Dead dolphin rescued from Old Digha : ওল্ড দিঘার সৈকতে বুধবার সকালে এক অদ্ভুত দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকেরা। সৈকতের ধারে এক বিশাল মৃত ডলফিন পড়ে থাকতে দেখে সবাই হতবাক হয়ে যান। প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা এই ডলফিনটি পাথরের খাঁজে আটকে ছিল, যার ফলে অনেকের নজরে আসেনি। তবে সৈকতে ভেসে আসা পচা দুর্গন্ধ থেকেই প্রথমে সন্দেহ হয়, এবং পর্যটকরা বনদপ্তরে খবর দেন। পরে বনদপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন এবং পাথরের ফাঁকে আটকে থাকা মৃত ডলফিনটিকে উদ্ধার করেন। এরপর সেটিকে বনদপ্তরের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার সংরক্ষণ এবং ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই ডলফিন সাধারণত গভীর সমুদ্রে থাকে, কিন্তু কোনো কারণে এটি উপকূলের এতটা কাছে চলে এসেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি কারণ এই মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে। প্রথমত, মৎস্যজীবীদের জালে আটকে গিয়ে বা জাহাজের ধাক্কায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে অনেক সময় ডলফিনরা সাগরের তীরে চলে আসে। এছাড়া, জলের দূষণ, প্লাস্টিক দূষণ, বা সমুদ্রের পরিবর্তিত বাস্তুতন্ত্রের কারণেও এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও সঠিক কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্তের পরই।
ডলফিনটি উদ্ধার হওয়ার পর সেটিকে এক ঝলক দেখার জন্য সৈকতের ধারে ভিড় জমায় বহু পর্যটক। কেউ কেউ ছবি তুলতে থাকেন, আবার কেউ দুঃখপ্রকাশ করেন সমুদ্রের এই অসাধারণ প্রাণীটির এমন করুণ পরিণতি দেখে। এক পর্যটক বলেন, “এত বড় একটা ডলফিন এখানে পড়ে থাকতে দেখে সত্যি খুব খারাপ লাগছে। আমরা সাধারণত ডলফিনকে প্রাণোচ্ছল অবস্থায় দেখি, কিন্তু আজ তাকে মৃত অবস্থায় দেখে মনটা ভারী হয়ে গেল।”

স্থানীয় এক মৎস্যজীবী জানান, “আমরা মাঝে মাঝেই দেখি যে সমুদ্র থেকে আহত ডলফিন বা কচ্ছপ তীরে চলে আসে, কিন্তু এভাবে পাথরের মধ্যে আটকে গিয়ে মৃত্যু—এটা খুবই দুঃখজনক।”
বনদপ্তরের কর্মীরা জানান, ডলফিনটি কীভাবে মারা গেল তা জানার জন্য ময়নাতদন্ত করা হবে। বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, “ডলফিনটি সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসবে। যদি দেখা যায় যে এটি জাহাজের ধাক্কায় মারা গেছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হবে। আর যদি কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক বা দূষণের কারণে মারা গিয়ে থাকে, তবে সেই বিষয়েও তদন্ত করা হবে।
এছাড়াও, বনদপ্তরের কর্মকর্তারা স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, “যদি কোনো আহত ডলফিন বা সামুদ্রিক প্রাণী সৈকতের কাছে চলে আসে, তবে দ্রুত বনদপ্তরকে জানানো উচিত, যাতে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।”
এই ঘটনায় পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের উপর মানুষের কার্যকলাপের কী প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং অতিরিক্ত মাছ ধরা—এসবই সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “যদি সমুদ্র দূষণ এবং নির্বিচারে মাছ ধরা এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা হয়তো আরও অনেক ডলফিন বা সামুদ্রিক প্রাণীকে মৃত অবস্থায় সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকতে দেখব।”
পরিবেশপ্রেমীদের মতে, এই ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এখনই যদি সচেতনতা বৃদ্ধি না করা হয় এবং দূষণ রোধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।
ওল্ড দিঘার সৈকতে মৃত ডলফিন উদ্ধারের ঘটনা যেমন দুঃখজনক, তেমনি এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে আমাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। বনদপ্তরের তদন্তের পর জানা যাবে, এই ডলফিনটির মৃত্যু কেবলই একটি দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে গভীর কোনো সমস্যা রয়েছে। তবে একটাই প্রশ্ন রয়ে যায়—আমরা কি আমাদের সমুদ্র এবং তার বাসিন্দাদের রক্ষা করতে পারবো?