Crocodile scares stone idol : পাথরপ্রতিমা: দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ডাঙ্গায় বাঘ, জলে কুমিরের আতঙ্ক যেন মানুষের নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে। বাঘের ভয় তো ছিলই, এবার কুমিরের ভয়ও চেপে বসেছে পাথরপ্রতিমার মানুষদের মনে। গতকাল রাতের এক ভয়াবহ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। পাথরপ্রতিমার দক্ষিণ শিবগঞ্জের বাসিন্দা মাধব গুছাই প্রতিদিনের মতো বাড়ির পুকুরে পা ধুতে গিয়েছিলেন। রাত তখন প্রায় নটা। আচমকাই পুকুরের জলে অস্বাভাবিক নড়াচড়া টের পান তিনি। প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো বড় কোনও মাছ। কিন্তু আলো ফেলে দেখতেই আঁতকে ওঠেন মাধব। জলেই ছিল বিশাল এক কুমির। আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠেন তিনি। খবর যায় বনদপ্তরে।

খবর পেয়ে মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বনদপ্তরের একটি বিশেষ দল। পুকুরে জাল ফেলে শুরু হয় কুমির ধরার অভিযান। কিছুক্ষণের মধ্যেই কুমিরটিকে আটক করতে সক্ষম হন বনকর্মীরা। বনদপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কুমিরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ ফুট। বড় কুমির না হওয়ায় অতটা বিপজ্জনক ছিল না, তাই সহজেই কুমিরটিকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। কুমিরটিকে আপাতত বনদপ্তরের অফিসে রাখা হয়েছে। আজ পশু চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পুনরায় নদীতে ছেড়ে দেয়া হবে।
এলাকার মানুষের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। মাধব গুছাই জানিয়েছেন, “এতোদিন শুনতাম সুন্দরবনের কুমির মাঝেমধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। কিন্তু নিজের চোখে দেখব ভাবিনি। যদি ওই মুহূর্তে আমি পুকুরে নামতাম, কী হতে পারত ভাবতেই ভয় লাগছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা বাণী সরকার বলেন, “কুমির তো আগে কখনও দেখিনি। এখন থেকে ছোট বাচ্চাদের একদম পুকুরপাড়ে যেতে দেব না। জানি না, কখন আবার এভাবে কুমির ঢুকে পড়বে।”
বনদপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনের জঙ্গল ও নদী এলাকা লাগোয়া গ্রামগুলিতে কুমিরের আনাগোনা নতুন নয়। বর্ষার সময় নদী ফুলে ওঠে, আর তখনই কুমিরগুলি লোকালয়ে প্রবেশ করে। তবে বড় আকারের কুমির না হওয়ায় আপাতত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এদিকে, অপারেশন সিঁদুরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন স্থানীয়রা। অপারেশন সিঁদুরের সময় সুন্দরবনের জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়ানো কুমিরগুলিকে ধরার জন্য বনদপ্তর বিশেষ টিম মোতায়েন করেছিল। সেই অভিযানে একাধিক কুমির ধরা পড়েছিল। এবারও বনদপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কুমির যাতে পুনরায় এলাকায় না আসে, তার জন্য নজরদারি বাড়ানো হবে।
পাথরপ্রতিমার এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বনদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পুকুর বা জলাশয়ের কাছে অযথা ভিড় না করতে। কোনও অস্বাভাবিক প্রাণীর উপস্থিতি টের পেলে অবিলম্বে বনদপ্তরকে খবর দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।