Friday, April 18, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদিলীপ ঘোষের বিয়ে, শুভেচ্ছায় কীর্তি আজাদ

দিলীপ ঘোষের বিয়ে, শুভেচ্ছায় কীর্তি আজাদ

Dilip Ghosh Marriage: আজ রাজ্য রাজনীতির আঙিনায় একদম অন্য রকম চিত্র! দীর্ঘদিন রাজনীতির ময়দানে একে অপরের প্রবল প্রতিপক্ষ হলেও, আজ সমস্ত বিভেদ, তর্ক-বিতর্ক, রাজনৈতিক মতপার্থক্য একেবারে ভেসে গেল খুশির জোয়ারে। কারণ, আজই বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও বর্তমান বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) সাতপাকে বাঁধা পড়লেন। আর সেই খবরে যিনি চমকে দিলেন গোটা রাজ্য রাজনীতিকে, তিনি হলেন তৃণমূল নেতা এবং প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ (Kirti Azad)। হ্যাঁ, যিনি গত লোকসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তিনিই আজ বাড়িতে মিষ্টি বিলি করে বলছেন, “মেরি ইয়ার কি শাদি হ্যায়…”। একটা বিয়ে, একটা সামাজিক অনুষ্ঠান, কীভাবে এক মুহূর্তে রাজনীতিকে ছাপিয়ে মানুষের আবেগ ও সম্পর্কের রং ছড়িয়ে দিতে পারে, তার নিখুঁত উদাহরণ হয়ে উঠল আজকের দিনটা।

dilip ghosh 1744964792394 1744964836162

ঘটনা সত্যিই চমকপ্রদ! দিলীপ ঘোষ, যাঁকে বাংলার রাজনৈতিক পরিসরে একজন রুক্ষ, কড়া ভাষার স্পষ্টভাষী নেতা হিসেবে চেনা যায়, যিনি একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তাঁর মন্তব্যের জন্য, যিনি রাজ্যের রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিজেপির অন্যতম মুখ, তিনি আজ নিজের ব্যক্তিগত জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করলেন। ১৯৬৪ সালের ১ আগস্ট খড়্গপুরে জন্মানো দিলীপবাবুর ছাত্রজীবন কেটেছে বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে। পরে RSS-এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে রাজ্য রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে ওঠেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। তাঁর অনুগামীরা বলেন, উনি লোকের সঙ্গে কথা বলতে জানেন, সরাসরি মাটির কাছাকাছি মানুষ। আবার বিরোধীরা বলেন, দিলীপ ঘোষ মানেই বিতর্ক, উস্কানি। তবে আজ এসব আলোচনা ছাপিয়ে একটা জিনিস সামনে এসেছে – দিলীপ ঘোষও একেবারে অন্যরকম মানুষ, যিনি ভালোবাসেন, সংসার করতে চান এবং ব্যক্তিগত জীবনে সুখ খুঁজে নিতে চান।

তবে সবচেয়ে বড় চমক ছিল, কীর্তি আজাদের প্রতিক্রিয়া। যিনি ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে, তিনিই আজ দিলীপ ঘোষের বিয়ের খবরে নিজের বাড়িতে মিষ্টি বিলি করছেন। হাসিমুখে বলছেন, “এখন রাজনীতি নয়, এখন বন্ধুর বিয়ে… আমি সত্যি খুশি। মেরি ইয়ার কি শাদি হ্যায়!” এটা কেবল রাজনৈতিক সৌজন্য নয়, এক মানবিকতার নিদর্শন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়েছি, ঠিক আছে, তবে মানুষ হিসেবে আমাদের বন্ধুত্বের একটা আলাদা জায়গা আছে। ও সুখী হোক, সেটাই চাই।” এই উক্তি শুনে অনেকেই বলছেন, রাজনীতিতে এমন মানবিক ছবি বড় বিরল।

এদিকে দিলীপ ঘোষের বিয়ে নিয়ে শুভেচ্ছার বন্যা বয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এক্স-এ (প্রাক্তন টুইটার) লেখেন, “দিলীপ ঘোষকে ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা। এর মধ্যে রাজনীতি খুঁজবেন না।” আবার যুব তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য লেখেন, “অনেক অভিনন্দন দিলীপ দা। মন থেকে খুশি হয়েছি। খুব ভালো হোক। নতুন বৌদি আপনার হাত থেকে তরোয়াল কেড়ে নিয়ে গোলাপ তুলে দিক। ভালো থাকুন দুজনে।” এই সব পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে। বিরোধী দলে থেকেও এমন আন্তরিক শুভেচ্ছা আজকালকার রাজনীতিতে খুব কম দেখা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক সাধারণ মানুষও তাদের মুগ্ধতা জানিয়েছেন, “আজকের দিনে রাজনীতির বাইরে মানুষ জয়ী হয়েছে।”

এই ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, রাজনীতির মঞ্চে যতই কাদা ছোড়াছুড়ি হোক, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং মানবিক অনুভূতি অনেক উঁচুতে থাকে। আজকের দিনে যখন রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে গালাগালি, একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা, হিংসা – এসব খবরেই সংবাদপত্র ভর্তি থাকে, তখন দিলীপ ঘোষের বিয়ে উপলক্ষ্যে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ ছবি এক অন্য মাত্রা তৈরি করে দিল। এটা নিঃসন্দেহে রাজনীতির মানবিক মুখ। যদিও কেউ কেউ বলছেন, এর পেছনে “রাজনৈতিক বার্তা” থাকতে পারে। তবে আজকের দিনে সেই সব বিশ্লেষণকে সরিয়ে রেখে, একটা সুন্দর মুহূর্তকেই উপভোগ করা উচিত। সাধারণ মানুষের কাছেও এই দৃশ্যটা একটা বড় বার্তা – রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা আর সৌজন্য বজায় রাখা উচিত।

এদিকে দিলীপ ঘোষের বিয়ের বিষয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানা গেছে, পাত্রী একজন সাধারণ পরিবারের সদস্য, রাজনীতির সঙ্গে কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই। একান্ত পারিবারিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই বিয়ে হয়েছে। এখন দিলীপবাবু ক’দিনের ছুটিতে যাচ্ছেন, পরে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন। সংসদ ভবনেও সহকর্মীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছার বার্তা আসছে বলে খবর।

আজকের ঘটনাটি আমাদের শেখায় – রাজনীতি ছাড়াও জীবন আছে, সম্পর্ক আছে, আবেগ আছে। দিলীপ ঘোষের মতো একজন বর্ষীয়ান নেতার জীবনে এমন আনন্দঘন মুহূর্তে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও পাশে দাঁড়াচ্ছেন, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এই সৌহার্দ্যের বাতাবরণই এক নতুন বার্তা দিতে পারে বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চে। হয়তো এখান থেকেই একটা নয়া অধ্যায় শুরু হতে পারে, যেখানে মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু সেই পার্থক্য কখনও সম্পর্ক বা মানবিকতা নষ্ট করবে না।

আজ দিলীপ ঘোষের বিয়ের খবরে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে উৎসবমুখর আবহ। অনেকেই বলছেন, “এই রকম রাজনীতি থাকলে দেশটা আরও সুন্দর হতো!” অনেকে আবার বলছেন, “বিয়ে মানেই নতুন শুরু। দিলীপ দা’র জীবনে এই নতুন পথচলা হোক শুভ, সুন্দর ও স্থায়ী।”

শেষে একটা কথাই বলব, রাজনীতি হোক মানুষকেন্দ্রিক, মানবিক হোক তার ভাষা। আর সেই পথেই আজ এক নতুন নজির গড়লেন দিলীপ ঘোষ ও কীর্তি আজাদ। দিলীপ ঘোষের নবদম্পতি জীবনের জন্য রইল ‘খবর বাংলার’ পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments