Cooking prices increased by 50 rs:আজকের দিনে সাধারণ মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় খবর হয়ে উঠেছে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়া। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন — একধাক্কায় ৫০ টাকা বেড়ে গেল এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম, আর সেই নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে। যার ফলে এখন কলকাতায় একটি ১৪.২ কেজির রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম দাঁড়াচ্ছে ৮৭৯ টাকা। আগে ছিল ৮২৯ টাকা। এই খবরে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে, কারণ এমনিতেই বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আগুন, তার ওপর আবার এই ধাক্কা। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় যাঁরা সিলিন্ডার পেতেন ৫০০ টাকায়, তাঁদের জন্যও এবার সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ টাকা।

স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে, শুধুমাত্র সাধারণ নয়, এই প্রকল্পের উপভোক্তারাও এই মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়েছেন। এই ঘোষণার পরেই সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানান, “বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামার জন্য এবং অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “এই দাম আগামী ২-৩ সপ্তাহ অন্তর পুনর্বিবেচনা করা হবে, তাই সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।” অর্থাৎ, এই ৫০ টাকা বৃদ্ধি এখনও শেষ কথা নয় — আরও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এই বিষয়ে কথা বললেন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের গৃহবধূ মালবিকা ঘোষ। তিনি বলেন, “সকালে বাজার করতে গিয়ে শুনলাম গ্যাসের দাম ৫০ টাকা বেড়েছে। বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমাদের ঘরে মাসে দুটি সিলিন্ডার লাগে, মানে এক মাসে ১০০ টাকা বেশি খরচ পড়বে শুধু গ্যাসে। চাল-ডাল-তেল তো আগেই বাড়ছে, এখন আবার গ্যাস! সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।” ঠিক এই একই কথা বললেন হাওড়ার একটি ছোট রেস্টুরেন্টের মালিক মনোজ দে। তিনি জানালেন, “আমাদের দিনে একটা করে সিলিন্ডার লাগে। মাসে ৩০টা। এখন যদি প্রতি সিলিন্ডারে ৫০ টাকা করে বাড়ে, তাহলে মাসে অতিরিক্ত ১৫০০ টাকা খরচ। এই খরচ আমি কোথা থেকে দেব? খদ্দেরকে কি খাবারের দাম বাড়িয়ে বুঝিয়ে বলব?” এইভাবে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ী — সকলেই বিপদে পড়েছেন। এদিকে শুধু রান্নার গ্যাস নয়, সোমবার থেকে লিটার প্রতি ২ টাকা করে বেড়েছে পেট্রল ও ডিজেলের দামও। অর্থমন্ত্রকের রাজস্ব বিভাগের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ফলে এই বৃদ্ধি হয়েছে। শহর কলকাতায় এখন পেট্রলের দাম দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকার কাছাকাছি, আর ডিজেলও পেরিয়ে গেছে ১০০ টাকার গণ্ডি। স্বাভাবিকভাবেই এই জ্বালানি মূল্যের বৃদ্ধি গণপরিবহন, পণ্য পরিবহন, এমনকি কৃষিকাজেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে রাজ্যের এক পরিবহন চালক বললেন, “আমার একটা ছোট পিক-আপ ভ্যান আছে। রোজ শহরের মধ্যে মাল ডেলিভারি দিই। এখন ডিজেলের খরচই দিন দিন বাড়ছে। আগেও রোজে ৭০০ টাকার ডিজেল লাগত, এখন সেটা যাবে ৮০০-৮৫০ টাকায়। মালিকরা ভাড়া বাড়াবে না, আবার খরচ বেড়েই চলেছে। সংসার চালানো যাচ্ছে না।” একদিকে মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে মানুষের আয় একই রকম থাকায় সমাজের একটা বড় অংশ চাপে পড়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি, সরকার কিছুদিন আগেই বাজেটে জ্বালানির উপর ভর্তুকি কমিয়েছে, ফলে দাম বাড়া একরকম অনিবার্য ছিল। তবে আশঙ্কার কথা, এর ফলে বাজারে সব জিনিসের দাম ধীরে ধীরে আরও বাড়বে। কারণ, পরিবহন খরচ বাড়লে কৃষিপণ্য, মুদি সামগ্রী, এমনকি জামাকাপড়ের দামও বাড়ে।
এই বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ঘোষ বললেন, “রান্নার গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়া শুধু একটি বিষয় নয়, এটি ডমিনো ইফেক্ট তৈরি করে। রান্নার খরচ বাড়বে, রেস্তোরাঁয় খাওয়ার দাম বাড়বে, এবং বাজারে জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়বে। এমনকি, পরোক্ষভাবে এই মূল্যবৃদ্ধি দেশের মুদ্রাস্ফীতির হারকেও প্রভাবিত করতে পারে।” গত বছর ২০২৪ সালের মার্চে নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রান্নার গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় ১০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর প্রায় ১৩ মাস ধরে দাম স্থিতিশীল ছিল। তাই অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো গ্যাসের দাম নিয়ে আর উদ্বেগ নেই। কিন্তু এপ্রিলের শুরুতেই সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্ত আবার মানুষকে চমকে দিয়েছে।

এই বিষয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও সরব হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “এই সরকার ভোটের আগে সবকিছু সস্তা করে, আর ভোট মিটতেই দাম বাড়াতে থাকে। উজ্জ্বলা যোজনার নাম করে গরিব মানুষের সঙ্গে ছেলেখেলা চলছে। গ্যাসের দাম এত বাড়লে গৃহবধূরা কীভাবে চালাবেন সংসার?” অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে, সেই জন্যই কিছুটা চাপ পড়ছে। তবে কেন্দ্র সরকার নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং মানুষের স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই পরিস্থিতিতে এখন মানুষের একটাই প্রশ্ন — সামনে কি আরও দাম বাড়বে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি যদি আন্তর্জাতিক বাজারে না বদলায়, তাহলে আগামী দিনে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে এবং সরকারকেও সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একটা বিষয় খুব স্পষ্ট — রান্নার গ্যাস, পেট্রল এবং ডিজেলের এই দামবৃদ্ধি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলবে। যারা প্রতিদিনের বাজার খরচ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, তাদের জীবনে এটি যেন আরেকটা বোঝা। এখন দেখার বিষয়, আগামী ২-৩ সপ্তাহে সরকার আদৌ কোনও মূল্য সংশোধনের পথে যায় কিনা। না হলে, এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে এক নতুন চাপের নাম হয়ে উঠবে।