Sunday, June 1, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসখড়গপুরে রেলের পাঁচিল ভাঙা ঘিরে ধুন্ধুমার

খড়গপুরে রেলের পাঁচিল ভাঙা ঘিরে ধুন্ধুমার

Controversy over railway wall demolition in Kharagpur:-খড়গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের রেল শহর। দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল উত্তেজনা—রেলের পাঁচিল ভাঙাকে কেন্দ্র করে। একপাশে রেল কর্তৃপক্ষ, আরেকপাশে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী আর সাধারণ মানুষ। আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে পুলিশের লাঠিচার্জ, আটক, বচসা, হুমকি, হুঁশিয়ারি—সব মিলিয়ে রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত খড়গপুর শহরের রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় যা ঘটেছে, তা যেন সিনেমার মতো টানটান উত্তেজনায় ভরা, আবার বাস্তবের কষ্টের গল্পও বটে।ঘটনার শুরু কয়েকদিন আগেই। অভিযোগ, রেলের জায়গায় একটি পাঁচিল তৈরি করে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই রাস্তা খড়গপুর পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে, আর তা রোজ হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের রাস্তা। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বৃহস্পতিবার সকালে খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোহন দাস, সঙ্গে থাকেন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁরা সরাসরি দাবি তোলেন—রেল কর্তৃপক্ষকে দুই দিনের মধ্যে এই পাঁচিল ভেঙে দিতে হবে। আর যদি না ভাঙে, তাহলে তাঁরা নিজেরাই গিয়ে পাঁচিল ভেঙে ফেলবেন। তাঁদের সুর ছিল চরম হুঁশিয়ারিপূর্ণ, মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সেই কথা—“রাস্তা বন্ধ করলে আর সহ্য করা হবে না, লড়াই করেই দাবি আদায় করব।”

Screenshot202025 06 0120163958

দাবি-দাওয়া নিয়ে যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ প্রতিবাদে গলা ফাটাচ্ছেন, ঠিক তখনই সেখানে হাজির হয় আরপিএফের (রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স) একদল জওয়ান। পরিস্থিতি সামলাতে তাঁরা লাঠি উঁচিয়ে বিক্ষোভকারীদের দিকে তেড়ে যান। শুরু হয় ধস্তাধস্তি, উত্তেজনা চরমে ওঠে। স্থানীয় মহিলারা তুমুল স্লোগান দিতে থাকেন—“রাস্তা আমাদের অধিকার, এটা বন্ধ হতে দেব না!” মহিলাদের একাংশ বলেন, “আমরা সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যেতে পারছি না, বাজারে যেতে পারছি না, হাসপাতালে যেতে পারছি না। এভাবে রেলের জায়গায় পাঁচিল দিয়ে আমাদের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া মানে আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া।” তাঁরা আরও হুঁশিয়ারি দেন, “রেল যদি দুই দিনের মধ্যে পাঁচিল না ভাঙে, তাহলে আমরা নিজেরাই ভেঙে ফেলব।”এই বিক্ষোভে একজোট হয়ে যান তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপির কিছু নেতা-কর্মীও। বিজেপির পার্থসারথী সেনগুপ্ত বলেন, “মানুষের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া মানে গলা টিপে ধরা। আমরা এর বিরুদ্ধে থাকব। রাজনীতি নয়, মানুষের স্বার্থ রক্ষাই আসল।” অন্যদিকে তৃণমূলের রোহন দাস বলেন, “রেল যদি মানুষের দুর্ভোগ বোঝে না, তাহলে আমাদের হাতে বাধ্য হয়ে আন্দোলনের রাস্তা বেছে নিতে হবে। মানুষকে বিপদে ফেলে দেওয়ার অধিকার রেলের নেই।”

তবে রেলের পক্ষ থেকে ভিন্ন সুর। রেলের এক আধিকারিক অরুণাভ মুখার্জি বলেন, “এই জায়গাটি রেলের সম্পত্তি। এখানে পাঁচিল দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার জন্য, যাতে অবৈধ প্রবেশ ও দখলদারি রোখা যায়। মানুষের জন্য কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে, কিন্তু রেলের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম দায়িত্ব।” তিনি আরও বলেন, “আমরা বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।”ঘটনাস্থলে পৌঁছনো আরপিএফের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করছি। যাঁরা আইন ভাঙছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু এর পরেই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পুলিশের লাঠিচার্জের জেরে কয়েকজন আহত হন, অন্তত পাঁচজনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কিছু মহিলাও। আটক হওয়া এক মহিলা বীণা মাইতি বলেন, “আমরা নিজের হকের জন্য লড়াই করছি। গায়ে হাত তুললে আমরা চুপ থাকব না।”ঘটনাস্থলে থাকা সাধারণ মানুষদের বক্তব্যও স্পষ্ট—“একদিকে রেল নিজেদের জমি দখলে রাখছে, অন্যদিকে মানুষ বছরের পর বছর ধরে ওই রাস্তা ব্যবহার করছে। হঠাৎ করে পাঁচিল তুলে রাস্তা বন্ধ করে দিলে আমরা যাব কোথায়?” ব্যবসায়ী সুশান্ত দাস বললেন, “রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দোকানে মাল আসছে না, ব্যবসা বন্ধ। এত লোকের জীবিকা বন্ধ হয়ে যাবে, কেউ কি ভাবছে?”

Screenshot202025 06 0120163905

এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব রেলকে দোষারোপ করছে, বিজেপি মানুষের পাশে থাকার কথা বলছে, আর রেল নিজেদের নিরাপত্তা এবং আইনি অধিকার নিয়ে অনড়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনার পিছনে বড় সমস্যা হল রেলের জমি নিয়ে দখলদারি ও জনস্বার্থের মধ্যে সংঘর্ষ। একদিকে রেলের সুরক্ষা ও সম্পত্তির দাবি, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অসুবিধা। এই টানাপোড়েনের মধ‍্যে প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।ভবিষ্যতে কী হতে পারে? বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দুই দিনের মধ্যে কোনো সমাধান না হয়, তাহলে আরও বড় বিক্ষোভ হতে পারে, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। প্রশাসন যদি মধ্যস্থতায় না আসে, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে আরও বড় আন্দোলনে নামতে পারে। অন্যদিকে, রেলের পক্ষ থেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হলে গ্রেফতার, লাঠিচার্জ, এমনকি আইনি পদক্ষেপের আশঙ্কাও রয়েছে। এদিকে সাধারণ মানুষ চায়, “রাস্তা খুলুক, শান্তি ফিরুক, আর রেল ও প্রশাসন মিলে সমাধান খুঁজুক।”সবশেষে বলা যায়, খড়গপুরের এই পাঁচিল বিতর্ক কেবল একটি প্রাচীর নিয়ে বিবাদ নয়, এটি একপ্রকার মানুষের মৌলিক অধিকার বনাম প্রশাসনিক নিয়মের সংঘর্ষ। আর সেই সংঘর্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে খড়গপুর শহরের হাজার হাজার মানুষ, যাঁরা চান, রাস্তা খুলুক, স্বস্তি ফিরুক, আর আরপিএফের লাঠির মুখে নয়, আলোচনার টেবিলে সমাধান হোক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments