Disaster in the northwest, threat of new low pressure:বর্ষা মানেই দেশের বিস্তীর্ণ অংশে স্বস্তি ও দুশ্চিন্তার মিশেল। একদিকে গ্রীষ্মের তাপ থেকে মুক্তি, কৃষিক্ষেত্রে সজীবতা, অপরদিকে লাগাতার বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ও সমতল অঞ্চলে দুর্যোগ নেমে আসে। এবারের মৌসুমী বায়ুর প্রকোপ বিশেষভাবে দেখা দিয়েছে উত্তর-পশ্চিম ভারতে। প্রবল বর্ষণে একদিকে যেমন নদী উপচে পড়ছে, পাহাড়ি ঢালে ধস নামছে, অন্যদিকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলেও নতুন করে নিম্নচাপের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা, আগামী কয়েক দিনে আবহাওয়ার এই পরিবর্তন আরও ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে।গত কয়েক সপ্তাহে উত্তরাখণ্ড, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং পাঞ্জাবে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় কাদা ধস, নদী ভরতি জলের স্রোতে ভেসে যাওয়া গ্রাম, ভাঙা সেতু—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কার্যত বিপর্যস্ত। দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলেও রেকর্ড বৃষ্টিপাতে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়েছে। বহু এলাকায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত, নিত্যযাত্রীরা ভোগান্তিতে।এদিকে আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আরব সাগরে একটি সিস্টেম তৈরি হয়েছে যা গুজরাটের নালিয়া থেকে প্রায় ৫৭০ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সময়ে বঙ্গোপসাগরেও নতুন নিম্নচাপের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর ফলে দেশের পশ্চিম ও পূর্ব দু’দিকেই আবহাওয়া পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রবল।প্রবল বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলিতে ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) ও সেনা নামানো হয়েছে।
উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলে উদ্ধারকার্য চলছে টানা। দিল্লি ও পাঞ্জাবে প্রশাসন সাধারণ মানুষকে অযথা ঘর থেকে বেরোতে নিষেধ করেছে। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, গুজরাট উপকূলে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে উপকূলবর্তী জেলায় মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষিদ্ধ করা হবে। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিবৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলির মানুষ ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। হিমাচলের কুল্লু এলাকার বাসিন্দা রাজীব শর্মা জানিয়েছেন, “প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ, দোকানপাট ভেসে গেছে। এমন পরিস্থিতি আগে খুব কম দেখেছি।” দিল্লির মায়াপুরি এলাকার বাসিন্দা রুকসানা বলেন, “অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটু জলে ডুবে যায়। অফিস যেতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে।” অন্যদিকে গুজরাট উপকূলবর্তী গ্রামগুলিতে মৎস্যজীবীরা চিন্তিত, কারণ নিম্নচাপ তৈরি হলে তাদের জীবিকার ওপর বড় আঘাত আসবে।আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, একই সময়ে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া অত্যন্ত বিরল। এর ফলে দ্বিগুণ মাত্রায় জলীয় বাষ্প ঢুকছে দেশের মূল ভূখণ্ডে, যা বৃষ্টিপাতকে বাড়াচ্ছে। উত্তর-পশ্চিম ভারতে ইতিমধ্যেই গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
এর ফলেই পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে ব্যাপক ধস ও প্লাবন দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, আগামী সপ্তাহে বিদর্ভ, মধ্যপ্রদেশ ও কর্ণাটকেও প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে এটি একদিকে সুফল আনলেও অতিবৃষ্টিতে ধান ও ডাল জাতীয় ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল।আগামী কয়েক দিনে দেশের আবহাওয়া আরও অস্থির থাকবে। গুজরাট ও মহারাষ্ট্র উপকূলে নিম্নচাপের প্রভাবে প্রবল হাওয়া বইতে পারে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ পূর্ব ভারতের উপর প্রভাব ফেলবে, যার ফলে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও আসামে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, অন্তত এক সপ্তাহ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলতে পারে। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন—সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের অস্বাভাবিক আবহাওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।উত্তর-পশ্চিম ভারতে চলমান বিপর্যয় ইতিমধ্যেই বহু মানুষের জীবন ও জীবিকা কেড়ে নিয়েছে। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হলেও সাধারণ মানুষকেও সচেতন থেকে নিরাপত্তা বিধি মেনে চলতে হবে। প্রকৃতির এই রুদ্র রূপের মোকাবিলায় প্রয়োজন একদিকে সরকারি উদ্যোগ, অন্যদিকে মানুষে মানুষে সহযোগিতা।