Devotees throng Sarvamangala Temple on New Year’s Eve:নতুন বছরের প্রথম দিন, মানে পহেলা বৈশাখ। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নতুন বছর শুরু হতেই বাঙালি সমাজের এক বিশেষ ঐতিহ্য, একটি নতুন সূর্যকে বরণ করে নিতে সবার মন আনন্দে ভরে ওঠে। আর এই উপলক্ষে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে যেমন ভক্তদের ঢল দেখা গেছে, তেমনই এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক এক মিলনস্থল। নববর্ষের প্রথম দিনেই, সারা বাংলার নানা প্রান্ত থেকে ভক্তরা এসে এই মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে, নিজের মন ও জীবনকে স্নান করতে আসেন। সারা বছর ধরে অপেক্ষা করা, এক পুণ্যস্থলে আসা, মা সর্বমঙ্গলার আশীর্বাদ গ্রহণ করা—এটা যেন সবার জীবনের এক চিরাচরিত রীতি।বিশেষ করে, আজকের দিনে, ১৪২৯ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে এমন ভিড়, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। সকাল থেকেই মন্দিরের চত্বর প্রায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ঘন্টাখানেকের মধ্যে মন্দিরের মূল মন্দিরে প্রবেশের জন্য একটি দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। সকাল বেলা, এক এক করে ঢুকে পড়তে শুরু করল হাজার হাজার ভক্ত। শঙ্খধ্বনি, ফুলের মালা, তাম্বুল, নতুন জামা, এই সবকিছু সঙ্গে নিয়ে ভক্তরা এসে মা সর্বমঙ্গলার কাছে আশীর্বাদ চাইলেন।মন্দিরের মহন্ত বাবু রামনিবাস দাস জানিয়েছেন, “এবারের নববর্ষে ভক্তদের উপস্থিতি সত্যিই অভূতপূর্ব। এতোদিন শুধু নতুন বছরের আনন্দ-উৎসবে মন্দিরের ভক্তরা আসতেন, কিন্তু এবার ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য এক বিশেষ দৃশ্য দেখা গেল। সবাই যেন একে অপরকে নতুন বছরটা ভালোভাবে কাটানোর আশীর্বাদ দিতে চাইছে।
”এছাড়াও, স্থানীয় প্রশাসন এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য মন্দিরে পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্দিরের চারপাশে অসংখ্য সেবক ও স্বেচ্ছাসেবক মানুষের সুবিধার্থে কাজ করছেন। মন্দিরের প্রবেশপথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সচেতন করা হচ্ছে। তবে, এমন বিশাল ভিড়ে মাঝে মাঝে কিছু সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে, যা স্বাভাবিক। এক ভক্ত জানান, “নিরাপত্তা ঠিকঠাক হলেও, ভিড় একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে। কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে, তবে মা সর্বমঙ্গলার আশীর্বাদ পেলে সব কষ্ট ভুলে যাই।”এই দিনে মন্দিরে আসা ভক্তদের একাধিক দিক থেকে উদ্বেগও প্রকাশ পেয়েছে। একদিকে করোনা পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, অন্যদিকে বিশাল ভিড়ের কারণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। তাই স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণে মাস্ক পরা এবং স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে, বহু ভক্তই একে গুরুত্ব সহকারে না নিয়ে শুধুমাত্র ধর্মীয় আবেগে উদ্বুদ্ধ হয়ে মন্দিরে ঢুকে যাচ্ছেন।মন্দিরে আগত এক ভক্ত, উজ্জ্বল দত্ত, বলেন, “নতুন বছরের প্রথম দিনটি সর্বমঙ্গলা মন্দিরে কাটানোর অনুভূতি অসাধারণ। এই মন্দিরে আসলে মনে হয় সব ধরনের দুঃখ দূর হয়ে যায়। মা সর্বমঙ্গলার আশীর্বাদ দিয়ে জীবনে নতুন আলো এনেছেন।”মন্দিরের কাছে বসবাসরত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, নববর্ষের দিন মন্দিরে এত ভিড় দেখা গেছে, তাঁদের ব্যবসাও ফুলে উঠেছে।

স্থানীয় দোকানদাররা বলছেন, “আজকের দিনে বেচাকেনা অনেক বেশি হয়েছে। ভক্তরা মন্দিরের সামনে ফুল, পছন্দের উপহার, ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে আসেন। নতুন বছরে ব্যবসা ভালো হওয়ার প্রার্থনা করতে সবাই আসছেন।” তবে ব্যবসায়ীরা কিছুটা উদ্বিগ্ন, কারণ ভিড় নিয়ন্ত্রণে কিছু অসুবিধা হচ্ছে।এই বিশাল ভিড় এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, সর্বমঙ্গলা মন্দির আবারও প্রমাণ করেছে যে এটি শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং এক বৃহত্তর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও। প্রতি বছরই এখানে আয়োজন করা হয় নানা ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, কিন্তু নববর্ষে এভাবেই যেন সবার মধ্যে এক নতুন শক্তি, এক নতুন আশার আলো সঞ্চারিত হয়। বিশেষ করে, বাঙালি সংস্কৃতি, জাতীয় ঐক্য এবং মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার এক অনন্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই মন্দির।মন্দিরের আশেপাশের এলাকাগুলিতে ভক্তদের আগমন, নতুন বছরের ঐতিহ্য এবং আনন্দের পাশাপাশি, ভিড়ের কারণে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, প্রশাসন ও মন্দির কর্তৃপক্ষের সঠিক উদ্যোগের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও সুসংহত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।এখন প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের বৃহত্তর ভিড়ের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যাতে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে এবং ধর্মীয় উৎসব সবার জন্য আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে। এর সাথে সাথে, ভবিষ্যতের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধির ওপর আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন।