Cyber fraud ring, 18 women arrested : সাইবার অপরাধের নতুন নতুন কৌশল এখন প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে উঠে আসছে। সাধারণ মানুষ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ী, এমনকি শিক্ষিত পেশাদাররাও এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। আর এবার, ব্যারাকপুর সাইবার ক্রাইম শাখা এবং দমদম থানার যৌথ অভিযানে ফাঁস হল এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণা চক্র। ঘটনাস্থল দমদমের এয়ারপোর্ট সংলগ্ন মতিলাল কলোনি, যেখানে একটি ভুয়ো কল সেন্টারের আড়ালে চলছিল বড়সড় সাইবার প্রতারণার ব্যবসা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ হানা দিলে বেরিয়ে আসে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ১৮ জন মহিলাকে, যাদের প্রত্যেকেই এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অভিযুক্তরা প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, এই প্রতারণা চক্রটি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলত। মূলত, ভুয়ো কল সেন্টারের আড়ালে বিদেশি ক্লায়েন্টদের টার্গেট করা হত। কখনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আপডেটের নাম করে, কখনো কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ পরিচয়ে ফোন করে এই চক্র সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিত। এরপর সেই তথ্য ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে টাকা হাতানো হতো। এমনকি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক লোন স্ক্যামের সঙ্গেও এই চক্রের যোগ থাকার সন্দেহ করছে পুলিশ।
সোমবার গভীর রাতে মতিলাল কলোনির ওই বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযুক্তরা প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা করলেও, পুলিশের কাছে থাকা তথ্য এবং ফোন রেকর্ড প্রকাশ্যে আসতেই সত্যি সামনে আসে। অভিযান চলাকালীন ছাদের জলের ট্যাংক থেকে উদ্ধার হয় দুই ব্যাগ ভর্তি মোবাইল ফোন এবং প্রচুর নথিপত্র, যেগুলো অভিযুক্তরা তড়িঘড়ি ধ্বংসের চেষ্টা করছিল। পুলিশের ধারণা, এই সমস্ত নথিপত্রের মধ্যে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ লুকিয়ে থাকতে পারে।
একজন অফিসার বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্রের উপর নজর রাখছিলাম। এতগুলো মোবাইল ফোন এবং নথি উদ্ধার হয়েছে, যা আমাদের তদন্তে বড় সাহায্য করবে। আপাতত ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”এই প্রতারণা চক্রের একাধিক শিকার ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। কলকাতার বাসিন্দা সৌমেন দাস জানান, “আমার ফোনে একদিন হঠাৎ একটি কল আসে, যেখানে জানানো হয় যে আমার ক্রেডিট কার্ড আপডেট করতে হবে, না হলে ব্লক হয়ে যাবে। আমি সরল বিশ্বাসে আমার ওটিপি শেয়ার করি এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০,০০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। পরে বুঝতে পারি, আমি প্রতারিত হয়েছি।”
এমনই এক প্রতারিত ব্যক্তি রঞ্জিত ঘোষ বলেন, “একটা লোনের বিজ্ঞাপন দেখে আমি ওদের সাথে যোগাযোগ করি। এরপর আমাকে বলা হয়, ৫০০০ টাকা প্রসেসিং ফি লাগবে। আমি টাকা পাঠাই, কিন্তু তারপর থেকেই নম্বর বন্ধ।”পুলিশ সূত্রের খবর, এই প্রতারণা চক্রটি মূলত মহিলাদের দিয়ে কাজ চালাত, যাতে সহজেই সন্দেহের বাইরে থাকা যায়। ব্যারাকপুর সাইবার ক্রাইম শাখার এক আধিকারিক বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের চক্রে পুরুষদের দেখা যায়, কিন্তু এখানে ১৮ জন মহিলাকে আটক করা হয়েছে। আমরা খতিয়ে দেখছি, এদের পিছনে কোনো বড় মাথা আছে কিনা।”
এদিকে, পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই চক্রের যোগ থাকতে পারে আন্তর্জাতিক সাইবার গ্যাংয়ের সঙ্গে, এমনটাই অনুমান তদন্তকারীদের। ইতিমধ্যেই ধৃতদের মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।