে স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা। হুগলির কৃষক মদন মণ্ডল বললেন, “ধানের বীজতলা করে রেখেছি, বৃষ্টি না হলে রোপণ করা যাবে না। আরও দেরি হলে তো ফসলই নষ্ট হয়ে যাবে।” একইসঙ্গে গরম আর আর্দ্রতার মারণ যন্ত্রণা মানুষকে কাবু করে তুলছে। হাওড়ার কলেজপড়ুয়া স্নেহা দত্ত বলেন, “এই ভ্যাপসা গরমে বাইরে বেরোনো যায় না। মাটিতে তাপ এমনভাবে উঠছে, মনে হচ্ছে পা পুড়ে যাচ্ছে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা পারুল মণ্ডল বলেন, “বৃষ্টি আসলেই একটু শান্তি পাওয়া যায়। এই গরমে রান্নাঘরে ঢোকা যায় না, বিদ্যুৎ চলে গেলে অবস্থা আরও খারাপ।” কলকাতা ও শহরতলির দোকানদাররা বলছেন, গরমে বিক্রিবাটা কমে গেছে, দুপুরে ক্রেতা খুব কম আসছে, অনেকে আবার বাড়ি থেকেই বেরোচ্ছেন না।আবহাওয়া দপ্তরের মতে, এই শুষ্ক পরিস্থিতি অন্তত জুনের প্রথম ভাগ পর্যন্ত থাকবে।
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকতে পারে ৫-৭ জুনের পর, তবে তার আগে গরমের তীব্রতা কিছুটা বাড়তে পারে। আগামী তিন-চার দিনে তাপমাত্রা আরও ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, ফলে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর—সব জেলাতেই অস্বস্তির পরিস্থিতি আরও বাড়তে পারে। এই অবস্থায় চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। কলকাতার চিকিৎসক ডাঃ দীপঙ্কর ঘোষ বলছেন, “এই সময় বেশি জল খেতে হবে, বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে, হালকা কাপড় পরতে হবে, আর দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল খাওয়া উচিত।”বৃষ্টি না আসায় কৃষকদের সমস্যার পাশাপাশি বাড়ছে গৃহবধূদের কষ্টও। রান্নাঘরে কাজ করতে গেলে ঘাম আর ভ্যাপসার মধ্যে ঘর যেন একপ্রকার সেঁকা চুল্লির মতো হয়ে যাচ্ছে। বাজারের তরকারির দামও বাড়ছে, কারণ অনেক জায়গায় সব্জির চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা জল না পেয়ে সমস্যায় পড়ছেন। একদিকে বৃষ্টি নেই, অন্যদিকে গরমের দাপট, সব মিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ এই মুহূর্তে এক অস্বস্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।