Discomfort caused by humidity, along with fear of lightning:দক্ষিণবঙ্গের আকাশে এখন কেবল মেঘ নয়, সঙ্গে জমেছে উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা আর একরাশ অস্বস্তিও। কারণ শহর কলকাতা সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে গত কয়েকদিন ধরে একদিকে যেমন বাড়ছে আদ্রতা, অন্যদিকে তেমনি বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝোড়ো হাওয়া এবং হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরের আকাশ মেঘলা, বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৯৫ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, যার ফলে প্রচণ্ড গরমের মাঝে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে তাপঘাম, মাথাব্যথা বা হিটস্ট্রোকের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন। কলকাতা মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক বলছেন, “এই ধরনের আর্দ্র গরমে জল কম খেলে শরীরে জলশূন্যতা দেখা দেয়। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এই সময়টা বেশি বিপজ্জনক।” এদিকে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদে। ফলে জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা।
শুধু দক্ষিণবঙ্গই নয়, উত্তরের জেলাগুলিতেও আতঙ্ক বাড়াচ্ছে একই পরিস্থিতি। দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং দুই দিনাজপুরেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পাশাপাশি ৩০-৫০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। মালদা জেলার চাঁচলে একজন কৃষক বলেন, “আষাঢ় আসতে বাকি, কিন্তু এই বৃষ্টি-কাণ্ডে জমির কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে না, আবার বিদ্যুৎও থাকে না। ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।” অপরদিকে, বজ্রপাতের কারণে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জেলায় একাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে গত বছরগুলিতে। সেই অভিজ্ঞতার ভয় থেকেই সাধারণ মানুষ এখন আরও সচেতন হলেও আতঙ্ক থেকে যাচ্ছে, বিশেষ করে গ্রামের দিকে যাঁরা খোলা মাঠে বা জল জমা এলাকায় কাজ করেন তাঁদের জন্য।

আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা জলীয় বাষ্প এবং পশ্চিম দিক থেকে আসা শুষ্ক গরম হাওয়ার সংমিশ্রণেই তৈরি হচ্ছে এই ধরনের আর্দ্র ও অস্বস্তিকর আবহাওয়া। এর ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হচ্ছে এবং দিনভর গুমোট ভাব বজায় থাকছে। এই অবস্থায় তাপমাত্রাও রাতের দিকে না কমায় রাতে ঘুম না হওয়া, বাচ্চাদের কান্নাকাটি, গৃহস্থালি কাজেও সমস্যার কথা জানাচ্ছেন অনেকেই। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার এক গৃহবধূ সংবাদমাধ্যমকে জানান, “পাখা ঘোরালেও ঘরে হাওয়া ঢোকে না। নাক ডাকে মাথা ধরে যায়। ছোট ছেলে ঘুমোতে পারে না। নাকি ফ্যানের আওয়াজ আর ঘামের চাপে আমরা সবাই অস্থির।”
শহরের নাগরিকদের কথা মাথায় রেখে বিদ্যুৎ বিভাগ ও কলকাতা পুরসভা ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। অতিরিক্ত জল জমে না থাকে, সে জন্য ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে, এবং লো-লাইনিং এরিয়াগুলিতে পাম্প বসিয়ে জল তোলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কলকাতা পৌরনিগমের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন বরো অফিসকে সতর্ক করেছি। জরুরি নম্বরগুলো সচল রাখা হয়েছে। বজ্রপাত সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এড়াতে স্কুল-কলেজগুলিকেও সতর্ক করে বলা হয়েছে, সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সম্ভব হলে শিশুদের বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিন।”
আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, এই মুহূর্তে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ৩৪ ডিগ্রি ছুঁতে পারে। এই তাপমাত্রা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু আদ্রতার কারণে শরীরের উপরে চাপ পড়ছে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই সময়ে প্রচুর জল খাওয়া, হালকা খাবার খাওয়া এবং বেলা বারোটার পর ছাতা ছাড়া রাস্তায় না বেরোনো উচিত। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে আবহাওয়া অ্যাপ এবং টেলিভিশনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপডেট দেওয়া হচ্ছে।
তবে শুধু সতর্কতায় থেমে নেই আলোচনা। অনেকেই বলছেন, রাজ্য সরকারকে এখনই বাজ পড়া নিরোধক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, স্কুলগুলোতে বাজ রক্ষাকারী সরঞ্জাম বসানো বাধ্যতামূলক করতে হবে, এবং কৃষকদের জন্য আকাশ পর্যবেক্ষণের সিস্টেম ও মোবাইল অ্যালার্ট আরও দ্রুত ও কার্যকর করতে হবে। কারণ আগামিতে আবহাওয়ার এই আচরণ আরও চরম হয়ে উঠতে পারে—এমনটাই আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।
সব মিলিয়ে গোটা দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের মানুষ এখন আকাশের দিকে চেয়ে আছেন, কখন নামবে এক পশলা শান্তির বৃষ্টি, না কি আবারও নামবে বজ্রবিদ্যুতের আঘাত? তার আগে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষায় নজর রাখাই এখন সকলের প্রথম কর্তব্য।
