Delegation in Kulti to investigate water problems:-আসানসোলের কুলটি এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। দিনের পর দিন পানীয় জলের সংকট এলাকাবাসীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। পরিস্থিতি এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে এলাকার মানুষ বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো সমাধান পাননি। অবশেষে এই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে আসানসোল পৌরসভা এবং সেল ইস্কো কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত সপ্তাহে জেলাশাসকের দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, সোমবার কুলটি এলাকার পানীয় জলের সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখতে এবং সমাধানের পথ বের করতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। সোমবার সকাল থেকেই কুলটির মনবেড়িয়া পাম্প হাউস এলাকায় উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্ধারিত সময়েই প্রতিনিধি দল এসে পৌঁছায়। এই দলে ছিলেন সেল ইস্কো কর্তৃপক্ষের আধিকারিক, রেল কর্তৃপক্ষ, ডিভিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) আধিকারিক এবং জেলাশাসকের দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা। প্রতিনিধি দল এলাকার বিভিন্ন জল সরবরাহ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, কুলটি এলাকায় ৬২, ৬৪, ৭০ এবং ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের শিমুল গ্রাম, কেন্দুয়া বাজার, নিউ কলোনি সহ একাধিক এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এই সমস্ত এলাকায় জল সরবরাহের জন্য মূলত নির্ভর করতে হয় সেল ইস্কো কর্তৃপক্ষের উপর। আগে কারখানা সংলগ্ন আবাসনগুলিতে পানীয় জল সরবরাহ সঠিকভাবে হতো, কিন্তু গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। এখন অনেক এলাকায় দিনে কয়েক ঘণ্টা জল আসে, আবার কোথাও কোথাও একেবারেই জল আসছে না। পানীয় জলের এই সমস্যার জন্য রীতিমতো ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। এক বাসিন্দা জানালেন, “এখানে কয়েক বছর আগেও জল সরবরাহ মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু এখন দিনে এক-দুই ঘণ্টার বেশি জল পাওয়া যায় না। অনেক সময় সেই জলও এত ময়লা থাকে যে পান করা তো দূরের কথা, হাত ধোয়ারও অযোগ্য।
অন্য এক বাসিন্দার কথায়, “আমাদের এলাকার শিশু এবং বয়স্করা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে। পানের জলের অভাবে অনেক সময় দূর থেকে জল কিনে আনতে হয়। কিন্তু সবাই তো আর কিনতে পারে না। আমরা চাই অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান হোক।” প্রতিনিধি দল মনবেড়িয়া পাম্প হাউস সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জল সরবরাহ কেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখেন। তাঁরা সরাসরি পাম্পের কাজকর্ম, পাইপলাইনের অবস্থা এবং জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। এরপর স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন।সেল ইস্কো কর্তৃপক্ষের একজন আধিকারিক জানান, “আমরা সমস্যার মূল কারণগুলি খতিয়ে দেখছি। পাইপলাইনগুলির সংস্কার এবং জল সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ জরুরি। আমরা এই বিষয়ে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেব।”
রেল কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিকের মতে, “কুলটি এলাকার জল সরবরাহ ব্যবস্থায় রেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং সেল ইস্কো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করব।” প্রতিনিধি দলের এই পরিদর্শনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও তাঁরা চান, এই সমস্যার সমাধান দ্রুত হোক এবং শুধু আলোচনা বা বৈঠকের মধ্যেই আটকে না থাকে। সেল ইস্কো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাইপলাইনের সংস্কার এবং নতুন পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে এর জন্য কিছুটা সময় লাগবে।এদিনের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, কুলটি এলাকার জল সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিদিনের কার্যকলাপ নজরদারি করা হবে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করার জন্য একটি টাস্ক ফোর্সও তৈরি করা হবে। ডিভিসি এবং রেল কর্তৃপক্ষও এই কাজে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।পানীয় জল মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলির মধ্যে অন্যতম। তাই এই সমস্যার সমাধান দ্রুত হওয়া জরুরি। কুলটির স্থানীয় মানুষরা প্রতিনিধি দলের আশ্বাসে কিছুটা আশার আলো দেখলেও, তাঁদের মধ্যে এক ধরনের সংশয় এখনও রয়ে গেছে। কারণ, এর আগে বহু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কার্যক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায়নি। তবে এই বারবার উদ্যোগ এবং প্রশাসনিক নজরদারি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে কুলটির মানুষদের জলসংকট থেকে মুক্তি পেতে হয়তো আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না