Cool number of social natives in coal mines:আসানসোলের কুলটির বিসিসিএল’এর দামাগড়িয়া খোলামুখ কয়লা খনি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। মূল অভিযোগ, কয়লা খনন কাজে স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়োগ না দিয়ে বাইরে থেকে শ্রমিক এনে কাজ করাচ্ছে নতুন ঠিকা সংস্থা। এই কারণে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা খনির কাজ বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, যা সামগ্রিক ভাবে অঞ্চলের পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে।
দামাগড়িয়া খোলামুখ কয়লা খনিটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ অবস্থায় ছিল, যার ফলে এলাকার কর্মহীন মানুষেরা আবার কাজে ফিরে যাওয়ার আশা নিয়ে দিন গুনছিল। নতুন একটি ঠিকা সংস্থা কয়লা খনন কাজ শুরু করলেও, সেই আশা পূর্ণ হয়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, আগের সংস্থা তাদের মধ্যে অনেককে কাজে নিয়েছিল, যা থেকে তাদের পরিবারের খরচ চালানোর অর্থ জুটত। তবে নতুন সংস্থা স্থানীয় শ্রমিকদের না নিয়োগ করে বহিরাগত শ্রমিকদের কাজে নিয়ে আসায় স্থানীয়দের মনে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কুলটির স্থানীয় বাসিন্দা নরেশ মণ্ডল বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম নতুন খনন কাজে আমাদের কাজের সুযোগ হবে। কিন্তু নতুন সংস্থা বাইরে থেকে শ্রমিক এনে আমাদের বঞ্চিত করছে, যা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেবো না।”

খনির কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বিসিসিএল ও নতুন কয়লা উত্তোলন সংস্থার পক্ষেও ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দামাগড়িয়া কয়লা খনির প্রজেক্ট অফিসার দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, “দামাগড়িয়া খোলামুখ খনিটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এবং নতুন করে শুরু হওয়ায় আপাতত সাত জন স্থানীয়কে কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে পুরোপুরি কাজ শুরু হলে আরও অনেককে কাজ দেওয়ার সুযোগ হবে। কিন্তু বিক্ষোভ ও খনির কাজ বন্ধ থাকায় বিসিসিএল ও কয়লা উত্তোলন সংস্থা উভয়েই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।”
এই ধরনের সমস্যাগুলি আসানসোল ও কুলটি অঞ্চলে নতুন নয়। কয়লা খনিতে কাজ পাওয়ার আশায় বহু বছর ধরেই স্থানীয়রা নিজেদেরকে এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। আশেপাশের বহু পরিবারই মূলত কয়লা খনি থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়েই জীবন যাপন করে। খনিতে কাজ বন্ধ থাকা মানেই তাদের জীবিকা সংকটে পড়া। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, কেবলমাত্র কয়লা খনি অঞ্চলে থাকার জন্য তাদের স্বাভাবিক অধিকার রয়েছে এই কর্মসংস্থান পাওয়ার, এবং এটি কোনো সুবিধা নয়, বরং তাদের অধিকার হিসেবেই দাবি করেন তারা।
বিসিসিএল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে স্থায়ী সমাধানের কথা বললেও, বাস্তবে এই ধরনের সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান পায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় বিক্ষোভকারী এবং প্রশাসনের মধ্যে বারবার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সাময়িক ভাবে মেটানো হয়, কিন্তু বিক্ষোভের মূল কারণের ওপর কোনও স্থায়ী সমাধান আসে না। যেমন বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয়রা শুধুমাত্র নিজের কাজ ফেরতের দাবি করছে এবং এর পিছনে তাদের অর্থনৈতিক সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যদি নতুন সংস্থা স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে নিয়োগ না দেয়, তবে কুলটির স্থানীয় জনগোষ্ঠী বড়সড় অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হতে পারে।
এর পাশাপাশি, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। অনেক নেতা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয়দের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সমর্থন করে চলেছেন। তাদের বক্তব্য, “বাইরে থেকে শ্রমিক আনা মানেই স্থানীয়দের অধিকার কেড়ে নেওয়া। এই ধরনের অবিচারের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় স্থানীয়দের পাশে রয়েছি এবং থাকব।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কর্মসংস্থানসংক্রান্ত সমস্যাগুলি সাম্প্রতিক সময়ে কয়লা খনির এলাকায় প্রায়শই দেখা যাচ্ছে। এটি যদি দ্রুত সমাধান করা না যায়, তবে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সামাজিক সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে, যা শুধুমাত্র খনির কাজ নয় বরং সামগ্রিক ভাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবেশকে প্রভাবিত করবে।

এই বিষয়টি নিয়ে জনমত বিভক্ত হলেও, সবার মনেই একটি কথা একেবারে পরিষ্কার যে, স্থানীয় জনগণই এলাকার সবথেকে বড় সম্পদ এবং তাদের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। খনি সংস্থার উচিত স্থানীয় জনগণের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়ে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করা। বর্তমানে খনির কাজ বন্ধ থাকার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ আকারে বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই সংকট কাটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত স্থানীয়দের নিয়ে খনি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে একটি স্থায়ী সমাধানের পথে এগোনো।
বিক্ষোভকারীদের দাবির গুরুত্বকে মাথায় রেখে প্রয়োজন স্থানীয় কাজের সুযোগ বৃদ্ধি এবং খনির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একটি স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। স্থানীয় জনশক্তির কাজে লাগানোর মাধ্যমে কয়লা শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব এবং এর ফলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশ নিশ্চিত হবে।