Crocodile spotted on Mousuni Island:নদী আর সমুদ্রের মিলনস্থল সুন্দরবনের উপকূলবর্তী অঞ্চল মানেই প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাভূমি। আর তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মৌসুনি দ্বীপ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই দ্বীপে সম্প্রতি এমন এক ঘটনা ঘটল, যা রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় নামখানার মৌসুনি দ্বীপের বাঘডাঙা এলাকায় লোকালয়ের মধ্যে দেখা মিলল একটি কুমিরের। সাধারণত কুমির নদীতে বা জলাশয়ে ঘুরে বেড়ালেও এভাবে গ্রামে ঢুকে পড়া একেবারেই অস্বাভাবিক। ঘটনাটি জানাজানি হতেই আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন এলাকার মানুষ।স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নাগাদ বাঘডাঙা এলাকার একটি রাস্তার ধারে হঠাৎই কুমিরটিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। প্রথমে কেউ বিষয়টি বুঝতে না পারলেও এক বাসিন্দা কুমিরটিকে স্পষ্ট দেখতে পান এবং সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন, আর তখনই শুরু হয় হইচই। কুমিরটি আশপাশের আওয়াজ শুনে রাস্তা ছেড়ে চলে যায় পাশের একটি পুকুরে।ঘটনার গুরুত্ব বুঝে দ্রুত খবর দেওয়া হয় বনদপ্তরের বকখালি রেঞ্জে। পাশাপাশি ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বনকর্মীরা রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পুকুরে কুমিরটিকে ধরে ফেলেন। এরপরে সেটিকে ভগবতপুর কুমির প্রকল্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কুমিরটির শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। জানা গেছে, এটি প্রায় ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি স্ত্রী কুমির। বনদপ্তর জানিয়েছে, চিকিৎসার পর কুমিরটিকে সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হবে।
সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যেই কুমিরের দেখা মেলে। তবে মৌসুনি দ্বীপের এই অংশে আগে কখনো কুমিরের দেখা পাওয়া যায়নি। এই কারণে স্থানীয় মানুষজন আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, পাশের চিনাই নদীতে কয়েকদিন আগেও কুমিরটিকে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। এরপরেই সেটি নদী ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।এই ঘটনা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামের মানুষজন এখন নদীর ধারে যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত। কারণ কুমির যে আবারও ফিরে আসবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। স্থানীয় বাসিন্দা শিবু মণ্ডল বলেন, “আমাদের এলাকায় আগে কখনো কুমিরের দেখা মেলেনি। এই প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটল। আমরা ভীষণ ভয়ে আছি। ছোট ছোট বাচ্চারা পুকুরে স্নান করতে যায়, গবাদি পশু জল খেতে যায়। যদি আবার কুমির আসে, তাহলে বড় বিপদ হতে পারে।”বনদপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কুমির সাধারণত খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। জলবায়ুর পরিবর্তন এবং নদীর জলস্তরের ওঠানামার কারণে কুমির অনেক সময় নিজের বাসস্থান ছেড়ে নতুন জায়গা খুঁজতে থাকে। এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বনদপ্তরের কর্মীরা নদীর ধারে নজরদারি চালাচ্ছেন।বকখালি রেঞ্জের এক বনকর্মী জানান, “আমরা গ্রামবাসীদের বলেছি, তারা যেন নদীর ধারে বেশি না ঘোরাফেরা করেন। পুকুরের কাছেও বাচ্চাদের যেতে বারণ করা হয়েছে।

এমনকি, গবাদি পশুদেরও নিয়ন্ত্রিতভাবে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কুমির আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি।”বনদপ্তরের আধিকারিকরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রে বদল ঘটার ফলেই এমন ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক বছরে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে নদীর পাড় ভাঙনের ফলে কুমির এবং অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে তারা নতুন বাসস্থান খুঁজতে গিয়ে কখনো কখনো লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের নদীগুলোয় লবণাক্ততা বাড়ছে এবং নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। ফলে কুমির এবং ডলফিনের মতো প্রাণীরা স্বাভাবিকভাবেই সংকটে পড়ছে।মৌসুনি দ্বীপ একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। অনেকেই এখানকার সমুদ্রসৈকত এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করেন। তবে এই ঘটনার পর পর্যটকদের জন্যও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পর্যটকদের বলা হয়েছে, নদীর ধারে বেশি কাছাকাছি না যেতে এবং কোনো অজানা প্রাণী দেখলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে।বনদপ্তর ইতিমধ্যেই মৌসুনি দ্বীপ এবং আশপাশের এলাকায় কুমিরের চলাফেরা নিয়ে বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে। গ্রামে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে, যারা গ্রামবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবে। এছাড়াও, কুমিরের বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।