...
Friday, April 4, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গঅশ্লীল নাচ না করায় নৃত্য শিল্পীদের বেধড়ক মার

অশ্লীল নাচ না করায় নৃত্য শিল্পীদের বেধড়ক মার

Dancers are beaten for not doing vulgar dances:নন্দকুমারের ঠেকুয়া বাজার সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার সংবাদ প্রকাশ্যে আসতেই নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা এলাকা। বৃহস্পতিবার রাতে এক পুজো উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে আসা নাচের দলের উপর আক্রমণ চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পুজো কমিটির কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এই যুবকেরা মদ্যপ অবস্থায় নৃত্যশিল্পীদের উপর অশ্লীল নাচ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে এবং তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় ব্যাপক মারধরের মতো নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয় শিল্পীদের। এই ভয়াবহ ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় মানুষজন এবং সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল যখন মেছাদার একটি নাচের দল, যারা বিভিন্ন গ্রামীণ পুজো ও উৎসবে অনুষ্ঠান করে থাকেন, অগ্রিম ২০০০ টাকা নিয়ে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আসে। তাদেরকে রাত্রি নটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা অনুষ্ঠান করার চুক্তি ছিল। তবে, রাত বাড়তে থাকলে ক্লাব কমিটির কয়েকজন যুবক নাচের দলের মহিলা সদস্যদের অশ্লীল নৃত্য করতে জোর করে। নাচের দলের অর্গানাইজার যখন তাদের দাবির বিরোধিতা করেন, তখন পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, যুবকেরা মদ্যপ অবস্থায় গ্রীন রুমে ঢুকে নাচের দলের মহিলা সদস্যদের শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। এতে শুধুমাত্র মহিলা শিল্পীরাই নয়, দলের অন্যান্য সদস্যরাও ব্যাপকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও, যুবকেরা তাদের ফোন আছাড় মেরে ভেঙে দেয়, যা পরবর্তী পর্যায়ে তদন্তকার্যকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

এই ঘটনার পরেই স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়, এবং নন্দকুমার থানার পুলিশ অবিলম্বে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কোনো পারমিশন নেওয়া হয়নি, এবং অনুমতি ছাড়াই এই অনুষ্ঠান চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। এই ধরনের ঘটনা যে শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলার প্রতি অশ্রদ্ধা নয়, বরং এটি সমাজের মধ্যে নারী ও শিল্পীদের প্রতি অসামান্য অবমাননাকর মনোভাবকেও তুলে ধরে।

ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় একটি সংস্থার কর্মী বলেন, “এই ধরনের আচরণ আমাদের সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। শিল্পীদের সম্মান রক্ষার জন্য এই ধরনের অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। একজন শিল্পীকে যদি তার শিল্প প্রদর্শনের জন্য এইরকম হেনস্থার শিকার হতে হয়, তবে আমাদের সমাজের সংস্কৃতি সত্যিই বিপন্ন।” অন্যদিকে স্থানীয় কিছু বাসিন্দার দাবি, এর ফলে এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে ভবিষ্যতে বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে। অনেকে বলেছেন যে, পুজো কমিটি এবং স্থানীয় প্রশাসনের তরফে এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।

ক্লাব কমিটির এক সদস্য, যিনি এই ঘটনার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তিনি জানান, “কিছু যুবক মদ্যপ অবস্থায় এমন অশোভন আচরণ করেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এদের সবাইকে এই ঘটনার জন্য দোষী মনে করা উচিত নয়।” এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন এবং থানা-পুলিশের তরফে ভবিষ্যতে এসব প্রোগ্রামে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।

এই ঘটনায় নারী শিল্পীদের উপর শারীরিক আঘাত এবং হেনস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এই ধরনের ঘটনার ফলে এলাকার সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং শিল্পীদের প্রতি সাধারণ মানুষের মনোভাবেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে। একই সঙ্গে, এই ঘটনা আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে আরও একবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ক্লাব কমিটির নিয়ন্ত্রণ এবং অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক নজরদারির প্রয়োজনীয়তা আজকের দিনে আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এমন ধরনের অপরাধ থেকে শিল্পীদের রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা এবং নিন্দার ঝড় বইছে। বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট জনের দাবী, শিল্পীদের প্রতি এই ধরনের আচরণ কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে এমন ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ রোধ করা জরুরি। এর মাধ্যমে শিল্পী সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.