Devastating fire breaks out at Goregaon Film City in Mumbai!: ভর সন্ধেবেলায় মুম্বাইয়ের গোরেগাঁও ফিল্ম সিটির কাছে সন্তোষ নগর বস্তিতে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আচমকাই আগুন লেগে যায় এবং মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ১৫০ থেকে ২০০ টি ঝুপড়িতে ছড়িয়ে পড়ে, পাশাপাশি প্লাস্টিক শেড, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও অন্যান্য একাধিক স্থাপনায় ভয়াবহভাবে ক্ষতি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হঠাৎই কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ, এবং আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে দূর থেকে তা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল।এই বিধ্বংসী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকলের ১৫টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দমকল কর্মীরা রাত ১১:৪৪ নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। এছাড়াও চারটি জাম্বো ট্যাঙ্কার, শ্বাসযন্ত্র, অ্যাম্বুলেন্স সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে দমকল কর্মীরা তৎপরতা চালান। স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং আশেপাশের ঝুপড়িগুলোর বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।
একজন দমকল কর্মী জানান, “এই ভয়াবহ আগুন ফিল্ম সিটির কাছে বস্তি এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। আশেপাশের অন্যান্য স্থাপনায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ফলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে কীভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলো, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।”স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অনেকেই তাদের সম্পূর্ণ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন এবং মাথার ওপর ছাদ হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এক বাসিন্দা, মনোজ শর্মা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন, তিনি বলেন, “আমার ছোট্ট ঘরটিই ছিল একমাত্র সম্বল, সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এখন কোথায় যাবো? প্রশাসনের উচিত আমাদের সাহায্য করা।”স্থানীয় এনজিও এবং সেবামূলক সংস্থাগুলি ইতোমধ্যে দুর্গত মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। অনেকেই খাবার, জল এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। তবে প্রশাসনের তরফ থেকে কী ধরনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরে বস্তি এলাকায় এমন অগ্নিকাণ্ড নতুন কিছু নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক সংযোগ, গ্যাস সিলিন্ডারের লিক কিংবা অসতর্কতার কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আগুন আরও কিছুক্ষণ ধরে জ্বলত, তাহলে তা ফিল্ম সিটির ভেতরেও ছড়িয়ে পড়তে পারত এবং আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারত।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি এক বড় শিক্ষা দিল যে শহুরে বস্তি এলাকাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। বিশেষ করে ঘিঞ্জি এলাকায় অগ্নি নির্বাপণের জন্য আরও কঠোর বিধি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। দমকল বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা বিষয়টি নিয়ে একটি পর্যালোচনা করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুম্বাইয়ে বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বারবার ঘটছে। ২০১৮ সালে কামালা মিলস কমপাউন্ডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যেখানে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২০২১ সালে মালাডের একটি বস্তিতে আগুন লেগে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।এদিকে, মুম্বাইয়ের বাসিন্দারা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, “প্রতিবারই আগুন লাগে, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রশাসন আশ্বাস দেয়, কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান কখনও হয় না। দমকল বিভাগের আরও উন্নত পরিকাঠামো থাকা দরকার।”এই ভয়াবহ ঘটনার পর মুম্বাই পুলিশ ও দমকল বিভাগ যৌথভাবে তদন্ত চালাচ্ছে। কীভাবে এই আগুন লাগল, কোনো নাশকতা জড়িত আছে কিনা, নাকি এটি নিছক দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত গোটা শহরের নজর রয়েছে এই ঘটনার পরবর্তী তদন্ত ও পুনর্বাসন ব্যবস্থার দিকে।