Sunday, September 7, 2025
Google search engine
HomeUncategorisedদীর্ঘ ৯ বছর পর রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

দীর্ঘ ৯ বছর পর রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

District administration exam after 9 long years : দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল অবশেষে, প্রায় ৯ বছর পর আবার রাজ্যে শুরু হলো শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, যে পরীক্ষা নিয়ে এতদিন ধরে সাধারণ মানুষের মনে জমে ছিল একরাশ প্রশ্ন, ক্ষোভ ও হতাশা। ব্যারাকপুর সংসদীয় ক্ষেত্রে মোট সাতটি স্কুলে আজ থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা, আর এই খবরেই যেন নতুন করে আশার আলো দেখছেন অসংখ্য যুবক-যুবতী। প্রায় ৩৫০০ জন পরীক্ষার্থী আজ বসতে চলেছেন এই পরীক্ষায়, যার প্রতিটি আসনে প্রতিযোগিতা যে কতটা তীব্র হতে চলেছে তা সকাল থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। নৈহাটি নরেন্দ্র বিদ্যানিকেতন হাই স্কুলে ছিল বিশেষ ভিড়, কারণ সেখানেই পরীক্ষায় বসেছেন শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মন্ডল, যিনি দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের প্রতিবাদ করে এসেছেন।

এদিন সকাল থেকেই পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে ছিল কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা, বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল যাতে কোনো রকম অশান্তি না হয়। পরীক্ষার্থীদেরকে চেকিংয়ের মধ্য দিয়ে, একাধিক নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে, যেন সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তাতে বহু চাকরিপ্রার্থী বয়স পেরিয়ে গেছেন, অনেকের জীবন থমকে গিয়েছিল, সেই দুঃখ আজও ভোলেননি অনেকে। কেউ কেউ বলছেন—“আমরা ভেবেই নিয়েছিলাম হয়তো জীবনে আর পরীক্ষা হবে না, কিন্তু আজকে আবার কলম ধরতে পারছি, এইটাই আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি।” আবার অন্যদিকে কিছু মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানাচ্ছেন—“৯ বছরের দেরি মানে শুধু আমাদের জীবনের ৯টা বছরই নয়, আমাদের পরিবার, আমাদের আশা সবকিছুকেই ধ্বংস করেছে।” আন্দোলনকারী চিন্ময় মন্ডল সংবাদমাধ্যমকে বলেন—“আজ আমি পরীক্ষায় বসছি ঠিকই, কিন্তু এত বছর ধরে যে অবিচার হয়েছে তার হিসেব জনগণও রাখছে। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো পরিবর্তন হবে না।” এই পরীক্ষার পুনরায় শুরু হওয়া নিঃসন্দেহে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় খবর।

শিক্ষক সংকটে ভুগছিল বহু স্কুল, ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার ক্ষতির শিকার হচ্ছিল প্রতিদিন। অনেক স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক শূন্য পদ খালি পড়ে ছিল, যা এই পরীক্ষার মাধ্যমে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে এও সত্যি, এই এক পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্ত সমস্যা সমাধান হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—“নিয়মিত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু না হলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়।” সামাজিক প্রভাবও এখানে বড়। দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষও দেখেছেন কিভাবে কর্মসংস্থান না থাকলে সমাজে হতাশা, ক্ষোভ ও অস্থিরতা তৈরি হয়। আজকের এই পরীক্ষা অনেকের কাছে শুধু একটা চাকরির সুযোগ নয়, বরং ন্যায়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের ফল। এদিন পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের চোখেও ঝলমল করছিল আনন্দ ও আশঙ্কার মিশ্র ছায়া।

1200 675 24965799 thumbnail 16x9 ssc

কেউ বললেন—“আমার ছেলের বয়স প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল, আজকের পরীক্ষা যদি না হতো তবে হয়তো আর কোনোদিন চাকরির স্বপ্ন পূরণ হতো না।” আবার কেউ কেউ বললেন—“পরীক্ষা শুরু হলো ঠিকই, কিন্তু এবার স্বচ্ছ নিয়োগ না হলে আবার একই আন্দোলন শুরু হবে।” এই পরীক্ষার সফল সম্পন্ন হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও দ্রুততার নিশ্চয়তা দেওয়া। যদি আবার অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব বা দুর্নীতি সামনে আসে তবে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে। তাই রাজ্য সরকার ও এসএসসি দফতরের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—পরীক্ষা ও পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়াকে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা। বিশেষ করে যেসব তরুণ-তরুণী ৯ বছর ধরে এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করেছেন, তাদের আশা ভঙ্গ করা হলে সেটাই হবে রাজ্যের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি। রাজ্যের শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই পরীক্ষার ফলাফল স্বচ্ছভাবে প্রকাশ হয়, তবে শুধু নিয়োগই হবে না, বরং শিক্ষা ব্যবস্থায় এক নতুন ভরসা ও বিশ্বাস ফিরবে। স্কুলগুলিতে আবার পূর্ণাঙ্গভাবে পড়াশোনা চালানো যাবে, ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে, এবং সমাজে নতুন করে কর্মসংস্থানের আবহ তৈরি হবে।

তাই বলা যায়, এই এসএসসি পরীক্ষা কেবলমাত্র নিয়োগ পরীক্ষা নয়, বরং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ ও সামাজিক ন্যায়ের এক নতুন অধ্যায়। আজকের এই দিনটা তাই ইতিহাসে থেকে যাবে এক বিশেষ দিন হিসেবে, যখন দীর্ঘ সংগ্রাম, আন্দোলন, দুঃখ, ক্ষোভ সবকিছুর মাঝেও নতুন আশার আলো জ্বলে উঠল রাজ্যে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments