Crowds gather in Digha ahead of New Year : সামনেই পয়লা বৈশাখ, তার আগেই দীঘা যেন পর্যটকদের সাগরে ভেসে যাচ্ছে, একদিকে উইকএন্ড, অন্যদিকে নববর্ষের ছুটি, ফলে টানা কয়েকদিন ছুটির ফাঁদে পড়ে মানুষ ছুটে চলেছে প্রকৃতির কোলে, আর সেই আবেগের সবচেয়ে বড় বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে দীঘার বুকে, যেখানে এখন রোজকার চেনা ছন্দ ছেড়ে একেবারে মেলা-ধর্মী পরিবেশ তৈরি হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের এই জনপ্রিয় সমুদ্রতটে এখন শুধুই ভিড়, হাসি, আনন্দ আর ছুটি কাটানোর পরিকল্পনার গুঞ্জন, হাওড়া, কলকাতা, খড়গপুর, আসানসোল, মালদা, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর তো বটেই, এমনকি বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা থেকেও প্রচুর পর্যটক এসে গেছেন দীঘায় নববর্ষ উদযাপন করতে, হোটেলগুলোর বুকিং বহু আগেই ফুল হয়ে গেছে, এখন শেষ মুহূর্তে ঘর খোঁজার জন্য অনেককেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, এমনকি ট্রেন ও বাসেও ঠাঁই নেই, দীঘা স্টেশনে নামার আগেই প্ল্যাটফর্মে ঠাসাঠাসি ভিড়, রেল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেন চালানোর কথাও ভাবছে, হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি শ্রী অভিজিৎ জানা বললেন,
“এই বছর নববর্ষ আর উইকএন্ড একসাথে পড়ায় এমন ভিড় অনেক বছর পর দেখা যাচ্ছে, আমাদের হোটেলের সব ঘর ফুল, অনেকে আগাম বুকিং না করে এসেছেন, ফলে তাঁদের অন্যত্র ঘর খুঁজে নিতে হচ্ছে,” এক হোটেল মালিক জানালেন, “আমরা অতিরিক্ত কর্মচারী রেখেছি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে খাবারের মান – সব কিছুর উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে কারণ এখন পর্যটকরা অনেক বেশি সচেতন ও প্রত্যাশা পূরণের চাপ অনেক বেশি,” পুরাতন দীঘা, যেখানে অপেক্ষাকৃত শান্ত পরিবেশ থাকে, সেখানেও এখন ভিড়, আর নতুন দীঘা তো যেন একটা উৎসব ময়দান হয়ে উঠেছে, সকালের শুরুতেই পর্যটকরা ভিড় করছেন সমুদ্রের ধারে, কেউ জলে পা ভিজিয়ে আনন্দ নিচ্ছেন, কেউ বা সার্ফিং করছেন, ছোট ছোট নৌকায় ঘোরাঘুরি করছেন পরিবারসহ, আবার অনেকে শুধুই ধারে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, বিকেলের দিকে সৈকতের ধারে বসে ফুচকা, ঝালমুড়ি, ঘুড়ি ও বেলুন কেনাকাটা করতে দেখা যাচ্ছে শিশুদের, আর সন্ধ্যার পরে দীঘার রাস্তাগুলো রঙিন আলোয় ঢেকে যাচ্ছে, একেবারে যেন শারদ উৎসবের স্মৃতি ফিরে এসেছে, তবে এই ভিড় সামলাতে প্রশাসনও তৎপর, পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়মিত টহল চলছে, লাইফ গার্ডরাও মোতায়েন রয়েছে সমুদ্রস্নান এলাকায়, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার শ্রী কৌশিক ঘোষ জানিয়েছেন, “আমরা সমস্ত পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি, অতিরিক্ত ফোর্স, ড্রোন নজরদারি, ও সিসিটিভির মাধ্যমে পুরো সৈকত এলাকা কভার করা হচ্ছে, যাতে পর্যটকদের কোনও সমস্যা না হয়,

” আর দীঘার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই ভিড় দেখে খুশি, দীর্ঘদিন পর এমন জমজমাট ভিড় তাঁদের মুখে হাসি ফিরিয়েছে, সমুদ্রসৈকতের ধারে নারকেল জল বিক্রেতা গোপাল দা জানালেন, “গত দুটো বছর লোকসানে চলেছিল ব্যবসা, কিন্তু এই বছরের নববর্ষে যে ভিড়, তাতে মনে হচ্ছে সব ক্ষতি পুষিয়ে যাবে,” তবে এই অতিরিক্ত ভিড়ে পরিবেশের উপরও প্রভাব পড়ছে, সৈকতজুড়ে প্লাস্টিক ও আবর্জনা জমছে, যেটা পর্যটকদের দায়িত্ববোধহীনতার পরিচয় বলে মত পরিবেশবিদদের, দীঘার এক পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মী সুজাতা মাইতি বললেন, “আমরা পর্যটকদের অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন নিজেদের আবর্জনা নিজেই ব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলেন, কারণ দীঘা শুধু ভ্রমণস্থান নয়, এটি আমাদের প্রকৃতির ধন,” অন্যদিকে দীঘার ছোট হোমস্টে বা রিসর্টগুলিও উপকৃত হচ্ছে এই ভিড় থেকে, অনেকেই বড় হোটেলে ঘর না পেয়ে স্থানীয় হোমস্টে-তে থাকছেন,
ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে দীঘার ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এই নববর্ষ আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, দীঘার একটি ছোট দোকানের মালিক সুশান্ত দাস বললেন, “বছরের এই সময়টাতে যদি বিক্রি ভালো হয়, তাহলে পুরো বছর চালানো যায়,” তবে ভবিষ্যতের দিকটি নিয়ে চিন্তিত অনেকে, কারণ যদি পর্যটক সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকে এবং পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা না থাকে, তাহলে দীঘার পরিবেশ এবং পরিকাঠামো বিপন্ন হয়ে পড়বে, সেইজন্য প্রশাসন ও হোটেল অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যে একটি যৌথ কর্মপন্থা তৈরি করতে চাইছে যাতে আগামীদিনে পরিবেশবান্ধব এবং সুশৃঙ্খল পর্যটন ব্যবস্থাপনা তৈরি করা যায়, সব মিলিয়ে এখন দীঘায় নববর্ষের ছুটিকে ঘিরে যেন উৎসবের আমেজ, সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে মানুষের আনন্দ, আর এই ছবি যেন শুধু একটা সমুদ্র শহরের নয়, এটা বাংলার সংস্কৃতি, অতিথিপরায়ণতা ও উৎসবপ্রেমী মনের পরিচয়।