Tuesday, June 10, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গআসানসোলআসানসোলে প্রতিবেশীদের মধ্যে বিবাদ,গাড়ি ভাঙচুর,উত্তেজনা

আসানসোলে প্রতিবেশীদের মধ্যে বিবাদ,গাড়ি ভাঙচুর,উত্তেজনা

Dispute between neighbors, vandalism of cars, tension in Asansol:আসানসোল শহরের কুলটি থানার অন্তর্গত নিয়ামতপুর কুলতোড়া এলাকায় হঠাৎ করে যেন আগুন জ্বলে উঠল এক ছোট্ট প্রতিবেশী বিবাদকে কেন্দ্র করে। এমনিতে শান্ত স্বভাবের এই এলাকা, যেখানে মানুষজন নিজেদের মতো করে দিনযাপন করে, কিন্তু রবিবার বিকেলের সেই মুহূর্তটা যেন একরাশ আতঙ্ক বয়ে আনল এলাকাবাসীর জন্য। জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে একটি সামান্য বিষয় নিয়ে বচসা শুরু হয়—কারোর মতে ময়লা ফেলা নিয়ে, আবার কেউ বলছেন গাড়ি পার্কিং নিয়ে। কিন্তু ঘটনাটি যখন ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে, তখন আর তা সামান্য থাকে না। অভিযোগ উঠেছে, বিবাদে জড়িয়ে পড়া এক পক্ষ আসানসোল শহর থেকে বাইরের লোকজন ডেকে নিয়ে আসে, এবং এরপরেই ওই লোকজন এসে অপর পক্ষের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, “আমরা বুঝতেই পারিনি কী হচ্ছে। হঠাৎ করে গাড়িতে করে কিছু লোক এসে নামল, গালাগালি শুরু করল, তারপর হাতাহাতি থেকে গাড়ি ভাঙচুর—সব একসাথে চলল।”

Screenshot 2025 06 10 172353

এই ঘটনার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা কুলতোড়া এলাকায়। যার ফলে সাধারণ মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শিশুরা কাঁদতে থাকে, দোকানদাররা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়, মহিলারা ঘরের জানালা বন্ধ করে ভিতরে ঢুকে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। কুলটি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ এসে দেখে পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তপ্ত, দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি চলেছে, এবং বাইরের লোকদের গাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে।

এরপরেই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে, যখন বাইরের থেকে আসা কিছু লোককে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চায়, তখন অভিযোগ উঠেছে—স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী পুলিশের গাড়ি ঘিরে ফেলে, এবং আটক ব্যক্তিদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এমনকি পুলিশের এক কর্মীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এরপরেই বাধ্য হয়ে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিছুক্ষণ পরে এলাকা পুলিশের দখলে এলেও উত্তেজনা পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি।ঘটনায় আপাতত ছয়জনকে আটক করেছে কুলটি থানার পুলিশ। থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। যারা বাইরে থেকে লোক এনে এলাকা উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অপরদিকে, স্থানীয় কাউন্সিলর প্রতিমা মন্ডল জানান, “এমন শান্ত পাড়ায় এভাবে বাইরের লোক এনে গন্ডগোল পাকানো খুবই দুঃখজনক। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সমস্ত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হোক।”অপরপক্ষের পরিবারের এক মহিলা সদস্য বলেন, “আমরা তো জানতেই পারিনি এমন কিছু হবে। ওরা বাইরের লোক ডেকে আমাদের বাড়ির সামনে এসে চিৎকার করতে শুরু করল। আমি ছোটো ছেলেকে নিয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ি। পুলিশ না এলে কী হত জানি না।”স্থানীয় এক দোকানদার রফিকুল শেখ বললেন, “আমি দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ গাড়ি ভাঙচুর শুরু হয়। আমার দোকানের সামনের শাটারও ভাঙে। এমন ঘটনা জীবনে প্রথম দেখলাম। পুলিশ না এলে হয়তো আমরা মারাই যেতাম।”

Screenshot 2025 06 10 172428

এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মনে প্রশ্ন উঠেছে—বাইরের লোক কীভাবে এল, তাদের আনতে কে সাহায্য করল, কীভাবে এত সহজে সংঘর্ষে গিয়ে দাঁড়াল ছোট্ট বিবাদ। স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক অরিজিৎ ঘোষের মতে, “যেখানে মানুষ ছোটখাটো ঝগড়া মিটিয়ে ফেলে, সেখানে বাইরের লোক এনে দাঙ্গা লাগানো একটা বিপজ্জনক প্রবণতা। এর থেকে ভবিষ্যতে আরও বড় অশান্তি হতে পারে।”সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, এই ধরনের ঘটনা আসানসোলের মতো শহরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। বিশেষ করে যেখানে একদিকে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠছে, সেখানে নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও।স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এলাকায় এখন ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে সাময়িকভাবে, এবং অতিরিক্ত নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতভর পুলিশ পেট্রোলিং চালাবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments