Deadly attack in Ukraine after a year and a half of preparation:-তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ময়দান আবারও কাঁপল এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে। যুদ্ধের শুরু থেকে ইউক্রেন একের পর এক পাল্টা প্রতিরোধ চালিয়ে গেলেও, রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে এভাবে ধ্বংসাত্মক আঘাত হানা—তা যেন প্রায় অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু সেই অকল্পনীয়কেই বাস্তব করল ইউক্রেন, দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে একেবারে নিখুঁত পরিকল্পনা করে রাশিয়ার বুকে চালালো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা। সূত্র বলছে, এই হামলায় রাশিয়ার অন্তত ৪১টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর বোমারু বিমান Tu-95, Tu-22M3 এবং A-50। আগুন ধরে গেছে একাধিক বিমানঘাঁটিতে, বিস্ফোরণে কেঁপেছে রাশিয়ার মাটি, আর এই হামলার রূপকার—খোদ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।ঘটনার সূত্রপাত রবিবার বিকেলে। রাশিয়ার ইরকুটস্ক অঞ্চলের বেলায়া বিমানঘাঁটি-সহ চারটি বায়ুসেনা ঘাঁটি এবং দুটি এয়ারফিল্ডকে লক্ষ্য করে একযোগে আছড়ে পড়ে ইউক্রেনের ড্রোন বাহিনী। ৪০০০ কিলোমিটার দূর থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে, যা এক কথায় অবিশ্বাস্য। জানা গেছে, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন এই হামলার জন্য ট্রাক বোঝাই ড্রোন ও কন্টেনারভিত্তিক হামলার পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছিল। ইউক্রেনের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Associated Press (AP)-কে জানান, “এটি ছিল এক নিখুঁত কৌশলগত অভিযান। আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট নিজে এই অপারেশনের তদারকি করেছেন।”
এই হামলার পর রাশিয়ার ওই অঞ্চলের গভর্নর ইগর কোবজেভ বলেন, “প্রথমবারের মতো আমাদের এই অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন ঢুকেছে। আমরা ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি।” রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক অবশ্য প্রথমে হামলার বিষয়টি স্বীকার করতে না চাইলেও পরে চাপের মুখে স্বীকার করে যে, “বেশ কয়েকটি বিমানঘাঁটিতে হামলা হয়েছে, এবং কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” তবে ইউক্রেনের দাবি, এই হামলায় অন্তত ৪১টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে Tu-95 বোমারু বিমান, যা রাশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী পারমাণবিক হামলা বহনকারী বিমান।এই হামলার পর রাশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণ ও আগুন লেগে যাওয়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। রাতের আকাশে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন, ভস্মীভূত বিমানঘাঁটি, আর রক্তাক্ত রাশিয়ার ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের এক সামরিক বিশ্লেষক আন্দ্রেই কোলেশনিকোভ বলেন, “এটি ছিল প্রতীকী আক্রমণ নয়, বরং রাশিয়ার সামরিক ক্ষমতাকে ভেঙে ফেলার এক সরাসরি চেষ্টা। এতে রাশিয়ার বিমানবাহিনী চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।”এই হামলার প্রভাব শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাশিয়ার সাধারণ মানুষের জীবনেও নেমে এসেছে আতঙ্কের ছায়া। ইরকুটস্ক অঞ্চলের এক বাসিন্দা লুদমিলা সারকোভা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে একটা বিশাল আওয়াজ শুনতে পেলাম। জানালা কেঁপে উঠল। এরপর দেখি চারদিকে আগুন আর ধোঁয়া। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ খুবই আতঙ্কিত।”
অন্যদিকে, এই হামলা নিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। অনেকেই রাশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রাশিয়ার এক বিরোধী নেতা আলেক্সেই নভালনির ঘনিষ্ঠ সহকর্মী লিওনিড ভলকভ বলেছেন, “দেড় বছর ধরে ইউক্রেন পরিকল্পনা করল, ড্রোন নিয়ে আসল, আর আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কিছু টেরই পেল না? এটা কি ব্যর্থতা নয়?”অন্যদিকে ইউক্রেনের মানুষের মধ্যে এই হামলা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদিকে দেশের গৌরব আর জয়-এর আবেগ, অন্যদিকে আরও বড় যুদ্ধের আশঙ্কা। কিয়েভের এক বাসিন্দা মারিয়া পেত্রোভা বলেন, “আমরা রাশিয়াকে শিখিয়ে দিলাম, আমাদের ছোট করে দেখার ভুল যেন না করে। কিন্তু এখন আমাদেরও সাবধান থাকতে হবে, কারণ ওরা নিশ্চয়ই প্রতিশোধ নেবে।”আন্তর্জাতিক মহলে এই হামলাকে যুদ্ধের নতুন এক মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ জেমস হ্যামিলটন বলছেন, “এই হামলা দেখিয়ে দিল, ইউক্রেন এখন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং আক্রমণাত্মক যুদ্ধের দিকেও এগোচ্ছে। রাশিয়ার মাটিতে ঢুকে এই ধরনের হামলা যুদ্ধের মানচিত্র বদলে দিতে পারে।”
ভবিষ্যতের দিক থেকে দেখলে, এই হামলা হয়তো যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবে। রাশিয়া প্রতিশোধ নিতে পারে, যা ইউক্রেনের শহর ও সাধারণ মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে। একইসঙ্গে, নতুন করে যুদ্ধের ময়দানে প্রযুক্তির গুরুত্ব, বিশেষ করে ড্রোন যুদ্ধের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে। ড্রোনকে কেবল নজরদারি বা ছোটখাটো হামলার জন্য নয়, বরং বড় আঘাতের অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহারের দৃষ্টান্ত তৈরি করল ইউক্রেন।সবশেষে বলা যায়, দেড় বছরের নিখুঁত পরিকল্পনায় ইউক্রেনের মারণ হামলা শুধু একটি যুদ্ধ কৌশল নয়, এটি যুদ্ধের ধারা বদলানোর এক নতুন দৃষ্টান্ত। রাশিয়ার বুকে ঢুকে এমন হামলা ইউক্রেনের প্রতিবাদী শক্তি, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং নেতৃত্বের কৌশল-এর প্রকাশ। কিন্তু যুদ্ধের এই খেলায় শেষ পর্যন্ত কে জিতবে, আর কত সাধারণ মানুষ এর বলি হবে, সেই উত্তর হয়তো সময়ই দেবে।