Despite Trump’s tariff threats, Shri Vardhoyono of New Delhi : আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওঠাপড়া বরাবরই ভারতের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে এসেছে। দেশের তেল আমদানির নির্ভরতা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় বৈদেশিক নীতির সঙ্গে অর্থনৈতিক কৌশলের যোগসূত্রও স্পষ্ট। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে তেলের বাজারে অস্থিরতা বাড়লেও, ভারত তার দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক বন্ধু রাশিয়ার দিকেই ঝুঁকেছে। কারণ একটাই—সস্তায় তেল কেনার সুযোগ। পশ্চিমা চাপ, আমেরিকার নীতি কিংবা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা—এসবকে উপেক্ষা করেই নয়াদিল্লি রুশ তেল আমদানির পথ বেছে নিয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলির বড় অংশ রাশিয়ার উপর একাধিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপায়। আন্তর্জাতিক তেলের বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। তবে এই পরিস্থিতিতেই রাশিয়া ভারতকে তুলনামূলকভাবে কম দামে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করতে থাকে। ফলস্বরূপ, ভারত বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করে উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় করেছে। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের দাবি, গত সাড়ে তিন বছরে অন্তত ১৭ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে নয়াদিল্লি। ভারতীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক প্রায় ১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল কেনার ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার কিছুটা হলেও শক্তিশালী হয়েছে। তবে এই সাফল্যের মাঝেই এসেছে ট্রাম্পের শুল্কনীতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেন ভারতীয় তেল আমদানির উপর। তার লক্ষ্য স্পষ্ট—রুশ তেল কেনা থেকে নয়াদিল্লিকে বিরত করা। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারত তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি।

সরকারিভাবে ভারতের তরফে বারবার জানানো হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেবল বাণিজ্য নয়, বরং দীর্ঘদিনের কৌশলগত বন্ধুত্বের উপর দাঁড়িয়ে। নয়াদিল্লির যুক্তি, সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বিকল্প সরবরাহ লাইন তৈরি রাখা জরুরি। রাশিয়া সেই জায়গায় ভরসা জোগাচ্ছে।বিদেশ মন্ত্রকের একাধিক বক্তব্যে স্পষ্ট করা হয়েছে, ভারতের কাছে তেলের দরকষাকষি শুধুই অর্থনৈতিক স্বার্থের বিষয় নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার কৌশলও বটে।

দেশের অর্থনীতি বিশ্লেষক ও সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যত ভারতের জন্য লাভজনক। কলকাতার অর্থনীতিবিদ সৌমেন ভট্টাচার্য বলেন, “ভারত যে সাহস দেখিয়েছে তা প্রশংসনীয়। পশ্চিমা চাপকে উপেক্ষা করে সাশ্রয়ের পথ বেছে নেওয়া দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত দিয়েছে।” আবার সাধারণ মানুষও মনে করছেন, তেলের দাম বাড়লেও সস্তায় রুশ তেল আমদানি দেশীয় বাজারে অন্তত কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, আমেরিকার চাপ আরও বাড়লে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।

ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত কেবল ভারতের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির অংশ। আমেরিকার দৃষ্টিতে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমানো ভারতের জন্য আবশ্যক। কিন্তু ভারতের জন্য প্রশ্নটা কেবল নির্ভরতার নয়, বরং বাস্তবিক আর্থিক লাভ। ১৭ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় কোনো ছোট অঙ্ক নয়। এই অর্থ দেশের অবকাঠামো, স্বাস্থ্য বা অন্যান্য খাতে ব্যয় করার সুযোগ তৈরি করেছে। তাছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার শক্তিশালী হওয়ায় রুপির মান রক্ষা করতেও এটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। তবে একইসঙ্গে ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। যদি আমেরিকার চাপ আরও বাড়ে, তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়ার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আগামী দিনে ভারতের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ভারসাম্য রক্ষা করা। একদিকে দীর্ঘদিনের কৌশলগত বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা, অন্যদিকে পশ্চিমা দুনিয়ার চাপ সামলে আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সেতুবন্ধন রক্ষা করা। তেলের বাজারে অস্থিরতা যদি আরও বাড়ে, তবে ভারতকে বিকল্প সরবরাহের পথ খুঁজতে হবে। একইসঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকিও বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সস্তায় রুশ তেল কেনার পথে নয়াদিল্লির কৌশল নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত দিয়েছে। ট্রাম্পের শুল্ক বাণ ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও, নয়াদিল্লি তার অবস্থানে অনড়। রাশিয়ার সস্তা তেল আমদানি করে ১৭ বিলিয়ন ডলারের সাশ্রয় ভারতের অর্থনীতিকে নতুন শক্তি জুগিয়েছে। দীর্ঘদিনের বন্ধু রাশিয়ার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশের আর্থিক স্বার্থ—এই দুইয়ের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে নয়াদিল্লির কৌশল। আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও আপাতত ভারত তার পথেই অবিচল।