Thursday, April 10, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যআউশগ্রামের জঙ্গলে 'রঘু ডাকাত' সিনেমার শুটিংয়ে 'দেব'

আউশগ্রামের জঙ্গলে ‘রঘু ডাকাত’ সিনেমার শুটিংয়ে ‘দেব’

‘Dev’ in the jungle of Aushgram because of the movie ‘Raghu Dak’:গত কয়েক বছরে আউশগ্রামের আদুরিয়ার জঙ্গলে ময়ূরের সংখ্যা বেড়ে গেছে হু হু করে। সকাল-বিকেল তাদের দেখা মেলে গৃহস্থের খামারে, এমনকি টিনের চালেও দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় এই সুন্দর পাখিদের। কিন্তু তাই বলে সেই গভীর, নির্জন অরণ্যে হঠাৎ করে একদল দুর্ধর্ষ ডাকাত ঘোড়া ছুটিয়ে প্রবেশ করবে, এ তো ভাবনাতেই আসেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের! লাল মোরামের রাস্তা ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে ঘোড়ার খুরের শব্দে, সঙ্গে আলখাল্লা গায়ে, মাথায় পাগড়ি, সুঠাম শরীরের ডাকাত দল – আর তাঁদের নেতৃত্বে সাদা ঘোড়ায় চড়ে মুখে চাপ দাড়ি নিয়ে এক দীর্ঘাঙ্গী পুরুষ। কে এই পুরুষ? হ্যাঁ, তিনি আর কেউ নন – টলিউডের সুপারস্টার ও ঘাটালের সাংসদ দেব! আউশগ্রামের আদুরিয়া জঙ্গলে গত মঙ্গলবার ও বুধবার টানা দুদিন ধরে চলল দেব অভিনীত ‘রঘু ডাকাত’ সিনেমার শ্যুটিং। দৃশ্যগুলো এমন বাস্তব, এমন নাটকীয় যে স্থানীয় মানুষজন ভিড় করে দেখলেন গোটা শ্যুটিং। যেন সিনেমা নয়, সত্যিকারের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি!

dev cover

এই সিনেমার পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি এর আগেও ‘গোলন্দাজ’, ‘দুর্গেশগর’ – এই ধরণের ঐতিহাসিক ও সাহসিকতার কাহিনি নিয়ে কাজ করেছেন। ‘রঘু ডাকাত’ তাঁর নতুন উদ্যোগ, যেখানে বাংলার প্রেক্ষাপটে এক রহস্যময় ও রোমাঞ্চকর ডাকাতির গল্প তুলে ধরা হচ্ছে। রঘু ডাকাতের চরিত্রে দেব এক নতুন রূপে হাজির হচ্ছেন – গম্ভীর, রূঢ় কিন্তু আবার মানবিক। সঙ্গে রয়েছেন টলিউডের নামজাদা তারকারা – রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সোহিনী সরকার, এবং ইধিকা পাল। প্রত্যেকেই এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে, এবং তাঁদের প্রত্যেকেরই শ্যুটিং হবে এই জঙ্গল সংলগ্ন অঞ্চলেই।

এই আউশগ্রামের কালিকাপুর গ্রামে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের সাত মহলার রাজবাড়ি, যেটি বহুদিন ধরেই টলিউড-বলিউড পরিচালকদের নজরে ছিল। নয় বছর আগে এখানেই ‘তিন’ সিনেমার শ্যুটিং করেছিলেন বলিউডের বিগ বি – অমিতাভ বচ্চন। সঙ্গে ছিলেন বিদ্যা বালন, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী এবং সব্যসাচী চক্রবর্তী। সেই সময় থেকেই এলাকাবাসীরা সিনেমার প্রতি উৎসাহী হয়ে ওঠে। এমনকি কয়েক মাস আগেই বলিউড অভিনেত্রী কাজলও শ্যুটিং করেন এই অঞ্চলে। এবার দেব এসেছেন – ফলে উন্মাদনা তুঙ্গে।

শ্যুটিংকে ঘিরে গোটা গ্রামে এক উৎসবের আবহ। কেউ স্কুল কামাই করে ছুটে এসেছে দেবকে দেখতে, কেউ পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে ঘোড়া ছোটানোর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছে। দোকানপাট, চা-স্টল – সব জায়গায় শুধু একটাই আলোচনা – “দেব কি সত্যি শুটিং করছেন এখানে?” গ্রামের এক বৃদ্ধা – মালতী দেবী জানালেন, “আমার জীবনে প্রথমবার দেবকে সামনে থেকে দেখলাম। যেন সিনেমার মধ্যেই ঢুকে পড়েছি।” ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ‘দেবদা, দেবদা’ করে চিৎকার করছে, কেউ আবার তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলেছে, কেউ শুধু দূর থেকে দেখে তৃপ্ত হয়েছে।

এই শ্যুটিং শুধু বিনোদনের উন্মাদনাই আনেনি, এনেছে একাধিক সম্ভাবনাও। স্থানীয় হোটেল, খাবারের দোকান, ছোট ছোট পরিবহণ ব্যবসা – সবই লাভবান হয়েছে এই কয়েকদিনে। অনেকেই বলছেন, যদি এই জায়গা আরও সিনেমার লোকেশনে পরিণত হয়, তবে পর্যটনের দিক থেকেও অঞ্চলটি উপকৃত হবে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জানালেন, “আমরা চাই এই অঞ্চল সিনেমার হাব হয়ে উঠুক। সরকারি সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে এখানেই ফিল্ম সিটির স্বপ্ন দেখা যেতে পারে।”

তবে পরিবেশপ্রেমীরা একটু চিন্তিত। কারণ জঙ্গলের মাঝে যেহেতু শ্যুটিং হয়েছে, কিছুটা হলেও জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়তে পারে। ময়ূর, বনরুই, শিয়াল – এদের বাসস্থানকে যেন কোনোভাবেই হানি না করে এই কাজ, সে দিকেও নজর রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমরা বনদফতরের অনুমতি নিয়েই কাজ করছি। একটি পাখিকেও বিরক্ত না করে যতটা সম্ভব সাবধানতার সঙ্গে শ্যুট করছি।”

raghu dakat upcoming bengali film starring dev by dhrubo banerjee on larger than life fictional story first look launches

আর দেব? তিনি জানালেন, “এই জায়গার সৌন্দর্য অসাধারণ। বাংলার মাটিতে এত বৈচিত্র্যময় লোকেশন আছে, তা অনেকে জানেনই না। আমি চাই, বাংলার সিনেমা, বাংলার দর্শক – সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যাক। আর ‘রঘু ডাকাত’ শুধু একটা সিনেমা নয়, এটা একটা অভিজ্ঞতা। এই জঙ্গলে শ্যুট করা মানে একটা ঐতিহাসিক চরিত্রকে অনুভব করা।”

শ্যুটিং শেষ হলেও মানুষের মনে রয়ে গেল সেই দিনের স্মৃতি। দেবের ঘোড়ায় চড়া, বন্দুক হাতে ডাকাত দলের হুঙ্কার, রাজবাড়ির রহস্যময় গলি – সব মিলিয়ে যেন একটা দিন নয়, একটা সিনেমা হয়ে গেল গোটা আউশগ্রাম!

এইভাবে সিনেমার হাত ধরে একদিকে যেমন বাংলার মাটির সৌন্দর্য উঠে আসছে রুপোলি পর্দায়, তেমনই অন্যদিকে গ্রামের মানুষের জীবনে আনে আনন্দ, কর্মসংস্থান ও গর্ব। যদি ভবিষ্যতেও এই ধারা বজায় থাকে, তবে হয়তো একদিন আউশগ্রামই হয়ে উঠবে বাংলার ‘সিনে ভ্যালি’ – যেখানে প্রকৃতি, ইতিহাস আর আধুনিক সিনেমার কাহিনি মিলে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments