Dilip Dalal! Wearing the garland of law! : পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপাইবাজার বুধবার রাতে যেন এক বিস্ফোরণের কেন্দ্রে পরিণত হল—তবে এই বিস্ফোরণ রাজপথে নয়, রাজনীতির অভ্যন্তরীণ অঙ্গনে। দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত দিলীপ ঘোষকে এবার নিজের গড় মেদিনীপুরেই ‘দালাল’ বলে কটাক্ষ করে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপির একাংশ কর্মী-সমর্থকরা। এমনকি রাত ১০টা নাগাদ বিজেপির জেলা কার্যালয়ের মূল ফটকে তাঁর ছবি ঝুলিয়ে তাতে জুতো’র মালা পরানো হয়, আর কার্যালয়ের দরজায় ঝুলে গেলো তালা। স্লোগান উঠল, “দিলীপ দালাল হঠো! বিজেপি বাঁচাও!”—এই দৃশ্য যেন স্পষ্ট করে দিল, এবার বিজেপির অন্দরে বড়সড় দ্বন্দ্ব জমে উঠেছে, আর সেই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে রয়েছেন স্বয়ং দিলীপ ঘোষ।
ঘটনার সূত্রপাত বিকেলে, যখন দিলীপবাবু তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে যান দীঘার সদ্য উদ্বোধন হওয়া জগন্নাথ মন্দিরে। তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে, হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায় দুই নেতাকে। এই ছবি চাউর হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মেদিনীপুর জেলার একাংশ বিজেপি কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, “দিলীপ ঘোষ এখন আর দলের নয়, ওঁর মন পড়ে আছে তৃণমূলে। আমরা যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘাম ঝরিয়ে বিজেপিকে এই জেলায় প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, আজ সেই নেতাই তৃণমূলের সঙ্গে গল্প করছেন?” এক সময় দিলীপ ঘোষের গড় হিসেবে পরিচিত মেদিনীপুরে এমন দৃশ্য যে রাজ্য রাজনীতির কাছে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বয়ে আনবে, তা নিয়ে সংশয় নেই।
বিজেপির জেলা সভাপতি এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে নারাজ হলেও, বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল সরাসরি ও তীব্র। এক কর্মী বলেন, “যিনি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলেন, তাঁর বিজেপিতে থাকার কোনও অধিকার নেই। এটা বিশ্বাসঘাতকতা।” অন্য এক কর্মী বলেন, “দিলীপদা কি আজ দলবদল করতে চলেছেন? তাহলে অন্তত বলুন, এইভাবে পেছনে ছুরি মারবেন না।” এমনকি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ‘গদ্দারি’র অভিযোগ এনে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিও ওঠে বিক্ষোভ মঞ্চে।
এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ অবশ্য স্বভাবসুলভ হেসেই প্রতিক্রিয়া দেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, “আমি রাজনৈতিক সৌজন্য রক্ষা করেছি। মুখ্যমন্ত্রী একজন সম্মানীয় ব্যক্তি, আমি তাঁকে সম্মান জানাতে গিয়েছি, এতে ভুল কী?” যদিও এই ব্যাখ্যা কর্মীদের শান্ত করতে পারেনি।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “দিলীপ ঘোষের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের দূরত্ব নতুন নয়। কিন্তু এখন মেদিনীপুরের মতো নিজের গড়ে যখন এভাবে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে, তখন এটা দলীয় সংকটের দিকেই ইঙ্গিত করছে।” এক বিশ্লেষক জানান, “রাজ্য বিজেপিতে অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তৃণমূল নয়, বিজেপি নিজের নেতাদের দায়ে দিশাহারা। দিলীপ ঘোষ হয়তো আগামী নির্বাচনে কোথায় দাঁড়াবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন।”
ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাবও কম নয়। বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই মজা নিতে শুরু করেছে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করে বলেন, “বিজেপির নেতারাই বলছেন দিলীপ ঘোষ তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। আমরা কিছু বলিনি। দলের ভিতরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, স্বার্থ আর ক্ষমতার লড়াই চলছে। সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে কারা কোথায় দাঁড়িয়ে।”

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই লিখেছেন, “এক সময় যিনি নিজেই তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতেন, আজ তিনিই তৃণমূলের নেত্রীর সঙ্গে গল্প করছেন!” অন্য এক পোস্টে লেখা হয়েছে, “দিলীপ ঘোষ হয়তো রাজনীতির মঞ্চে শেষ ইনিংস খেলছেন।”
তবে এই ঘটনার অন্য দিকটাও আছে। কিছু বিজেপি কর্মী দিলীপ ঘোষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বলেছেন, “দলীয় সৌজন্য মানে এই নয়, তিনি দলবিরোধী কাজ করছেন। যারা বিক্ষোভ করছেন, তারা দলের শৃঙ্খলা ভাঙছেন।” ফলে এখন বিজেপির ভেতরে দ্বন্দ্বটা যে আরও প্রকট হচ্ছে, তা স্পষ্ট।
এই পরিস্থিতি থেকে দল কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, সেটাই এখন দেখার। দিলীপ ঘোষ কি মুখ খোলেন আরও স্পষ্টভাবে? বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব কি এই ঘটনার তদন্ত করে কোনও ব্যবস্থা নেন? না কি মেদিনীপুরে দলের ভিতর থেকেই ভাঙন আরও চওড়া হয়? আগামী দিনেই মিলবে উত্তর।