‘Dog Babu’s’ certificate dropped after controversy : এ যেন সত্যিই একটা গল্প! তবে সেটা কল্পকাহিনি নয়—পাটনার কৌলিচকের এক সাধারণ নাগরিকের ‘রেসিডেন্স সার্টিফিকেট’ ঘিরে সারা রাজ্যে যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে, তা গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর। ঘটনাটি বিহারের পাটনার লাগোয়া মুসৌরি শহরের। ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছিল জোরকদমে, আর সেই সময়েই সরকারিভাবে জারি হওয়া একটি বসবাসের শংসাপত্র সামনে আসে। কিন্তু যেই না মানুষ সেটি হাতে পেল, চোখ কপালে! কারণ সেই সার্টিফিকেটে একজন মানুষের ছবি নয়, স্পষ্টভাবে রয়েছে একটি কুকুরের ছবি। নাম লেখা—‘ডগ বাবু’। বাবার নাম—‘কুত্তা বাবু’, মায়ের নাম—‘কুতিয়া দেবী’। ঠিকানাও দেওয়া, পাটনার কৌলিচক ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। শুধু তাই নয়, সার্টিফিকেটে রয়েছে বিহার সরকারের সরকারি সিলমোহর, সমস্ত কিছুই বৈধ বলেই দেখায়। এই ঘটনা জানাজানি হতেই তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম—সবত্রেই ভাইরাল হয়ে ওঠে ‘ডগ বাবু’র কাহিনি। বহু মানুষ হাসি ঠাট্টায় বলছেন, “মানুষ বাদ, এবার ভোট দেবেন কুকুর!”
ঘটনাটি প্রথম ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায় এক স্থানীয় সাংবাদিকের পোস্টে। এরপর তা ক্রমেই দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই ইস্যুতে চেপে ধরে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে। কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, “এটা প্রমাণ করে যে বিহারে প্রশাসনিক দুর্নীতি ও গাফিলতি চরমে পৌঁছেছে। এক কুকুরের নামে যদি শংসাপত্র ইস্যু হয়, তাহলে নাগরিকত্ব প্রমাণে সাধারণ মানুষ কতটা সমস্যায় পড়ছেন, ভাবা যায়!” তৃণমূল কংগ্রেস-ও থেমে থাকেনি। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “তা হলে কি প্রকৃত মানুষদের নাম বাদ দিয়ে ভোটার তালিকায় ‘ডগ বাবু’-দের অন্তর্ভুক্ত করা হবে? তাহলে ভোটার আইডির মানেই কী থাকে?”
এই ঘটনার রাজনৈতিক অভিঘাত পড়েছে বিহারের প্রশাসনে। প্রচণ্ড চাপের মুখে শেষপর্যন্ত ওই সার্টিফিকেটটি বাতিল করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি একটি “মানবিক ভুল” এবং তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কীভাবে এমন একটি নথি ইস্যু হল। পাটনার জেলাশাসক জানিয়েছেন, “এই ঘটনাটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যদি কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারীর গাফিলতির প্রমাণ মেলে, তাহলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সেই সঙ্গে প্রযুক্তিগত ত্রুটি, ব্যাকএন্ড ডেটা এন্ট্রি ভুল, বা ইচ্ছাকৃত কাজ—সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে—এই যদি হয় ‘ডেটা আপডেট’-এর নমুনা, তাহলে কতজন প্রকৃত নাগরিক বাদ পড়েছেন, তার হিসাব কে রাখবে?
স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, ভোটার তালিকা সংশোধন এবং নাগরিক শংসাপত্র তৈরি করার সময় যে পর্যাপ্ত নজরদারি ও যাচাই হয় না, এই ঘটনাই তার বড় প্রমাণ। মুসৌরির এক সমাজকর্মী মধুমিতা দাস বলেন, “আমরা বহুবার বলেছি যে আধার, ভোটার আইডি, রেশন কার্ড, কিংবা বসবাসের প্রমাণপত্র তৈরি করার সময় স্থানীয় স্তরের লেভেল–ওয়ান অফিসাররা অনেক সময় ফর্ম যাচাই না করেই আপলোড করে দেন। ফলে এমন ভুল হতেই পারে। কিন্তু এটি নিছক ভুল বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
একইসঙ্গে অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে এই ধরনের ভুলের সুযোগ নিয়ে ভবিষ্যতে জাল ডকুমেন্ট বানিয়ে অসাধু লোকেরা সরকারি সুবিধা নিতেও পারে। বিশেষ করে, যেখানে বসবাসের শংসাপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা শিক্ষা, সরকারি চাকরি, গৃহ ঋণ কিংবা বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে দরকার পড়ে—সেখানে এমন ভুল মানে, গোটা ব্যবস্থার উপরই প্রশ্নচিহ্ন।
বিহারে বিগত কয়েক বছরে নাগরিক তথ্যভাণ্ডার সংক্রান্ত ভুল বা অসংগতি নতুন কিছু নয়। এর আগে একবার ‘বয়স ১১৬’ লিখে জন্ম সার্টিফিকেট ইস্যুর ঘটনা ঘটেছিল। আবার কোথাও কোথাও পুরুষের নামে ‘মা’র নাম লেখা হয়েছিল ‘রামপ্রসাদ’! কিন্তু ‘ডগ বাবু’-র ঘটনা যেন একেবারে নতুন এক মাত্রা যোগ করল।
এই ঘটনার সামাজিক দিকটাও যথেষ্ট গুরুত্বের। অনেকেই মনে করছেন, এমন ঘটনা প্রশাসনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে। পাটনার এক শিক্ষক অনিল কুমার বলেন, “আমরা ছাত্রদের বলি, সরকারি নথির গুরুত্ব কতখানি। এখন যদি ছাত্ররাই বলে, ‘স্যার, ডগ বাবু তো ভোটার হল’, তখন কী উত্তর দেব?”
বর্তমানে প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অনুমান করা হচ্ছে, এটি হয়তো কোনও ব্যক্তি মজা করেই আবেদন করেছে, আর সেটিকে যাচাই না করেই সফটওয়্যারে আপলোড করে দেওয়ায় এমন সার্টিফিকেট জারি হয়েছে। যদিও সরকার বলছে, এই ধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য নতুনভাবে তথ্য যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত জেলায়।
পুরো বিষয়টি ঘিরে সোশাল মিডিয়া কিন্তু একেবারে ফাটাফাটি মুডে! কেউ লিখছেন, “ডগ বাবু যদি স্থায়ী বাসিন্দা হন, তাহলে কাকাবাবু কে?” আবার কেউ বলছেন, “ডগ বাবু এবার ভোট দেবেন, ম্যানিফেস্টো কী চেয়ে বসবেন?” কিছু মিম পেজ ‘বেঙ্গল টাইগার’ বা ‘ডগ ইন পাটনা’ নামে নানা ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করছে।
এই ঘটনা যেমন হাস্যরসের খোরাক জুগিয়েছে, তেমনই বাস্তব জীবনে প্রশাসনিক গাফিলতির ভয়াবহতা তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতের দিক থেকে দেখা গেলে, এই ঘটনা হয়তো প্রশাসনের মধ্যে একটি বড় রকমের আইটি বা মানুষজনের ত্রুটিকে সনাক্ত করার সুযোগ এনে দিল। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই মুহূর্তে ভোটার তালিকায় কতটা নির্ভুল তথ্য রয়েছে? এবং এই ধরনের ভুল শুধরে তা কতটা সময় ও সদিচ্ছার সঙ্গে সংশোধন করা হবে?
কিন্তু এই ‘ডগ বাবু’র কাণ্ড আমাদের এই কথাই মনে করিয়ে দেয়—তথ্য প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক, মানুষের বুদ্ধিমত্তা, সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা না থাকলে পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে একটা ‘বিভ্রান্ত কুকুরের শংসাপত্র’-এর হাত ধরেই!