Development of Habra Municipality is a straightforward municipality Narayan Saha:-একসময় যে শহরের কথা উঠলেই মানুষ বলত “জলে ডুবে শহর”, এখন সেই হাবড়াই ধীরে ধীরে উন্নয়নের নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে বলে দাবি করছেন হাবড়া পৌরসভার পৌরপ্রধান নারায়ণ সাহা। খবর বাংলার বিশেষ ক্যামেরার মুখোমুখি বসে তিনি অকপট স্বীকার করেছেন—সমস্যা আছে, কিন্তু চেষ্টা ও পরিকল্পনাও চলছে সমান্তরালে। ২৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হাবড়া পৌরসভা বর্তমানে ২৪টিই তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। এমন একটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান সাহার দাবি, “প্রতিটি ওয়ার্ডেই চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন হয়েছে—রাস্তাঘাট, পানীয় জল, স্ট্রিট লাইট থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পর্যন্ত।”বিশেষ করে জল সরবরাহ নিয়ে বিগত দিনের অভিযোগ এবার অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “পূর্বে যেখানে মানুষ বালতির পর বালতি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত, এখন সেখানে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছচ্ছে। যদিও সব ওয়ার্ডে এখনো শতভাগ কাজ শেষ হয়নি, কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে।”অন্যদিকে বর্ষার সময় জল জমে যাওয়া, নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়া—এই সমস্যা নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে। স্বীকার করেই নিলেন চেয়ারম্যান, “সত্যি কথা বলতে কি, হাবড়ার পুরনো ড্রেনেজ সিস্টেম আজকের শহরবাসীর জনসংখ্যা সামলাতে অক্ষম। ফলে অতিবৃষ্টির দিনে কিছু জায়গায় জল জমে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এই সমস্যা মেনে নিয়ে চুপ থাকিনি। একাধিক জায়গায় বড় ড্রেনের সংস্কার শুরু হয়েছে, আর বাকি অংশের জন্য DPR (ডিটেইল্ড প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার ও পৌর উন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেই আমরা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এগোচ্ছি।”

তবে হাবড়া শহরের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে যেটা উঠে এল, তা হল টেক্সটাইল হাব। বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রচেষ্টায় এই মেগা প্রকল্প ইতিমধ্যেই হস্তান্তরিত হয়েছে একটি বেসরকারি কোম্পানির হাতে, যেখানে তৈরি হবে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ। নারায়ণ সাহা বললেন, “এই টেক্সটাইল হাবের মাধ্যমে হাবড়ার চেহারা পাল্টে যাবে। এখানকার যুব সম্প্রদায় কাজের জন্য আর ভিন রাজ্যে যাবে না, নিজের শহরেই কাজ পাবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই প্রকল্পে আগ্রহী, এবং আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছি।”স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ক্ষেত্রেও উন্নয়নের রূপরেখা স্পষ্ট করেছেন চেয়ারম্যান। হাবড়ার বুকে তৈরি হয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বেসরকারি নার্সিং হোম, এবং সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোও উন্নত করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে চর্চিত এবং দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প ছিল ৬তলা বিশিষ্ট বস্ত্র হাট মাল্টিপ্লেক্স কমপ্লেক্স, যা এখন শহরের অন্যতম আকর্ষণ। নারায়ণ সাহা বলেন, “বস্ত্র ব্যবসা ছিল হাবড়ার পরিচিতি। আমরা সেটাকেই আধুনিক পরিকাঠামোয় এনে মাল্টিপ্লেক্স ও বিপণি কেন্দ্রের রূপ দিয়েছি। এখানকার ব্যবসায়ীদের আর বারাসাত বা কলকাতায় যেতে হবে না—হাবড়াতেই তাঁদের বিক্রির বড় বাজার তৈরি হচ্ছে।”
তবে রাজনৈতিক দিক থেকেও নজরকাড়া বিষয় হল, পুরো পৌরসভায় কোনও বিরোধী ওয়ার্ড নেই। অর্থাৎ হাবড়া এখন তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে একপ্রকার একচ্ছত্র দখলে। আসন্ন ২৬ তারিখের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের কাজই আমাদের প্রচার। আমরা বুথে গিয়ে বলছি না—‘ভোট দিন’। আমরা প্রতিটি পরিবারে গিয়ে বলছি—‘দেখুন, আমরা কী কাজ করেছি। যদি আপনাদের সন্তুষ্ট করি, তবে আশীর্বাদ দিন।’ গণতন্ত্র মানে বিকল্পের অধিকার, কিন্তু কাজ না দেখে ভোট চাওয়া রাজনীতির পরাজয়।”

হাবড়ার মানুষ এই উন্নয়নের ছোঁয়া কতটা অনুভব করছেন? স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তুষার সাহা বললেন, “আগে অফিস টাইমে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যেত না। এখন টাউন হলের রাস্তাটা দেখে বুঝতেই পারি—শহর বদলাচ্ছে।” অন্যদিকে, কলেজপড়ুয়া তনয়া মজুমদার বলেন, “নতুন মাল্টিপ্লেক্স হয়েছে, ক্যাফে হয়েছে, ট্রাফিক সিস্টেম আগের চেয়ে উন্নত। তবে জল জমা সমস্যা এখনও একটা বড় সমস্যা, ওটা যদি ঠিক হয়, তাহলে হাবড়া সত্যিই একটা আধুনিক শহর হয়ে উঠবে।”তবে সবকিছু সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—শহরের বিস্তৃতি যেভাবে বাড়ছে, তার সঙ্গে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কতটা তাল মেলাতে পারছে? পৌরপ্রধানের আশ্বাস, আগামী পাঁচ বছরে হাবড়া হবে মডেল মিউনিসিপ্যালিটি। তাঁর ভাষায়, “হাবড়া হবে শুধু জেলার গর্ব নয়, গোটা বাংলার গর্ব। আমরা যেভাবে কাজ করছি, সেখানে দলমত নয়, নাগরিক স্বার্থটাই মুখ্য। আমরা চাই—হাবড়া হোক পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত, আর সচল শহর।”সবশেষে বলতেই হয়, নারায়ণ সাহার এই “সোজাসাপ্টা” বক্তব্য একদিকে যেমন উন্নয়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে, তেমনই শহরের সমস্যা স্বীকার করে তার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ফলে আসন্ন পুর নির্বাচনে এই দায়বদ্ধতাই ভোটারদের সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।