Friday, May 30, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশড্রোনই আপনার বাড়িতে নিয়ে যাবে টাটকা মাছ

ড্রোনই আপনার বাড়িতে নিয়ে যাবে টাটকা মাছ

Drones will deliver fresh fish to your home : আপনি কি মাছপ্রেমী? সকালে বাজারে গিয়ে তাজা রুই, কাতলা, পাবদা না পেলে কি মন খারাপ হয়ে যায়? তাহলে এই খবর শুনে আপনার মুখে হাসি ফুটবেই! কারণ, আর আপনাকে বাজারে দৌড়তে হবে না, ড্রোনই আপনার বাড়ির ছাদে পৌঁছে দেবে টাটকা মাছ! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, ভারতের মৎস্য খাতে এক নতুন বিপ্লব আনতে চলেছে সরকার। মাছ ডেলিভারির জন্য এবার আকাশপথকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই নতুন প্রকল্প অনুযায়ী, বিশেষ ধরনের ড্রোনের মাধ্যমে সরাসরি মাছ পৌঁছে যাবে গ্রাম-গঞ্জ, পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু করে দূরদূরান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কিছু রাজ্যে এই পরিষেবা শুরু হয়েছে, আর ভবিষ্যতে সারা দেশে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

কীভাবে এই ড্রোন কাজ করবে? জানা যাচ্ছে, সরকারের এই উদ্যোগের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ধরনের হেভি-ডিউটি ড্রোন, যা প্রায় ৭০ কেজি পর্যন্ত মাছ বহন করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, এই ড্রোনগুলোতে থাকবে বিশেষ ‘অক্সিজেনেটেড’ বক্স, যা মাছকে জীবন্ত রাখবে, যাতে টাটকা অবস্থাতেই মাছ গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায়। এর ফলে আর কোনো রাস্তার জ্যামে পড়ে মাছ বাসি হওয়ার আশঙ্কা নেই। মাছ সরাসরি আকাশপথে পৌঁছে যাবে আপনার বাড়ির দোরগোড়ায়, একেবারে ফ্রেশ, একেবারে জীবন্ত!

fd1 fishing drone

এই উদ্যোগের পেছনে সরকারের ভাবনা কী? মৎস্য মন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিক রবিকান্ত বর্মা জানিয়েছেন, “মাছ আমাদের দেশের খাদ্য-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু দুর্গম এলাকা, পাহাড়ি গ্রাম, অথবা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মাছের জোগান ঠিক রাখতে সমস্যা হয়। তাই ড্রোন ব্যবহার করে সরাসরি মাছ পাঠানোর এই প্রকল্প চালু হয়েছে। এতে একদিকে স্থানীয় অর্থনীতির চাকা ঘুরবে, অন্যদিকে মানুষ সহজেই পাবে পছন্দের মাছ।” রবিকান্তবাবুর কথায়, এই উদ্যোগ সফল হলে কৃষকদের মতো মাছচাষিদের জীবনও বদলাবে, কারণ মাছের বাজার আরও বড় হবে, নতুন ক্রেতা জুটবে।

মৎস্য বিজ্ঞানী ডঃ তনয়া মুখার্জি জানিয়েছেন, “ট্র্যাডিশনাল সাপ্লাই চেনে অনেক সময় মাছ মারা যায়, বা বাসি হয়ে যায়। কিন্তু ড্রোন ব্যবহারে সেই সমস্যা দূর হবে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় বা নদীবেষ্টিত অঞ্চলে যেখানে রাস্তা খারাপ, সেসব জায়গায় মাছ পৌঁছানো সহজ হবে। ফলে নতুন বাজার তৈরি হবে, এবং দামও নিয়ন্ত্রিত থাকবে।” তিনি আরও বলেন, এই প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধবও, কারণ এতে ডিজেল চালিত ট্রাকের উপর নির্ভরতা কমবে।

ড্রোনের মাধ্যমে মাছ পৌঁছানো শুরু হলে সবচেয়ে উপকৃত হবেন গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষরা। যেমন উত্তরবঙ্গের কালিম্পং বা দক্ষিণ ভারতের কুমারকম অঞ্চলের বাসিন্দারা, যেখানে মাছ পৌঁছাতে গিয়ে রাস্তার সমস্যায় পড়তে হয়। কালিম্পংয়ের এক গ্রাহক পিউ দাস জানিয়েছেন, “আমরা পাহাড়ে থাকি, মাছ পেতে অনেক কষ্ট হয়। সপ্তাহে একবার গাড়ি আসে, তাও তাজা মাছ পাওয়া যায় না। এখন যদি ড্রোনে মাছ আসতে থাকে, তাহলে আমাদের মতো মানুষের জন্য খুবই ভালো হবে। রুই, কাতলা, ইলিশ—সবই যদি বাড়িতে আসে, তাহলে আর কী চাই!”

অন্যদিকে দক্ষিণের এক মাছ ব্যবসায়ী মণিকণ্ঠন রাও জানিয়েছেন, “এই ড্রোন পরিষেবা চালু হলে আমরা আরও বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছতে পারব। দুর্গম অঞ্চলে বেচাকেনা বাড়বে। ব্যবসা বাড়লে লাভও হবে, আর স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও উপকৃত হবেন।”

অবশ্য, এই প্রকল্পের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন বড় আকারের ড্রোন চালানো নিয়ে নিরাপত্তা ও লাইসেন্সিং সমস্যা, আবহাওয়া সমস্যা, বিশেষ করে বর্ষার সময়। এছাড়া ড্রোন চার্জিং স্টেশন তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং দক্ষ চালক তৈরির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে সরকার জানিয়েছে, এগুলো ধাপে ধাপে সমাধান করা হবে। ইতিমধ্যেই কিছু প্রাইভেট ড্রোন কোম্পানি সরকারের এই উদ্যোগে পার্টনার হতে এগিয়ে এসেছে, যারা বিশেষ প্রযুক্তি এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দেবে।

সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে মৎস্যজীবীদের সংগঠনও। অল ইন্ডিয়া ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতা রঘুনাথ নায়েক বলেছেন, “মাছচাষিরা সাধারণত বাজারের উপর নির্ভরশীল। এই উদ্যোগে নতুন বাজার খুলবে, দামও ভাল পাওয়া যাবে। তবে আমরা চাইছি, এই ড্রোন পরিষেবা সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাতে, যাতে দাম যেন খুব বেশি না হয়।”

এই প্রকল্প সফল হলে ভবিষ্যতে শুধু মাছ নয়, দুধ, শাকসবজি, এমনকি ওষুধও ড্রোনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। একপ্রকার ‘স্মার্ট লজিস্টিক নেটওয়ার্ক’ তৈরি করে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস সহজে পৌঁছে দেওয়াই সরকারের মূল লক্ষ্য।

সবশেষে বলা যায়, ড্রোনে মাছ পৌঁছানো শুধু প্রযুক্তির উৎকর্ষ নয়, এটা গ্রামীণ ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা, আঞ্চলিক সমতা, আরেকটু সহজ করে বললে—বাঙালির ভাতের থালায় টাটকা মাছের স্বপ্ন পূরণ। হয়তো আগামী দিনে সকালে খবরের কাগজের সঙ্গে মিলে যাবে এক বাক্স টাটকা মাছও, আর আমরা সবাই একসঙ্গে বলব—“ধন্যবাদ ড্রোন, ধন্যবাদ সরকার!”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments